বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মনোনয়ন দাখিলে উৎসব

গোলাম রাব্বানী ও শফিকুল ইসলাম সোহাগ

মনোনয়ন দাখিলে উৎসব

জমে উঠেছে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে রাজধানীজুড়ে। গতকাল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দুই সিটির মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দুই সিটিতে এ তিন পদে ১ হাজার ৩৯ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে উত্তরে মেয়র পদে ৭, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৭৪ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৯ আর দক্ষিণে মেয়র পদে ৭, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৪৬০ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০২ জন মনোনয়নপত্র জমা দেন। তবে তিন পদে ২ হাজার ২৬০টি ফরম বিক্রি হয়েছিল। তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ২ জানুয়ারি, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ৯ জানুয়ারি এবং প্রতীক বরাদ্দ হবে ১০ জানুয়ারি। আর ভোট গ্রহণ হবে ৩০ জানুয়ারি। এদিকে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

এদিকে গতকালও দুই রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের হিড়িক দেখা গেছে। নির্বাচন কমিশনও এ বিষয়ে নির্বিকার ছিল। আওয়ামী লীগ-বিএনপির চার মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে প্রার্থীরা বলেছেন, তাঁরা কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম বলেন, ‘অনেক সাংবাদিক ছিলেন। সবাইকে চেনা যায় না। তবে আমি আওয়ামী লীগ-বিএনপি প্রার্থীকে জিজ্ঞাসা করেছি তাঁদের সঙ্গে কতজন আছেন। তাঁরা বলেছেন পাঁচজন করেই নিয়ে এসেছেন। দুই প্রার্থীর কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি।’ এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং অফিসার মো. আবদুল বাতেন বলেছেন, ‘একই দিন মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার তারিখ হওয়ায় প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে এলে লোকসমাগম বেশি দেখা গেছে। মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’

দুই সিটিতে মোট প্রার্থী ১০৩৯ জন : উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে ৭, ৫৪ সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩৭৪ ও ১৮ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উত্তর সিটিতে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের আতিকুল ইসলাম, বিএনপির তাবিথ আউয়াল, জাতীয় পার্টির জি এম কামরুল ইসলাম, সিপিবির ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল, পিডিপির শাহীন খান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ফজলে বারী মাসউদ ও এনপিপির আনিসুর রহমান দেওয়ান। এ সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে মেয়র পদে ১০, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৮২৮ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৭৭ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা শেষে ঢাকা উত্তর সিটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘এরশাদের সময় ঢাকায় যে উন্নতি হয়েছে, তারপর খুব একটা নতুন কিছু হয়নি। নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রত্যাশা, একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন, যাতে লোকজন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন।’ সিপিবির ডা. আহাম্মদ সাজেদুল হক বলেন, ‘ক্ষমতাসীনরা যাতে জাতীয় নির্বাচনের মতো ভোট ডাকাতি করতে না পারে, সেদিকে সবাইকে নজর রাখতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’ এদিকে দক্ষিণ সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে ৭, ৭৫ সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৪৬০ ও ২৫ সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১০২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। দক্ষিণে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস, বিএনপির ইশরাক হোসেন, জাতীয় পার্টির হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আবদুর রহমান, এনপিপির বাহরানে সুলতান বাহার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আকতার উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লা ও গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন। এ সিটিতে নির্বাচনে অংশ নিতে মেয়র পদে ৮, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১ হাজার ৪৭ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৯০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলেন।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর জাতীয় পার্টির দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘বিগত সময়ে আমি যে নির্বাচন করেছি, তখন মানুষের চোখেমুখে যে উৎসাহ দেখেছি, তাতে আশা করেছিলাম জয়লাভ করব। কিন্তু সকাল ৯টার মধ্যে নির্বাচন হয়ে যায়। এবার যদি ভোটাররা কেন্দ্রে যেতে পারেন, তবে আমি জয়লাভ করব।’ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী আবদুর রহমান বলেন, ‘আমরা সুষ্ঠু ভোট চাই। ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট হবে কিনা আমাদের সন্দেহ আছে।’

দুই সিটিতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করার নির্দেশ ইসির : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নর্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুত করার নির্দেশনা দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর স্বাক্ষরিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিনকে পাঠানো এক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ তারিখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ২২ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কয়েকটি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। সিদ্ধান্তগুলো হলো- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাবিধান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের লক্ষ্যে অগ্রিম বাজেট প্রণয়ন, অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ ও নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রস্তুতকরণ এবং নির্বাচনী এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। নির্বাচন কমিশনের গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর