বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

প্রতিবেশী দেশে রপ্তানিতে নজর

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিবেশী দেশে রপ্তানিতে নজর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

রপ্তানি আয় বাড়াতে পণ্য বৈচিত্র্যে জোর দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোতে নতুন নতুন রপ্তানিতে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রপ্তানির ক্ষেত্রে আমি বলব, একটা-দুটা পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা নয়, আরও অধিক পরিমাণে পণ্য যেন আমরা উৎপাদন করতে পারি এবং তা রপ্তানি করতে পারি। আবার দেশের বাজারে বা প্রতিবেশী দেশগুলোতেও যাতে সেই পণ্যটার প্রয়োজন হয়- সেদিকে আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘এখন ডিপ্লোমেসি হয়ে গেছে ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি। এখন আর শুধু পলিটিক্যাল দিক দেখলে হবে না। কাজেই ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ করা যায় কীভাবে, নতুন নতুন বাজার কীভাবে খুঁজে পাওয়া যায় এবং নতুন নতুন পণ্য আমরা যাতে রপ্তানি করতে পারি- সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি। আমরা যত বেশি ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন, ব্যবহার এবং রপ্তানি করতে পারব- আমাদের অর্থনীতিতে তা তত বেশি অবদান রাখবে। আমি মনে করি আইসিটি সেক্টরটাই আমাদের সব থেকে বড় একটা সেক্টর হবে ভবিষ্যতে। এই পণ্য রপ্তানি করে আমরা বিশাল অঙ্কের অর্থ উপার্জন করতে সক্ষম হব।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত কূটনৈতিক ও বিদেশি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উইন-উইন পরিস্থিতির জন্য ব্যবসার সুবিধার্থে বিনিয়োগ ও সোর্সিংয়ের জন্য বাংলাদেশকে যেন সবাই বেছে নেন- সেটাই আমার আহ্বান থাকবে।’ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম ও বাণিজ্য সচিব মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম দিনের দৃশ্যপট : রাজধানীর শেরেবাংলা নগর প্রাঙ্গণে গতকাল থেকে শুরু হওয়া এ মেলা চলবে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। দেশি ও বিদেশি সব ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ থাকবে উন্মুক্ত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) আয়োজিত এবারের মেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, ব্রুনাইসহ ২১টি দেশের বিভিন্ন কোম্পানি অংশ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। বাণিজ্য মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, এখনো পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ স্টলের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি। স্টলগুলোতে পণ্যের পসরাও সেভাবে সাজানো হয়নি। প্যাভিলিয়নগুলোর আংশিক চালু হয়েছে। মেলার প্রবেশপথের কাজও শেষ হয়নি। তবে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের মধ্যে অনেকে স্বাচ্ছন্দ্যে কেনাকাটা করতে প্রথম দিনেই চলে আসেন মেলায়। তাদেরই একজন শ্যামলীর বাসিন্দা গৃহিণী সাদিয়া বিনতে মোশারফ। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সবে মেলা শুরু হয়েছে। দোকান-পাটও সেভাবে খোলেনি, জমে ওঠেনি মেলা। তাই মাঠ ফাঁকা থাকায় কেনাকাটা করতে সুবিধা হচ্ছে। প্রতি বছরই আমি মেলার শুরুর দিকে আসি। এতে ভালো পণ্য দেখে ও বাছাই করে কেনা যায়।’ ঘুরতে আসা ইন্দিরা রোডের বাসিন্দা এনজিও কর্মী রহমান বলেন, ‘এখন টাকা নেই হাতে। তাও দেখতে এলাম। বেতন পেলেই পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে আসব কেনাকাটা করতে।’ মেলার প্রবেশ গেট ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মীর ব্রাদার্সের কর্ণধার মীর শহিদুল আলম বলেন, ‘উদ্বোধনী দিন হিসেবে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকলেও দু-চার দিনের মধ্যে মেলা জমে উঠবে।’ জানা গেছে, এবার মেলায় প্রবেশ টিকিটের দাম বাড়িয়ে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেলা মাঠের সামনে প্রায় ৩২ একর জমিতে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইপিবি জানিয়েছে, এবারের বাণিজ্য মেলায় ৪৮৩টি স্টল ও প্যাভিলিয়নে দেশ ও বিদেশের পণ্য বেচাকেনা হবে। এসবের মধ্যে ১১২টি প্যাভিলিয়ন, ১২৮টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ২৪৩টি স্টল আছে।

সর্বশেষ খবর