বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

অপরিশোধিত তেলের দামের প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক বাজারে এক বছরে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে ৩৭ শতাংশ। বৈশি^ক বাজারে বিদায়ী ২০১৯ সালের প্রথম দিন ৫৪ মার্কিন ডলারে শুরু হয়ে বছরের শেষ কর্মদিবসে ৬৯ মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত জ্বালানি তেল। এর ফলে বেড়েছে সব ধরনের  পণ্য পরিবহন খরচ। সঙ্গে বেড়েছে উৎপাদন খরচও। যার প্রভাবে বাংলাদেশের খুুচরা ও পাইকারি বাজারে চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, আটা, ময়দা, গম, ভুট্টাসহ প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। তবে খুচরা বাজারে পাইকারি বাজারের তুলনায় দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বেশি। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালের দাম সর্বনিম্ন ৬ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ টাকা পর্যন্ত। সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে অন্তত ৯ থেকে ১৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। খোলা তেলের দামও বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তা শ্রেণি। ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন অস্বস্তিতে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে খোলা পামওয়েলের দাম। এ পণ্যটির দাম এক বছরের ব্যবধানে প্রতি লিটারে ২৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। দেশীয় এবং আমদানি করা সব ধরনের চিনির দামও বেড়েছে ৭ টাকা থেকে ২৩ টাকা পর্যন্ত। সব ধরনের মসলা, হলুদ ও রসুনের দামও বেড়েছে। দেশে উৎপাদিত ও আমদানি করা সব রকম ডালের দামও বেড়েছে ৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। সব ধরনের গুঁড়া দুধের (দেশীয়-আমদানি করা) দাম বেড়েছে প্রতি কেজিতে ৫ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। অবশ্য পিয়াজের দাম বেড়েছে আরও আচমকাভাবে। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ২৫ টাকা কেজির পিয়াজ ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। এখনো বাজারে এক কেজি পিয়াজের দাম ১০০ টাকার বেশি। এর ফলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। বিশ্ববাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা হিসেবে পরিচিত ইনডেক্সমুন্ডির ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, তিন মাস ধরে জ্বালানি তেলে বাজার খুবই দ্রুত ওঠানামা করছে। গত ২০১৮ সালের তুলনায় সদ্য বিদায়ী ২০১৯ সালের বিদায়ক্ষণে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সারা বছর এই তেলের দাম ৫৪ থেকে ৭৫ মার্কিন ডলারে ওঠানামা করেছে। প্রতি ব্যারেল ৫৪ মার্কিন ডলার দিয়ে বছর শুরু করে বছরের শেষ কর্মদিবসে বিক্রি হয়েছে ৭০ মার্কিন ডলারে। গতকাল নতুন বছরের প্রথম দিনে প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয়েছে ৬৯ মার্কিন ডলারে, যা এক বছর আগেও ছিল ৫৪ ডলার। বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্রেক্সিট জটিলতার কারণে বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এক ধরনের টালমাটাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যার বৈশি^ক অর্থনীতিতে অস্থিরতার পাশাপাশি এক ধরনের মন্দাভাব সৃষ্টি করেছে। এতে সারা বিশে^র বাজারে ভোগ্য পণ্যের দামও বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের বাজারও যার প্রভাবমুক্ত নয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ব রাজনীতিতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। যার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। এর প্রভাব আমাদের দেশের অর্থনীতিতেও পড়াটা স্বাভাবিক। এ ছাড়া আমাদের বাজার ব্যবস্থায় তেমন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এখানে মুনাফাখোররা অত্যন্ত সক্রিয়। ফলে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ খাতে তদারকি বাড়াতে হবে। অবশ্য আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব ঠেকাতে হলে বিশ্ব রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতে হবে। তিনি মনে করেন, বর্তমান বৈশি^ক পরিস্থিতিতে তা বেশ কঠিন।

সর্বশেষ খবর