বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সবুজ নগরীর বাতাসেও বিষ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

পদ্মার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছে সবুজে ঘেরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাজশাহী নগরী। মানবদেহের জন্য বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ২০১৬ সালে বিশ্বে পরিচিতি অর্জন করেছে রাজশাহী শহর। নগরবাসী দুর্গন্ধমুক্ত নির্মল বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পারতেন। কিন্তু রাজশাহীর সেই বাতাসেও এখন বিষ। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আওতায় পরিচালিত ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট (কেস) প্রকল্পের গবেষণায় রাজশাহীর বাতাসকে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলা হয়েছে। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী রাজশাহীর পয়েন্ট ২২২। গত ২৩ ডিসেম্বর এই তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

তবে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, মূলত রাজশাহীতে যে পরিমাণ উন্নয়ন কাজ চলছে, তাতে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়েছে। উন্নয়ন কাজের ফলে বালুকণা বাতাসে মিশে অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে। এ ছাড়া জনসংখ্যা বাড়ার ফলেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। অন্য শহরগুলোও প্রতিযোগিতায় আছে। এ কারণেই তারা আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি।

রাজশাহীকে নানা নামে ডাকা হয়, সবুজ নগরী, শিক্ষা নগরী, শান্তির নগরী, রেশম নগরী বা সিল্ক সিটি। রাজশাহীর পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত রিনা পি সোয়েমারনো তার রাজশাহীতে প্রথম সফরে এসে বলেন, এখানকার চমৎকার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে আমি মুগ্ধ। এখানকার মানুষদের ভালো লেগেছে। রাজশাহী একটি পূর্ণাঙ্গ শহর। স্বাস্থ্যকর ও পরিচ্ছন্ন শহর হিসেবে দেশের সব শহরের চেয়ে এগিয়েছিল রাজশাহী। নগর উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও জিরো সয়েল প্রকল্প গ্রহণের কারণেই এ সাফল্য বলে জানিয়েছিল রাজশাহী সিটি করপোরেশন। ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর কণা দ্রুত কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বিশ্বে এগিয়ে আছে রাজশাহী শহর। জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ ধারাবাহিকতা এখনো আছে জানিয়ে রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, জিরো সয়েল প্রকল্পের কারণে এ মান অর্জন সম্ভব হয়েছিল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত প্রভাব ঠেকাতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে রাসিক। ফলে বাতাসে ভাসমান মানবদেহের জন্য ক্ষুদ্র ধূলিকণামুক্ত হয়েছিল নগরী। কিন্তু আগের সেই অবস্থান ধরে রাখা যায়নি। তিনি জানান, আগের অবস্থায় ফিরে আসতে নগরীর প্রধান সড়ক বিভাজক ও সড়ক দ্বীপে ২০ ফুট অন্তর গাছ লাগানো হয়েছে। নিচে লাগানো হয়েছে সবুজ হেজ। এরপর কাঠ ও বাঁশের আদলে তৈরি করা হয়েছে কনক্রিটের বেড়া। সব মিলিয়ে এখন দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে পুরো নগরী। নগরীর সবুজ ধরে রাখতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে রাসিক। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, বাংলাদেশের সব শহরগুলোর মধ্যে যদি পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রতিযোগিতা হয়, সেই প্রতিযোগিতায় রাজশাহী হবে এক নম্বর শহর। আমরা এতেই সন্তুষ্ট থাকতে চাই না। আমরা চাই রাজশাহীকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সেরা শহরে পরিণত করতে। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি আগের মেয়াদে সবুজ নগরী গড়ে তোলার আন্দোলন শুরু করেছিলেন জানিয়ে বলেন, এবারও আমার লক্ষ্য যত বেশি গাছ লাগিয়ে নগরীকে সবুজ করা যায়। তবে উন্নয়ন কাজের কারণেই ধূলিকণা মুক্ত করা যাচ্ছে না নগরী। এ জন্য আগের অবস্থানটি ধরে রাখা যায়নি বলে দাবি মেয়রের।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রকিব উদ্দিন আহমদ বলেন, কোন বিবেচনায় বিশে^ রাজশাহী নির্মল বায়ুর শহর হয়েছিল, সেটি পরিষ্কার নয়। তবে আগের চেয়ে রাজশাহীর বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠছে। শুধু গাছ লাগিয়ে নির্মল বায়ুর শহর গড়ে তোলা সম্ভব নয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর