বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ধোঁয়া-ধূলিকণায় ঢাকার আকাশ হুমকিতে

আকাশে স্থায়িত্ব বেড়ে জমে থাকছে কুয়াশা স্তর, স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ধোঁয়া-ধূলিকণায় ঢাকার আকাশ হুমকিতে

শুষ্ক মৌসুম শুরু হতেই দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে ঢাকা। ধোঁয়া, ধূলিকণায় ঢাকার আকাশে স্থায়িত্ব বেড়ে জমে থাকছে কুয়াশা স্তর। ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া কুয়াশার সঙ্গে মিলে তৈরি হচ্ছে ধোঁয়াশা। এই অস্বাস্থ্যকর বায়ুতে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে ঢাকাবাসী। গতকাল বেলা ১টায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) অনুযায়ী ঢাকার বায়ুমান ছিল ১৮৮। একিউআই সূচকে ৫১ থেকে ১০০ স্কোর থাকলে বাতাসের মান স্বাস্থ্যকর হিসেবে গ্রহণযোগ্য বিবেচনা করা হয়। সেখানে ১৮৮ স্কোরে ঢাকার বায়ু মানকে অস্বাস্থ্যকর হিসেবে উল্লেখ করেছে একিউআই। বায়ু দূষণে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

খ্যাতিমান পরিবেশবিদ ড. আতিক রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বায়ুদূষণের ফলে রাজধানী ঢাকার আকাশে কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ইটভাটা থেকে বাতাসে ধেয়ে আসা ধোঁয়া কুয়াশার সঙ্গে মিলে ধোঁয়াশা তৈরি করছে। আগে সূর্য উঠলেই কুয়াশা শিশির হয়ে ঝড়ে পড়ত। কিন্তু এখন বায়ুদূষণের কারণে ধোঁয়া, ধূলিকণা মিশে কুয়াশা স্থির থাকছে। তিনি আরও বলেন, শীতকালে বাতাস উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে আসে। ঢাকার উত্তর দিকে গেলে দেখা যায় সারিসারি ইটভাটা। বাতাসে এসব ইটভাটার ধোঁয়া ঢাকার আকাশে উড়ে আসে। এর সঙ্গে উন্নয়ন কাজের জন্য ফেলে রাখা মাটি-বালু, যানবাহনের কালো ধোঁয়া মিশে ঢাকার বাতাস এ নগরীকে সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় নিয়ে যায়। পৃথিবীর অন্য দেশে উন্নয়ন কাজের সময় মাটি-বালু ঢেকে রাখতে হয়। কিন্তু ঢাকায় সেসব সতর্কতার কোনো প্রয়োগ নেই। বায়ুদূষণ প্রকৃতিকে বিষিয়ে তুলে নগরীকে মানুষ বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে। রাস্তার পাশে গাছের পাতায় জমে থাকা পুরু ধুলা প্রমাণ দেয় বায়ুদূষণের মাত্রা। নিজেরা সচেতন হলে এই দূষণ ঠেকানো সম্ভব।

বাংলাদেশে বায়ুদূষণের উৎস নিয়ে ২০১৯ সালের মার্চে একটি গবেষণা প্রকাশ করে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংক। তাতে দেখা যায়, দেশে বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণকাজ। আট বছর ধরে এই উৎসগুলো ক্রমেই বাড়ছে। ২০১৩ সালে পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে দেশের ইটভাটাগুলোর ওপরে একটি জরিপ করা হয়। তাতে দেখা যায়, দেশে ইটভাটার সংখ্যা ৪ হাজার ৯৫৯। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে পরিবেশ অধিদফতর থেকে জরিপ চালিয়ে দেখা যায়, ইটভাটার সংখ্যা বেড়ে ৭ হাজার ৯০২ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৪৮৭টি ইটভাটা ঢাকা বিভাগের মধ্যে গড়ে উঠেছে। ওই গবেষণার তথ্যে আরও দেখা যায়, ২০১০ সালে দেশে মোট যানবাহনের পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৭। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয় ৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৫৪। ক্রমবর্ধমান ইটভাটা, যানবাহন এবং উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বায়ুদূষণের সূচক।

বায়ুদূষণের কারণে রাজধানীতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বিঘিœত হওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দিচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দূষিতবায়ুর সংস্পর্শে থাকলে চোখ, নাক, গলার সংক্রমণ হতে পারে। সেই সঙ্গে ফুসফুসের নানা জটিলতা, যেমন ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং নানাবিধ অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। দূষিতবায়ুর কারণে শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি শিশুর মানসিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে গর্ভবতী নারীদের।

সর্বশেষ খবর