বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সুদহার ৯-৬ বাস্তবায়নে সরকার কঠোর

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুদহার ৯-৬ বাস্তবায়নে সরকার কঠোর

সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে এবার সরকার কঠোর বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আগামী এপ্রিল থেকেই আমরা আশা করি এটি কার্যকর করা হবে। গতকাল সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশ বাস্তবায়নের বিষয়টি নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই কার্যকরের কথা ছিল এবং প্রথম দিকে এটি আমরা ফেইজ ওয়াইজ বাস্তবায়ন করব বলে ধারণা ছিল। কিন্তু আমরা পরে দেখলাম, যদি শুধু ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করি তাহলে অনেক ইন্ডাস্ট্রি বাদ পড়ে যাবে, অনেক খাত বাদ পড়ে যাবে। এদেরকে বলা হবে তোমাদেরটা ম্যানুফ্যাকচারিং নয়, কবে বসিয়েছ, লাইসেন্স নেই বিভিন্ন কথাবর্তা বলবে। এটাকে এলিমিনেট করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বললেন যদি সফলতা পেতে চাও তাহলে সব ঋণগ্রহীতাকে এ সুবিধা দাও। কোন সেক্টর ঋণ নিল এটা তার ব্যাপার। ঋণগ্রহীতা যা-ই করবেন তাতেই দেশের লাভ হবে। ট্রেড করলেও দেশের লাভ হবে, একটি ইন্ডাস্ট্রি, সেলুন করলেও লাভ হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, সব খাতেই এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এরপর যখন আমরা ব্যাংকারদের সঙ্গে বসলাম তখন তারা বললেন, যেহেতু একরকম আইডিয়া নিয়েছিলাম, এখন আরেকটা আইডিয়া দিয়েছেন। পাশাপাশি আমাদের কিছু শর্টটার্ম ডিপোজিট আছে যেগুলো দু-তিন মাসের মধ্যে ম্যাচিউর করবে তাই আমরা এটি বাস্তবায়নে তিন মাস সময় চাচ্ছি। তবে এটি তারা বাস্তবায়নে একমত, এটা বাস্তবায়ন করা উচিত বলেও জানিয়েছেন তারা। এজন্যই তাদের তিন মাস সময় দিয়েছি। আগামী এপ্রিল থেকেই আমরা আশা করি এটি বাস্তবায়ন হবে। মুস্তফা কামাল বলেন, এজন্য সার্কুলার ইস্যু করা হবে, না হলে মিসআন্ডারস্টান্ডিং হবে। এটা অলরেডি সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, সার্কুলার ইস্যু না করলেও তারা (ব্যাংকাররা) এটি বাস্তবায়ন করবে। তারাও তো সরকারের অংশ। সুতরাং এটা করবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা আমিও ফিল করি যে, ওভার নাইট অথবা তিন বা ছয় মাসের ভিতরে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। কিন্তু উপায় ছিল না। না হলে শিল্পায়ন হবে না। এ দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যাবে না।

সরকারি ডিপোজিট ফিফটি ফিফটি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি ডিপোজিট সরকারি-বেসরকারি উভয় ব্যাংককে দেব।

পাবলিক ব্যাংকগুলো সবই প্রায় বড়। কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরে অনেক বড় ব্যাংকও আছে আবার ছোট ব্যাংকও আছে। তাই এ ব্যাংকগুলোকে যার পেইড অব ক্যাপিটাল বেশি তাকে বেশি দেওয়া হবে, আর যার কম সে কম পাবে। বেসরকারি ব্যাংক খাতকে মোট ডিপোজিটের যে ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে তা থেকে ভাগ করে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গ নম্বর প্লেট : সভায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মোটর ড্রাইভিং লাইসেন্স স্মার্টকাড সংগ্রহসংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, উপযুক্ত সরবরাহকারী না পাওয়ায় এখানে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশে দেখি যে প্রতিটি গাড়ির নম্বর প্লেট বা লাইসেন্স প্লট অকশন হয় এবং প্রচুর টাকা আয় করে। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া আয় করে আবুধাবি নম্বর প্লেট নিয়ে লন্ডনে দেখেছি গাড়ি নিয়ে যায়। যত সুন্দর নম্বর নম্বরের দামও বেশি।

নম্বরটি কেমন হবে বা মালিকের নামের সঙ্গে এক দুই তিন এ রকম হতে পারে কিনা জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটার ওপর আরও কাজ করতে হবে। চায়নার পলিসি এখানে চলবে না, তাদের ৪ নম্বর দিয়ে কিছু হয় না, ওরা অত্যন্ত ক্রেজি ৮ নম্বর নিয়ে। আমরাও এ রকম দেশে ধর্মীয় ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে রূপরেখা তৈরি করব। সেভাবে করতে পারলে প্রাইসটি ভালো পাব। বিদেশে যেভাবে অর্জন করছে সেভাবে অর্জন করব।

প্রসঙ্গ শেয়ারবাজার : বিদেশে শেয়ারবাজার সূচক ১ হাজার থেকে শূন্যতে এলে এসইসি চেয়ারম্যানকে গালিও দেবে না, মারতেও যাবে না, রাস্তায় গাড়িও ভাঙবে না মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না কেন, সব দিকেই ভালো শুধু এক জায়গায় বহির্বিশ্বের সঙ্গে মিল নেই। শেয়ারবাজারের প্রথম ঘণ্টায় বাড়ে তখন যারা ইনভেস্ট করেছেন তারা পান, দ্বিতীয় ঘণ্টায় আবার দাম কমে যায়, দ্বিতীয় ঘণ্টায় কমার পর যেটা স্থিতি হয় এটাকে বলা হয় সেদিনের স্থিতি বা এটা কমে গেছে। কে জেতে আর কে হারল নিজের মনকে প্রশ্ন কর। টানা সূচক পড়তে থাকলে সমস্যা বাড়তে থাকবে কিনা- জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখানে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই, কেউ আয় করবে কেউ লস করবে, দুটি একসঙ্গে হয়তো হবে না।

তিনি বলেন, আমাকে দেখতে হবে ব্যাংকগুলো ম্যানুপুলেট করে কিনা, যে শেয়ারগুলো বাজারে আসে ম্যানুপুলেট করে কিনা। প্রফিট হওয়ার পরও প্রফিট ঘোষণা না দিয়ে ডিভিডেন্ট পকেটে নেয় কিনা। আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হলে এর প্রতিফলন পুঁজিবাজারে আসতে বাধ্য। আজ না হলে আগামীকাল আসতে হবেই।

সর্বশেষ খবর