শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বাজার নিয়ন্ত্রণ

সাবেক মন্ত্রীকে দিয়ে ব্যবসায়ীদের বোঝালেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাজার সামলাতে রোজা শুরুর চার মাস আগেই এবার সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির বর্তমান সভাপতি তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সচিবালয়ে সভা করলেন বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই সভায় ব্যবসায়ীরা যেন নৈতিকতার সঙ্গে স্বাভাবিক মুনাফায় রোজার সময় পণ্য বিক্রি করেন সে বিষয়ে পরামর্শ দেন সাবেক ও বর্তমান দুই মন্ত্রী। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রোজার মাসে আমরা যেন মানুষকে একটু শান্তি দিতে পারি, তারা যেন ঠিকমতো সাহরি ও ইফতারে খাবার খেতে পারে সে চেষ্টা করলে ভালো হয়।’ তোফায়েল আহমেদকে ‘লিডার’ সম্বোধন করে টিপু মুনশি জানান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীর পরামর্শে এবার আগেভাগেই বাজার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। গতকাল দুপুরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। আগামী এপ্রিলে রমজান শুরু। ওই সময় যাতে কোনো সংকট না হয় সেজন্য রোজার আগেই ২ লাখ মেট্রিক টন পিয়াজ আমদানির পরামর্শ দেন তোফায়েল আহমেদ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান টিসিবিসহ বেসরকারি কোম্পানি সিটি, মেঘনা ও এস আলম গ্রুপকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন করে এ পিয়াজ আমদানি করতে বলেন তিনি। সভায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের ধরপাকড় ও গ্রেফতারের বিরোধিতা করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, কোনোভাবেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে ‘প্যানিক’ ছড়ানো যাবে না। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা বিষয় বোঝার চেষ্টা করি না অনেক সময়, সমালোচনা করি; যেমন ভোজ্যতেলের দাম যদি আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ে, একজন আমদানিকারক বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করে তো লস দেবেন না। তখন আমরা যদি বলি এত টাকায় বিক্রি করতে হবে, আর তিনি যখন দেখবেন এতে তার ক্ষতি হবে তখন তিনি আমদানি বন্ধ করে দেবেন।’ সেজন্য কোনো জোরাজুরি আর ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যায় না বলে মন্তব্য করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমি পাঁচ বছরে কোনো দিন বাজারে যাইনি। আমার সময় কোনো সিন্ডিকেটের আলামত দেখিনি।’

সাম্প্রতিক পিয়াজ সংকটের পেছনে মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়হীনতা ও যথাযথ তথ্যের ঘাটতি ছিল বলে মনে করেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আগে ঠিক করতাম চাহিদা কত আর মজুদ কত তাহলে (পিয়াজ নিয়ে) এ সমস্যা হতো না।’ ডলারের দাম ও পণ্যের ওপর অস্বাভাবিক হারে ট্যাক্স ও ভ্যাট আরোপের কারণেও জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে বলে মনে করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। সভায় উপস্থিত ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি কেজি চিনিতে ২৪ ও ভোজ্যতেলে ২২ টাকা হারে ট্যাক্স ও ভ্যাট দিতে হয় তাদের। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ অভিযোগ করেন, আগে প্রতি পেটি খেজুর আমদানিতে ৯৫ সেন্ট ট্যাক্স থাকলেও এখন তা আড়াই ডলার করে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে সভায় উপস্থিত এনবিআর প্রতিনিধি জানান, খেজুরের ওপর গত মার্চের পর নতুন করে কোনো ট্যাক্স আরোপ হয়নি। বিষয়টি জানতে তোফায়েল আহমেদ সভা থেকেই এনবিআর চেয়ারম্যানকে ফোন করেন। জানান, এনবিআর চেয়ারম্যান তাঁকে জানিয়েছেন ট্যাক্সের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

সভায় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি অভিযোগ করেন, তিনি পিয়াজ সংকটের পর পণ্যটির প্রকৃত উৎপাদন, চাহিদা ও মজুদ সম্পর্কে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে কোনো তথ্য পাননি। এ সময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি জানান, তাদের কাছে উৎপাদনের তথ্য থাকলেও মজুদের কোনো তথ্য নেই। ভারত কর্তৃক পিয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পরপরই পণ্যটির দাম বাড়িয়ে কেন দ্বিগুণ করা হলো- এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে প্রশ্ন রেখে তাদের নৈতিকতার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেন টিপু মুনশি। জবাবে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা গোলাম মাওলা বলেন, তারা যখন পণ্য কিনে লস করেন তখন কেউ জানতে চায় না।

নতুন এই বছরকে মুজিববর্ষ হিসেবে সরকার পালন করছে উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর আমরা সবাই সতর্ক থাকতে চাই।’ তিনি ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক মুনাফায় পণ্য বিক্রির আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা পিয়াজ আমদানি করুন। যদি কোনো কারণে ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তবে আমরা মূল্য পর্যালোচনা করব।’ সরকারের আর্থিক ক্ষতি হলেও প্রয়োজনীয় পিয়াজ আমদানি করা হবে বলে জানান তিনি। সভায় বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মফিজুল ইসলাম, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান তপনকান্তি ঘোষ, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহঙ্গীরসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর