শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ইরানি জেনারেলসহ আটজন নিহত মার্কিন হামলায়

কঠোর প্রতিশোধের ঘোষণা খামেনির, ট্রাম্পের সমালোচনায় কংগ্রেস, বেড়েছে তেলের দাম

প্রতিদিন ডেস্ক

ইরানি জেনারেলসহ আটজন নিহত মার্কিন হামলায়

বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় গতকাল সকালে বিমান হামলা চালায় মার্কিন বাহিনী -এএফপি

ইরানের ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনীর (ইসলামী রেভ্যুলুশনারি গার্ড) কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানি গতকাল বাগদাদে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। পেন্টাগন জানায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পসংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর মে মাসে একতরফাভাবে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে বর্ধমান উত্তেজনা গতকাল নাটকীয় উচ্চতায় পৌঁছে যায়। জেনারেল সোলাইমানি হত্যার পর বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ঘটনার পরপরই গতকাল বিশ্ববাজারে তেলের দর ৪ শতাংশ বেড়ে যায়। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র-ইরান উত্তেজনার কারণে বিশ্ববাজারে তেল সরবরাহ ব্যাহত হবে। অপরিশোধিত তেলের মূল্য গতকাল ৩ ডলার বেড়ে গিয়ে প্রতি ব্যারেল ৬৯ দশমিক ১৬ ডলারে বিক্রি হয়েছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনি             ঘোষণা করেন, ‘শহীদ’ সোলাইমানি হত্যার কঠোর প্রতিশোধ নেওয়া হবে। এদিকে, কুদস ফোর্সের নতুন কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইসমাইল কানি। ইরানের বাইরে সামরিক অভিযান পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল সোলাইমানি ইরানের ‘সবচেয়ে ক্ষমতাধর দ্বিতীয় ব্যক্তি’ হিসেবে গণ্য ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ইরানে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন শুরু হয়েছে। বেতার-টিভিতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানগুলো স্থগিত করা হয়েছে। পাঠকরা কালো ব্যাজ পরে সংবাদ পরিবেশন করছেন। সোলাইমানি হত্যার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রবীণ নেতা জো বাইডেন বলেছেন, ট্রাম্প যা করেছেন তা জ্বলন্ত কূপে ডিনামাইট ছুড়ে দেওয়ার শামিল। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক পরিচালক জেমস ক্ল্যাপার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন এ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে ওই অঞ্চলে থাকা আমেরিকানরা হুমকির মুখে পড়বেন। মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যানসি পেলোসিসহ ডেমোক্র্যাটিক নেতারা এরই মধ্যে এক বিবৃতিতে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন।

যে কারণে হামলা : ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীর ঘাঁটিতে মার্কিন হামলায় ২৫ জন নিহত হওয়ার পর মঙ্গলবার বাগদাদে মার্কিন দূতাবাসে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর আগে ইরাকে মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে কয়েক দফা রকেট হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, এসব হামলার নেপথ্য কারিগর সোলাইমানি। তাই তারা বহু আগে থেকেই হিটলিস্টে সোলাইমানির নাম তুলেছিল। গতকাল ভোরে ইরাকের বাগদাদ বিমানবন্দরের কার্গো টার্মিনালের কাছে দুটো গাড়িতে মার্কিন হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া তিনটি রকেট আঘাত হানে। এর মধ্যে একটি গাড়িতে ছিলেন জেনারেল সোলাইমানি ও মিলিশিয়া নেতা আল-মুহানদিস। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য ইরাকের প্যারা মিলিটারি ফোর্সের সদস্যরা ছিলেন দ্বিতীয় গাড়িতে। এ হামলায় সোলাইমানিসহ আটজন প্রাণ হারান বলে জানানো হয়েছে। জেনারেল সোলাইমানি ও মিলিশিয়া নেতা আল-মুহানদিসের মৃত্যুতে সবচেয়ে বড় লাভ হলো জঙ্গি সংগঠন আইএসের। সিরিয়া ও ইরাকে গত কয়েক বছর আইএসবিরোধী যুদ্ধে এ দুজন ছিলেন আইএসের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক।

কুদস ফোর্সের পরিচর্যা : সোলাইমানির হাতেই ২১-২২ বছর ধরে কুদস বাহিনী দক্ষ হয়ে ওঠে। ফোর্সের পরিচর্যায় তাঁর মনোযোগ ছিল বিরামহীন। এজন্য তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো সমরজগতের বিশেষ নজরে ছিলেন। ইরাক, সিরিয়া ছাড়াও গোটা মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কূটনৈতিক শক্তি বাড়িয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, আইএস ও সৌদি আরবের কাছে জেনারেল সোলাইমানি ছিলেন সরাসরি প্রধান প্রতিপক্ষ। লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসসহ বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের সুসম্পর্ক রেখে তিনি পশ্চিমাদের শত্রু হয়ে ওঠেন। ২০০৬ সালের ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ লড়াইয়ের সময় তিনি মাঠে থেকে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন আফগানিস্তানে হামলা চালায়, তখন থেকেই তিনি কুদসের প্রধান। ২০১৩ সালে সিরিয়া যুদ্ধে ইরানের হস্তক্ষেপের পর তিনি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

যুদ্ধের আশঙ্কা : ইরান মধ্যপ্রাচ্যে কুদস ফোর্স ব্যবহার করে সামরিক ভারসাম্য বজায় রাখত। সেই ফোর্সের প্রধানকে হত্যার পর মার্কিন পতাকা টুইট করে উল্লাস করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। পেন্টাগন জানায়, ভবিষ্যতে ইরানের হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ করতেই জেনারেল সোলাইমানিকে হত্যা করা হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন তাঁকে ‘সন্ত্রাসী’ বিবেচনা করে আসছিল। আন্তর্জাতিক সমর গবেষকরা এ হামলার ফলাফল ভয়ানক হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন। রাশিয়া আশঙ্কা করছে, এ হামলার কারণে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, ইরান এ হত্যার সামরিক জবাব দিতে পারে। ইরাকের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদেল মাহদি এ হামলাকে আগ্রাসন আখ্যা দিয়ে এতে বিপর্যয়কর যুদ্ধ লেগে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন।

উদ্বিগ্ন নেতানিয়াহু : সোলাইমানি হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার ঘোষণা করেছে লেবাননের শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ আন্দোলন। এ ঘোষণায় দৃশ্যত উদ্বিগ্ন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি গ্রিস সফর সংক্ষিপ্ত করে তড়িঘড়ি দেশে ফিরে আসেন।

সর্বশেষ খবর