শনিবার, ৪ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সিটি ভোট সমন্বয়ের দায়িত্বে আমু তোফায়েল

রফিকুল ইসলাম রনি

সিটি ভোট সমন্বয়ের দায়িত্বে আমু তোফায়েল

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে আওয়ামী লীগ। প্রচার-প্রচারণা ও ভোটারদের ভোট আনতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে ক্ষমতাসীনরা। এজন্য ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের বর্ষীয়ান নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে। গতকাল সকালে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথ সভায় এ দুই নেতাকে প্রধান করে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা কমিটি অনুমোদন দেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় ভোটে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী টিমে নেতৃত্ব দেবেন আমির হোসেন আমু ও উত্তর সিটিতে তোফায়েল আহমেদ। এতে সদস্যসচিব থাকছেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি। দলের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। দায়িত্ব পেয়েই কাজ শুরু করেছেন আমু-তোফায়েলের            নেতৃত্বাধীন টিমের সদস্যরা। সূত্রমতে, গতকাল আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ নির্বাচন হবে অনেক চ্যালেঞ্জিং ও কঠিন। আমাদের নামে অপপ্রচারও করা হবে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সাধারণ ভোটাররা যেন বিভ্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে।’ তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘ভোটারদের ঘরে ঘরে যেতে হবে। সরকারের উন্নয়নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।’ এ সময় কয়েকজন নেতা বলেন, ‘নেত্রী! আমরা কাজ শুরু করেছি। দলীয় মিটিংয়ে সেসব নিদের্শনা দিচ্ছি।’ এ সময় তাদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শুধু মিটিং করে, জনসভা করে ভোট পাওয়া যাবে না। জনসভায় ভাষণ দিয়ে চলে এলেন, আর কেউ ভোট দেবে- এমনটা ভাবলে হবে না। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে হবে। দলের উপদেষ্টা পরিষদ, কার্যনির্বাহী সংসদ, সহযোগী সংগঠনের নেতা যারা যে এলাকায় থাকেন, তাদেরকে স্ব স্ব এলাকায় জনগণের কাছে ভোট চাইতে হবে। আমার সরকারের অনেক উন্নয়ন আছে। সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। বিএনপি-জামায়াত অপপ্রচার চালাতে পারে, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

সূত্রমতে, যৌথ সভায় দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে দলের বর্ষীয়ান নেতা উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে টিম লিডার হিসেবে মনোনীত করা হয়। এ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত আছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান এবং যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল। বাকিদের নাম দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চূড়ান্ত করে দেবেন। অন্যদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে দলের উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে টিম লিডার হিসেবে মনোনীত করা হয়। এ টিমে অন্তর্ভুক্ত আছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ অন্যরা।

আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমের দুজনই আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। তাঁরা দুজনই একাধিক কমিটিতে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামের সদস্য ছিলেন। দুজনই সাবেক মন্ত্রী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য। ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শেখ ফজলে নূর তাপস, যিনি ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে সম্প্রতি পদত্যাগ করেছেন। আর উত্তর সিটি করপোরেশনে নৌকা নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সদ্যসাবেক মেয়র আতিকুল ইসলাম।

বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো অংশ নেওয়ায় এবারের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য নিজস্ব প্রার্থীকে জেতাতে তারা প্রচেষ্টার কোনো কমতি রাখছে না। সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করেছে দলটি। যেখানে দলের প্রবীণ ও অভিজ্ঞ দুই নেতাকে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হলো।

দ্রুত জেলা সম্মেলনের নির্দেশ : বৈঠকসূত্র জানান, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের মেয়াদোত্তীর্ণ জেলাগুলোর দ্রুত সম্মেলন করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের তিন বছর মেয়াদি কমিটি করেছি। অনেক জেলায় এখনো সম্মেলন করা যায়নি। অনেক জায়গায় আমরা সময় দিয়ে আবার স্থগিত করেছি। তাই এখন পরিকল্পনা নিয়ে যেসব জেলায় মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে সেগুলোর কাউন্সিল করে শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’ এখনই কাজ শুরু করতে হবে বলে নির্দেশনা দেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

দ্রুতই বিভাগীয় কমিটি : আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সম্পাদকীয় কমিটির চেয়ারম্যানের নাম দ্রুতই জানানো হবে বলে জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন বিভাগীয় কমিটি আছে, সেগুলো দ্রুতই করা হবে। এ কমিটি কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, সাবেক ছাত্রনেতাদের নিয়ে গঠন করতে হবে।’ এ সময় দলের কেন্দ্রীয় সদস্য খ ম জাহাঙ্গীর দলীয় প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘নেত্রী! আমাদের উপকমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সদস্যসংখ্যা লিমিটেড রাখলে মান বজায় থাকে। না হলে সবাই নিজেকে কেন্দ্রীয় নেতা পরিচয় দিয়ে থাকেন। এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।’ প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য গভীর মনোযোগসহকারে শোনেন। ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্মদিন উপলক্ষে জাতীয় কমিটির সঙ্গে সংগতি রেখে কর্মসূচি ঠিক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

সিটি নির্বাচনের কাজ শুরু করেছেন নেতারা : জানা গেছে, গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সমন্বয়ক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের নেতৃত্বে কাজ শুরু হয়েছে। রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায় মহানগরী আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্রমতে, আমু-তোফায়েল গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব পাওয়ার আগেই কাজ শুরু করেছিলেন। বৃহস্পতিবার পৃথক দুটি বৈঠক করেন তোফায়েল আহমেদ। আমির হোসেন আমু আরেকটি বৈঠক করেন। একইভাবে গতকাল তাঁরা পৃথকভাবে নির্বাচন নিয়ে নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেন।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে মেয়রপ্রার্থী আতিক ও তাপসকে জাসদের সমর্থন : আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম আতিক ও ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে দলীয় সমর্থন দিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। গতকাল বিকাল ৪টায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটির স্থায়ী কমিটির সভা থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন শিরিন আখতার এমপি, মোশারফ হোসেন, মীর হোসাইন আকতার, নুরুল আক্তার, নাদের চৌধুরী, অ্যাডভোকেট শাহ জিকরুল আহমেদ প্রমুখ। দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের এই দুই প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই দুই প্রার্থীকে ভোট দিতে ঢাকাবাসীকে আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও তাদের মনোনীত দুই মেয়র প্রার্থীর প্রতি ঢাকা মহানগরীর যানজট, ডেঙ্গুসহ মশা নিয়ন্ত্রণ, বায়ুদূষণ, বর্জ্য ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা এবং নাগরিকসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি সংস্থাকে নিয়ে ‘নগর সরকার’ গঠনের সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী অঙ্গীকার ঘোষণার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সর্বশেষ খবর