রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বঞ্চনার কথা তুলে ধরবে পুলিশ

আট কর্মঘণ্টাসহ অর্ধশতাধিক দাবি, আজ পুলিশ সপ্তাহ শুরু

সাখাওয়াত কাওসার

বঞ্চনার কথা তুলে ধরবে পুলিশ

আশ্বাসেই ঝুলে থাকছে পুলিশের বেশির ভাগ দাবি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসের পরও পুলিশের দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আজ শুরু হওয়া পুলিশ সপ্তাহে আবারও নিজেদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরবে পুলিশ। ২০১৬ থেকে ২০১৯- এ চার বছরে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অর্ধশতাধিক দাবি তুলে ধরে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি দাবি শোনার পর এর বেশির ভাগই দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরকে এসব দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকারপ্রধান দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বললেও একটি ছাড়া কোনোটিই বাস্তবায়ন হয়নি বলে হতাশা কাজ করছে পুলিশ সদস্যদের মধ্যে। আজ এগুলো পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরবেন পুলিশ সদস্যরা। জানা গেছে, ‘পুলিশ সদস্যরা সর্বদা দায়িত্বরত (অন ডিউটি) বলে বিবেচিত হবেন।’- ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ২২ ধারায় এ বিষয়টি উল্লেখ করা হলেও এর সংশোধন চেয়ে প্রজাতন্ত্রের অন্য কর্মচারীদের মতো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার দাবি উঠবে পুলিশের পক্ষ থেকে। একই সঙ্গে ছুটির বিষয়টির সমাধান চাইবে পুলিশ। তারা বলবেন, টানা দায়িত্ব পালনের জন্য এবং বহুমাত্রিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত থাকার কারণে পুলিশ সদস্যদের মানসিকতায় পরিবর্তন আসছে। পারিবারিক, সামাজিক জীবনেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের মিশনে অন্তত একজন করে পুলিশ প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করতে অন্যবারের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করবে পুলিশ। কর্তব্যরত অবস্থায় একজন পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু হলে তিনি পাঁচ লাখ টাকা পান। অথচ চাকরিরত অবস্থায় (ছুটিতে থাকলেও) কোনো সরকারি কর্মকর্তা যদি মৃত্যুবরণ করেন, তাহলে তাকে ৮ লাখ টাকা দেওয়া হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা এটিকে ‘চরম বৈষম্যমূলক’ বলে মনে করেন। বাংলাদেশ পুলিশের কল্যাণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের পুলিশ সপ্তাহে উত্থাপিত দাবির মধ্যে বেশির ভাগই তৎক্ষণাৎ বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তবে সেগুলোর একটিও বাস্তবায়ন হয়নি ওই বছরের ডিসেম্বর পেরিয়ে গেলেও। পুলিশ সদস্যদের পরিবারের আজীবন (দুই সদস্যের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত) পারিবারিক রেশন সুবিধা চাওয়া হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশের এ প্রস্তাব মেনে নেন। তবে বর্তমানে এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় আটকে আছে। এ ছাড়া ‘দুষ্কৃতকারী কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে (Killed in action on duty)’ মৃত্যুবরণকারী কর্মকর্তাদের পারিবারিক রেশন দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিহত কর্মকর্তাদের পরিবার এ সুবিধা পায় না। যদিও তাদেরও এ সুবিধা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তবে তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ২০১৯ সালে পুলিশের বিশেষ ভাতা যৌক্তিক পর্যায়ে উন্নীতকরণের কথা থাকলেও এ প্রস্তাবটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় ঝুলে আছে। আধুনিক স্পোর্টস ট্রেনিং কমপ্লেক্স তৈরির দাবিতে সম্মতি মিললেও পুলিশ সদর দফতরের ডেভেলপমেন্ট-২ শাখা সবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়নের কাজ করছে। দীর্ঘদিনের দাবির পর অর্থ বিভাগ রাজশাহীর সারদার পুলিশ একাডেমি এবং মিরপুরের স্টাফ কলেজে কর্মরত ও পদায়িত বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারদের শর্তসাপেক্ষে ৩০ শতাংশ প্রশিক্ষণ ভাতা দিতে সম্মতি জানায়। এ ছাড়া জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী বিভিন্ন প্রকার ভাতা বৃদ্ধিকরণের প্রস্তাব মেনে নেয় সরকার। তবে এটিও বাস্তবায়ন হয়নি। এটিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-২ শাখায় আটকে আছে। পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নতির জন্য ২০১৭ ও ২০১৮ সালে রাজারবাগের কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালকে ১০ তলা ভবন করার প্রস্তাব ছিল পুলিশের। সরকার এ প্রস্তাব মেনে নিয়েছিল। তবে সর্বশেষ ২ জানুয়ারি এ প্রস্তাবের অগ্রগতি জানতে চাইলে মন্ত্রণালয় জানায়, ‘প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডি কাজের জন্য কনসালট্যান্ট নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।’ একই বছর পুলিশের এসআই, সার্জেন্ট ও এএসআইদের সরকারি কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনায় স্বল্প সুদের কিস্তির বা ঋণের প্রস্তাব এবং জ্বালানি ভাতা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তবে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এটি আটকে আছে পুলিশের ট্রান্সপোর্ট ও অডিট শাখায়। যদিও পুলিশের কমিউনিটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার কারণে বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে নিজ উদ্যোগে ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন। একাধিক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেন, প্রজাতন্ত্রের অন্য ক্যাডারদের মতো করে পুলিশেও উচ্চ পদগুলোর সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। অনেক কর্মকর্তা যোগ্য হলেও পদ না থাকায় তাদের পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও ২০১৮ সাল থেকেই এ দাবি তোলা হয়েছে। তিন বছর আগে পুলিশে পাঁচটি পদকে গ্রেড-১ পদ অনুমোদনের দাবি করা হয়েছিল। সেই দাবি মেনে নেওয়া হলেও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। পাঁচটি পদের মধ্যে অ্যাডিশনাল আইজি (এঅ্যান্ডও) এবং অ্যাডিশনাল আইজি (এসবি) এ দুটি পদকে গ্রেড-১ হিসেবে উন্নীত করা হয়। তবে র‌্যাব ডিজি, সারদা পুলিশ একাডেমির রেক্টর নিউমারারি হিসেবে (গ্রেড-১) পদে আসীন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা যখনই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের যৌক্তিক দাবি-দাওয়া তুলে ধরি, তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। তবে দুঃখের বিষয়, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এর অধিকাংশই বাস্তবায়ন হয় না।’ এবার এসপি থেকে তদূর্ধ্ব পদে ঝুঁকিভাতার বিষয়টি তোলা হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। ২০১৭ সালের আগে পরিদর্শক থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইউনিফর্ম কেনার টাকা দিত সরকার। ২০১৭ সালে পরিদর্শক থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বছরে দুটি পোশাক দেওয়ার আহ্বান জানায় পুলিশ। দাবিটি মেনে কয়েক বছর ধরে তাদের দুটি ইউনিফর্ম দেওয়া হচ্ছে। এটিই একমাত্র দাবি, যা পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। এ ছাড়া কোনোটিরই তেমন অগ্রগতি নেই। পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) সোহেল রানা বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর মতো এবারও পুলিশ সপ্তাহ হবে রবিবার থেকে। পুলিশ সদস্যরা প্রতিবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের যৌক্তিক দাবিগুলো তুলে ধরবেন।’

সর্বশেষ খবর