রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

সিটিতে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ চায় আওয়ামী লীগ

ঘরে ঘরে যেতে বললেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সুযোগ চায় আওয়ামী লীগ। এ জন্য তারা নির্বাচন কমিশনের দাবি জানাবে।

গতকাল রাতে গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এ বিষয়ে একমত হন দলটির কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বর্তমান আইন অনুযায়ী এমপি-মন্ত্রীদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।  রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মুলতবি বৈঠক শুরু হয়। শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এর পর ১০ জানুয়ারি জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালনসহ কয়েকটি কর্মসূচি নিয়ে কথা হয়। এর পর হাস্যরসে প্রধানমন্ত্রী নেতাদের কাছে জানতে চান কারও কোনো বক্তব্য আছে? নেতারা প্রথমে নেই বলে জানান। পরে আবারও প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাহলে আপনাদের জন্য খাওয়ার ব্যবস্থা রেখেছি, কথা না বললে পেটে ক্ষুধা লাগবে কীভাবে? খেয়ে যাবেন না? এ সময় দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি তুলে ধরেন। সূত্রগুলো জানায়, যৌথসভায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক আরপিওতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ার নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বের কোথাও এমন আইন নেই। সব দেশেই সংসদ সদস্যরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিতে পারেন। ভারতের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত প্রচারণায় অংশ নেন। এমপি হিসেবে আমরা ২০১৬ সালেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিয়েছি। কিন্তু এখন আরপিও পরিবর্তন করে সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পথ বন্ধ করা হয়েছে। এতে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ক্ষেত্রে আমরা সমস্যায় পড়ছি।

আবদুর রাজ্জাকের বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তোমরা এ বিষয়টি নির্বাচন কমিশনে তোলো না কেন? সেখানে আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানাও। এ নির্বাচনে বাস্তবায়ন না হলেও যেন ভবিষ্যতে বাস্তবায়ন হয় সে চেষ্টা করতে হবে। এ সময় দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় এমপিদের সুযোগ থাকা প্রয়োজন বলে মতামত দেন। বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। একক প্রার্থী করা না হলে আমাদের জন্য মেয়র নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাবে, একই সমস্যা ওয়ার্ডেও। সে কারণে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিদ্রোহী হওয়ার পেছনে স্থানীয় এমপিদের মদদ রয়েছে অভিযোগ করে কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আমাদের দলীয় কিছু এমপি সাহেবরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের বিদ্রোহী প্রার্থী ধরে রেখেছেন। তাদের পছন্দের লোককে দাঁড় করিয়েছেন। এতেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। নির্বাচনী প্রস্তুতির কথা তুলে ধরে উত্তরের সমন্বয়ক ও দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, নেত্রী আমরা কাজ শুরু করেছি। এখন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে নেতা-কর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা ঘরে ঘরে যাব। ভোট প্রার্থনা করব। আমরা বিজয়ী হতে পারব ইনশাআল্লাহ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে নেতা-কর্মীদের আনতে হবে। কেন্দ্রে ভোটার রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কেন্দ্রীয় সদস্য রিয়াজুল কবির কাওছার বলেন, যারা পোলিং এজেন্ট থাকবেন, তাদের ইভিএম সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। এ সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ডেকে আলোচনার মধ্য দিয়ে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করার নির্দেশনা দেন। দরকার হলে দল মনোনীত প্রার্থী পরিবর্তনেরও নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। নির্বাচনে জয় পেতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যেতে পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, মিছিল, সমাবেশ করলে সেখানে শুধু দলের লোক আসে। সাধারণ ভোটাররা আসে না। সে জন্য সাধারণ ভোটারদের কাছে পৌঁছার কাজ করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরতে হবে। বিগত কয়েক বছরে আমরা যে উন্নয়ন করেছি সেগুলো তুলে ধরতে হবে। বিদ্যুৎ দিয়েছি, রাস্তা করেছি, পানি সমস্যার সমাধান করেছি। যেসব সমস্যা আমরা এখনো সমাধান করতে পারিনি সেগুলোও সমাধান হবে, আমরা বসে নেই, সেটা ভোটারদের বোঝাতে হবে। ঢাকার দুই সিটিতে মেয়র পদে বিএনপি এমন কোনো আহামরি প্রার্থী দেয়নি মন্তব্য করে শেখ হাসিনা দলের নেতাদের সিরিয়াসলি কাজ করার নির্দেশনা দেন। ঢাকা দক্ষিণে ঢাকাইয়া প্রার্থী হিসেবে সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সন্তান ইশরাক হোসেন এগিয়ে থাকতে পারবেন কিনা সে বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা ওঠে। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম বলেন, আমাদের প্রার্থী ফজলে নূর তাপসের শ্বশুরবাড়ি ওয়ারি থানার বনগ্রামে। আর তার নানার বাড়ি বরিশাল। ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বরিশালেরও অনেক মানুষের বাস। ফলে আমরাই এগিয়ে থাকব। এ সময় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধাবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস বলেন, পুরনো ঢাকায় বিক্রমপুরের বহু মানুষ আছে। সেখানেও আমরা এগিয়ে থাকব। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরান ঢাকার শাখারি বাজার, তাঁতীবাজার, লালবাগ, বংশাল এলাকায় দলের মহিলা নেত্রীদের দিয়ে নারীভোটার পক্ষে আনার জন্য মতামত দেন।

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা সভায় বলেন, একটি সুষ্ঠু ভোটের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয়ী হয়ে প্রমাণ করতে হবে মানুষ আমাদের পক্ষে আছে। বিএনপি এখনই বলতে শুরু করেছে যে ভোট সুষ্ঠু হবে না। তাদের সে বক্তব্য জনগণের সামনে ভুল প্রমাণ করতে হবে। তারা গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল যে, বিএনপির প্রার্থীকে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও সে মিথ্যাচারে তারা সফল হয়নি। এটা আমাদের প্রাথমিক বিজয়।

সভায় মুজিববর্ষে নানা কর্মসূচি পালনের বিষয়েও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক সদস্য। মুজিববর্ষ উদযাপনে জাতীয় কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে দলীয় নেতাদের কাজ করারও নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা।

সর্বশেষ খবর