রবিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রশংসা যেন বিচারপতিদের প্রভাবিত না করে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রশংসা যেন বিচারপতিদের প্রভাবিত না করে

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, সুবিধাবঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় জনস্বার্থ মামলা সহায়তা করে। এটি অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে। তবে জনগণের অতিপ্রশংসা যেন বিচারকদের প্রভাবিত না করে। আর ব্যক্তিগত অতিরঞ্জন এড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিচারিক প্রক্রিয়ার পবিত্রতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষা করতে হবে। গতকাল সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে সুপ্রিম কোর্ট অনলাইন বুলেটিন (স্কব) আয়োজিত ‘জনস্বার্থ মামলার অবস্থা : একটি রূপরেখা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জনস্বার্থের মামলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আরও বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী ও হাই কোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী আর স্বাগত বক্তব্য দেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ। এ সেমিনারে হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্য থেকে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, বিচারপতি এম আর হাসান, বিচারপতি এমদাদুল হক, বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি এ কে এম আবদুল হাকিম। অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর। প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ১৯৯৬ সালে ‘ড. মহিউদ্দিন ফারুক বনাম বাংলাদেশ’ মামলা দিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট জনস্বার্থ মামলার বিষয়ে বিচারিক ভূমিকার পরিধি বাড়ানো শুরু করে। সুবিধাবঞ্চিত জনগণের মানবাধিকার রক্ষায় জনস্বার্থের মামলা সহায়তা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানবাধিকারবিষয়ক বিচারকাজে জনস্বার্থ মামলা দেশীয় মডেল হিসেবে বিচার বিভাগকে উন্নত করতে সহায়তা করে। জনগণের মঙ্গলের জন্য জনস্বার্থ মামলায় আইন ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে বিচার বিভাগের সক্ষমতা কাজে লাগাতে হবে। জাতির উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে হবে।

বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, জনস্বার্থ মামলার পাশাপাশি আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়েও অনেক সময় রুল জারি করি, আদেশ দিই। তবে আমাদের উচিত হবে যে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন বা পোস্টকার্ডের ভিত্তিতে আমরা রুল জারি করব, তার আগে ওই নিউজ ও পোস্টকার্ডের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে এখানে আসলেই জনস্বার্থ রয়েছে কিনা। তিনি বলেন, জনস্বার্থ মামলার ব্যাপ্তি অনেক বড়। সুয়োমোটোর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিন্তু জনস্বার্থ ইস্যুতে যে কেউ মামলা করতে পারেন। এটা নাগরিকের অধিকার।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জনস্বার্থের মামলা সুবিধাবঞ্চিত, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে পথ খুলে দেয়। এটি (জনস্বার্থের মামলা) মানুষের মৌলিক অধিকারকে রক্ষা ও সম্প্রসারিত করে। আর জনস্বার্থমূলক মামলার মাধ্যমে উচ্চ আদালত বিচার বিভাগের সীমানাকে প্রসারিত করে যাচ্ছে। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ইদানীং দেখা যাচ্ছে কিছু আইনজীবী নিজেকে প্রচারমাধ্যমে তুলে ধরতে বা নিজের প্রচারের জন্য ‘জনস্বার্থের মামলা’ নিয়ে আদালতে এসে হাজির হন। এর ফলে প্রকৃত জনস্বার্থের মামলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে লাগাম টেনে ধরা দরকার।

সর্বশেষ খবর