সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ফেডারেশন কাপ বসুন্ধরার ঘরে

রহমতগঞ্জকে হারিয়ে নতুন চ্যাম্পিয়ন

রাশেদুর রহমান

ফেডারেশন কাপ বসুন্ধরার ঘরে

ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস। শিরোপা নিয়ে গতকাল খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের উল্লাস -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নতুন বছর। নতুন স্বপ্ন। নতুন লক্ষ্য। সে লক্ষ্য পূরণের পথে ছুটতে শুরু করেই সফলতা ছিনিয়ে আনল বসুন্ধরা কিংস। নতুন বছরের শুরুতেই সমর্থকদের নতুন ট্রফি উপহার দিল তারা।

ফেডারেশন কাপে গত বছর ফাইনাল খেললেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি অস্কার ব্রুজোনের দল। আবাহনীর কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয়েছিল। তবে এবার আর কোনো বাধাই মানেননি ড্যানিয়েল কলিনড্রেসরা। ফেডারেশন কাপে এবারের আসরের চমক রহমতগঞ্জকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ট্রফি ঘরে তুলল কিংস। ফেডারেশন কাপে নতুন কিং বসুন্ধরা কিংস।

ঝড়ো গতির টুর্নামেন্টে দারুণ কৌশলী ছিলেন অস্কার ব্রুজোন। খুব হিসেব করে দল সাজিয়েছেন। এর ফলটাও পেয়েছেন স্প্যানিশ কোচ। কখনো জালাল কদু কখনো ড্যানিয়েল কলিনড্রেসদের বিশ্রাম দিয়েছেন। এতে দলের মধ্যে বাড়তি শক্তি যোগ হয়েছে। সাইড বেঞ্চটা শক্তিশালী থাকায় কিংসকে খুব বেশি ভুগতে হয়নি টুর্নামেন্টজুড়ে। গতকাল ম্যাচের শুরুতেই সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় বসুন্ধরা কিংস। আক্রমণের পর আক্রমণে রহমতগঞ্জের ডিফেন্স লাইনের ফাঁক-ফোকর স্পষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু গোলের দেখা মিলছিল না কিংসের। বিপরীতে ম্যাচের ১৫ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ করে রহমতগঞ্জ। বাম প্রান্ত দিয়ে কাউন্টার অ্যাটাক করে তারা। তুরায়েভের পাসে বল পেয়ে কয়েক গজ দূর থেকে শট নিয়েছিলেন সোহেল মিয়া। তবে আনিসুর রহমান জিকোর দারুণ তৎপরতায় এ যাত্রা বাঁচিয়ে দেন কিংসকে। অবশ্য তখনো নিরাপদ হয়নি বসুন্ধরা কিংসের সীমানা। তুরায়েভও একটা শট নেওয়ার সুযোগ পান। এবারেও ব্যর্থ হয় রহমতগঞ্জ। ম্যাচের শুরু থেকে বসুন্ধরা কিংসের আক্রমণে খেলাটা একপেশে হবে বলে যারা ধরে নিয়েছিলেন এরপর থেকে তারা নড়েচড়ে বসেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে এরপর চরম উত্তেজনা উপহার দেয় দুটো দল। এগিয়ে যায় কিংস। সমতায় ফিরে রহমতগঞ্জ। এরপর আবার এগিয়ে যায় কিংস। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে উত্তেজনাপূর্ণ একটা ম্যাচই দেখলেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে থাকা কয়েক হাজার দর্শক। ড্যানিয়েল কলিনড্রেস, আখতাম নাজারভ, সুফিল আর বিশ্বনাথদের আক্রমণ খুব একটা সুবিধা করতে পারছিল না। গোল হতে হতেও হচ্ছিল না। ম্যাচের ৪১ মিনিটে আক্ষেপ ঘুচে কিংসের। ডান প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে যায় বসুন্ধরা কিংস। ডি বক্সের ডান দিক থেকে বাতাসে ভাসানো পাস দেন বিশ্বনাথ ঘোষ। অনেকটা লাফিয়ে বাঁকানো হেডে দারুণ এক গোলে দলকে এগিয়ে দেন অধিনায়ক ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় কিংস। দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে শুরুতেই কলিনড্রেস-নাজারভ-সুফিলের দারুণ এক আক্রমণ ছিল রহমতগঞ্জের গোলমুখে। তবে সুফিলের হেড সহজেই লুফে নেন রহমতগঞ্জের গোলরক্ষক রাসেল মাহমুদ লিটন। প্রবল শক্তিধর বসুন্ধরা কিংসের বিপক্ষে ভালো কৌশলই এঁটেছিলেন রহমতগঞ্জের কোচ গোলাম জিলানি। হঠাৎ হঠাৎ কাউন্টার অ্যাটাকে কিংসের ডিফেন্স ভাঙার চেষ্টা করছিল তারা। পাশাপাশি সেট পিস থেকেও সফল হতে চাইছিল। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে শাহেদুলের কর্নার কিক থেকে বল পেয়ে বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডারদের ওপর দিয়ে অনেকটা লাফিয়ে মাথা নিচু করা হেডে দারুণ গোলে রহমতগঞ্জকে সমতায় ফেরান গাম্বিয়ান ফুটবলার মামদো বাহ। সঙ্গে সঙ্গেই চঞ্চল হয়ে ওঠে বসুন্ধরা কিংস। সাঁড়াশি আক্রমণ চালায় তারা। ম্যাচের ৭৪ মিনিটে মাঠে নামেন ইমন। সুফিলকে উঠিয়ে নেন কোচ। খেলার গতি বদলে যায় কিংসের। ঠিক দুই মিনিট পরই দলকে এগিয়ে দেন কিংসের অধিনায়ক ড্যানিয়েল কলিনড্রেস। ৭৬ মিনিটে রহমতগঞ্জের কামারা ব্যাক পাস দেন গোলরক্ষক রাসেলকে। তিনি বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি। পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ড্যানিয়েল কলিনড্রেস বল কেড়ে নিয়ে ধীরে সুস্থে গোল করেন। গোলরক্ষক পাশে দাঁড়িয়ে কেবল চেয়ে চেয়ে দেখেন। তুরায়েভ অবশ্য ডিফেন্ড করতে ছুট দিয়েছিলেন। কিন্তু ততোক্ষণে বল জালে জড়িয়ে যায়। এ গোলের সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় ফেডারেশন কাপে চমক জাগানো রহমতগঞ্জ। গতবার ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর কাছে হেরে ট্রফিবঞ্চিত হয়েছিল কিংস। এবার আর সেই ভুল করল না তারা। নতুন চ্যাম্পিয়নের মুকুট জয় করল দলটা। ২০১২ সালে সর্বশেষ ফেডারেশন কাপে নতুন চ্যাম্পিয়ন দেখেছিল দর্শকরা। সেবার শেখ রাসেল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে হারিয়ে। দীর্ঘদিন পর আবারও নতুন চ্যাম্পিয়ন পেল ফেডারেশন কাপ। অন্যদিকে প্রথমবার ফেডারেশন কাপের ফাইনাল খেলতে এসে খালি হাতেই ঘরে ফিরল রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি।

সর্বশেষ খবর