সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্রচারণায় হেভিওয়েটদের ছড়াছড়ি

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

প্রচারণায় হেভিওয়েটদের ছড়াছড়ি

ঢাকা সিটির ভোটে মেয়র পদকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিয়েছে। ফলে মেয়র ভোটকে ঘিরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির হেভিওয়েট নেতারা মাঠে নামছেন। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করে তরুণ মেয়র প্রার্থীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন দুই দলের হাইপ্রোফাইলের একঝাঁক নেতা। সবার দৃষ্টি এবার এসব তারকা নেতার দিকে। দুই দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাও এ নিয়ে ব্যাপক খুশি। ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমুকে। উত্তর সিটিতে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের আরেক সদস্য সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে। একইভাবে বিএনপিতেও দক্ষিণে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে আছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অন্যদিকে উত্তরের দায়িত্বে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভোটের পরিবেশ ঠিক থাকলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইও হবে নৌকা-ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে। দুই সিটিতে এবার ভোট হবে ইভিএমে। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি নিজ নিজ পোলিং এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দিতে প্রায় ৬০ হাজার নেতা-কর্মীকে প্রস্তুত করছে। দলের হাইকমান্ডকে নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পাশাপাশি কেন্দ্রভিত্তিক কমিটিও গঠন করা হচ্ছে। এরই মধ্যে দুই দলে হেভিওয়েটদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জিং হিসেবে দেখছে ক্ষমতাসীন দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম। সে কারণে দলের হেভিওয়েট নেতাদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা দুটি কমিটি। দলটির সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কেন্দ্রীয় নেতাসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীকে ঘরে ঘরে গিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালাতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের প্রধান সমন্বয়ক দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি। এ ছাড়াও নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, কৃষি সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আ খ ম জাহাঙ্গীর, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানসহ অনেকেই। এ ছাড়াও রয়েছেন দলের সহযোগী সংগঠনের উত্তরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে প্রধান সমন্বয়ক দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু। সদস্য সচিবের দায়িত্বে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। এ ছাড়াও কমিটিতে রয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, সিনিয়র নেতা আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল মতিন খসরু, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রশিদুল আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এস এম কামাল হোসেন, আফজাল হোসেন, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফি প্রমুখ। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের একদিন পরই স্থায়ী কমিটির বৈঠক করে হেভিওয়েটদের দিয়ে কমিটি গঠন করে বিএনপি। লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন। বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে, হারজিত যাই হোক, ভোটের ইস্যু নিয়ে আগামীতে মাঠ গরম করা হবে। সর্বশেষ গত শনিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপিতে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে ভোটকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ভোটের ফলাফল পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের মাঠে সক্রিয় উপস্থিতি থাকার সিদ্ধান্ত হয়। ড. মোশাররফের নেতৃত্বে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে প্রধান সমন্বয়ক হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এ ছাড়া কমিটিতে সমন্বয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, সদস্য সচিব চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সদস্য ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল, বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।

ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের নেতৃত্বে উত্তর সিটি করপোরেশনে প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে। এ ছাড়া সমন্বয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, সদস্য সচিব ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, সদস্য ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি বজলুল বাসিত আঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। সব অঙ্গ সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এই দুই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। প্রয়োজনে কমিটি আরও বড় করা হবে।

এদিকে স্থায়ী কমিটি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে সদস্য সচিব করে একটি লিগ্যাল এইড কমিটি, নির্বাচনে সাংস্কৃতিক কর্মকা  পরিচালনার জন্য চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গাজী মাজহারুল আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি কমিটি, টকশো বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে একটি কমিটি, নির্বাচনে নিরপেক্ষতা ও ইভিএম নিয়ে বিশিষ্টজনদের নিয়ে শতদল নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে একটি কমিটি, কূটনীতিবিদদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি কমিটি এবং পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর