সোমবার, ৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

এস কে সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা

আদালত প্রতিবেদক

দুর্নীতির মামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ পলাতক ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। এ মামলায় দুদকের অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। আসামিদের গ্রেফতার করা গেল কিনা, সে বিষয়ে ২২ জানুয়ারি পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি সিনহা বাদে মামলার অপর আসামিরা হলেন- ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, সাবেক এসই ভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান, একই এলাকার নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্ত্রী রায়। এ ছাড়া মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মো. জিয়া উদ্দিন আহমেদ তদন্ত চলাকালে মৃত্যুবরণ করায় তাকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর আগে গত ১০ জুলাই দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় ঢাকা-১ এ এই মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ভুয়া তথ্য দিয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুটি চলতি হিসাব খোলেন। পরদিনই তারা দুই কোটি করে চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। ব্যাংকে হিসাব খোলা এবং ঋণ আবেদনপত্রে দুজনই তাদের ঠিকানা বাড়ি নম্বর ৫১, সড়ক নম্বর ১২, সেক্টর ১০, উত্তরা আবাসিক এলাকা উল্লেখ করেন। ওই বাড়ি সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ব্যক্তিগত বাড়ি। মামলায় আরও বলা হয়, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণসংক্রান্ত আবেদন দুটি কোনোরকম যাচাই-বাছাই, রেকর্ডপত্র বিশ্লেষণ এবং ব্যাংকের কোনো নিয়ম-নীতি না মেনেই শুধু গ্রাহকের আবেদনের ওপর ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জিয়া উদ্দিন আহমেদসহ শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঋণপ্রস্তাব তৈরি করে হাতে হাতে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যান।

প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটির কর্মকর্তারা যাচাই-বাছাই ছাড়াই অফিস নোট তৈরি করে তাতে স্বাক্ষর দিয়ে সাবেক এমডি এ কে এম শামীমের কাছে নিয়ে যান। ফারমার্স ব্যাংকের ঋণনীতি অনুযায়ী ঋণ দুটির প্রস্তাব অনুমোদন করার ক্ষমতা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের না থাকা সত্ত্বেও তিনি এ-সংক্রান্ত যাচাই-বাছাই বা নির্দেশনা না দিয়ে ওই ঋণপ্রস্তাব দুটির অনুমোদন দেন। ঋণ অনুমোদন হওয়ার পরের দিনই অনুমোদিত চার কোটি টাকার পৃথক দুটি পে-অর্ডার সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে ইস্যু করা হয়। পরে ওই পে-অর্ডার সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার হিসাবে জমা হয়। পরে তিনি বিভিন্ন সময়ে অস্বাভাবিক ক্যাশ ও চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তিকে দিয়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলেন। পরে ঘটনার তদন্ত করে গত ৯ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক পরিচালক বেনজীর আহমেদ ১১ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন  ও পাচার করেছেন, যা দ বিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪(২)(৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

সর্বশেষ খবর