শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মন্ত্রী-এমপিদের কার্যক্রমে আপত্তি ইসির

সিইসিকে ইসি মাহবুব তালুকদারের চিঠি, আজ থেকে প্রচারণা

গোলাম রাব্বানী

মন্ত্রী-এমপিদের কার্যক্রমে আপত্তি ইসির

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কার্যক্রমে মন্ত্রী-এমপিদের অংশগ্রহণের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন অন্যতম নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সিটি নির্বাচনের কর্মকান্ডে এমপিরা যাতে অংশগ্রহণ না করেন, সে বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুই রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্ব ব্যক্তি’ (মন্ত্রী-এমপি) নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিনষ্ট হবে। নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, উত্তর সিটির রিটার্নিং অফিসার আবুল কাসেম, দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেনকে এমপিদের নির্বাচনী কাজে অংশগ্রহণ সম্পর্কিত একটি চিঠি তথা ইউও নোট (আন অফিশিয়াল নোট) দিয়েছেন। এই চিঠি দুপুরে ইসির ডেসপাস শাখার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়েছেন তিনি। চিঠির অনুলিপি নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকেও দেওয়া হয়েছে।

ইউও নোটে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার লিখেছেন, আমি উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের কার্যক্রম ও প্রচারকার্যে সংসদ সদস্যরা অংশগ্রহণ করছেন। এটি সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর লঙ্ঘন। অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ‘নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’ এমতাবস্থায় তারা কীভাবে এই নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন, তা বোধগম্য নয়। তিনি লিখেছেন, ‘সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি’ এই নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করলে সবার জন্য সমান সুযোগ বা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বিনষ্ট হবে। অন্যদিকে, এতে নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। নির্বাচন আচরণ বিধিমালা কঠোরভাবে পরিপালন করা একান্ত আবশ্যক। এমতাবস্থায় ‘আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে এমপিরা যাতে অংশগ্রহণ না করেন, সে বিষয়ে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।’

একই বিষয়ে এর আগে ২০১৮ সালের ২৪ মে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছিলেন, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছিলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণায় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় সংসদ সদস্যরা ভোটদান ছাড়া নিজের এলাকায় না গেলে উন্নয়ন কর্মকান্ড স্থবির হয়ে পড়বে না। বরং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের উপস্থিতিতে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। এদিকে গতকাল দুই সিটি নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষ হয়েছে। চূড়ান্ত প্রার্থীরা আজ প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরই আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামবেন। গতকাল ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে মোট ২৬৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এদের মধ্যে উত্তরে ১২৩ জন ও দক্ষিণে ১৪৫ জন। উত্তরে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মেয়র পদে ছয়জন, সাধারণ কাউন্সিলর ২৫১ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন। দক্ষিণে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩৫ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৮২ জন। 

ইভিএম ও কমিশনের প্রতি জাপার পূর্ণ আস্থা : সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। গতকাল নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।

ভোটের উত্তাপে আজ সরগরম হবে ঢাকা : দুই সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে দল-সমর্থিত একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে অন্যদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনার পাশাপাশি কয়েকজন ‘চাপে’ পড়ে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন বলে গণমাধ্যমকেও জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের তথ্য নির্বাচন কমিশন আজ জানাবে। এদিকে আজ সকালে প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থীদের অনেকে প্রচার কর্মসূচিও জানিয়েছেন। মসজিদ-মন্দিরে ভোটের প্রচার নয় : নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, প্রার্থীদের কোনোভাবে মসজিদ-মন্দিরে ভোটের প্রচার না চালানোর জন্য বলা হয়েছে। আচরণবিধি মেনে কোনোভাবে উপাসনালয়ে ভোট না চাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

ফলাফল না হওয়া পর্যন্ত মাঠে : সিটি নির্বাচনের ভোটযুদ্ধে ফলাফল গণনা না হওয়া পর্যন্ত লড়াইয়ের মাঠে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। গতকাল দুপুরে দলের এক কর্মিসভায় তিনি এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

তাবিথ আউয়াল বলেন, এই সিটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা নির্বাচনের জয়ের রায় হবে না, সারা দেশের মানুষের রায় হবে। পুরো বাংলাদেশের মানুষ ঢাকা শহরে বাস করে। ৩০ লাখ ভোটার অপেক্ষায় আছে ১৬ কোটি মানুষের পক্ষে জনরায় দেওয়ার জন্য। আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। শেষ পর্যন্ত ভোটের লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে।

ধানের শীষে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ স্থায়ী কমিটির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাবিথ বলেন, আপনাদের কথা দিচ্ছি, এই নির্বাচন একটা যুদ্ধ, এই যুদ্ধে আমরা এগিয়ে যাব। যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি আপনাদের সামনে থেকে লড়াই করে যাব। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর আন্দোলন ত্বরান্বিত করে ভোটের অধিকার ও বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত পথে ফিরিয়ে আনতে আমরা প্রস্তুত। ইনশাল্লাহ এই লড়াইয়ে আমরা বিজয়ী হব।

বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য গণমাধ্যমকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হয়। সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের কোনো আস্থা নেই। দিন দিন আশঙ্কা বেড়েই যাচ্ছে। গণমাধ্যমের প্রতি আমাদের অনেক আস্থা ও সম্মান আছে। আগামী দিনে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

রাজধানীর সোনারগাঁও রোডে হক টাওয়ারের তৃতীয় তলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে এই কর্মিসভা হয়। সভাপতির বক্তব্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অভিযোগ করে বলেন, ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রার্থী বিশেষ করে সংরক্ষিত আসনের মহিলা ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি হানা দেওয়া হচ্ছে। কাউকে জোরপূর্বক বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কাউকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, কাউকে বিভিন্নভাবে অন্তরীণ করা হচ্ছে। ভোটের লেভেল প্লেইং ফিল্ড নেই।

ঢাকা উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসানের পরিচালনায় এক কর্মিসভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, যুবদলের সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিউল বারী বাবু, উত্তরের সহসভাপতি বজলুল বাসিত আনজু, ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সর্বশেষ খবর