শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর কীর্তি ছড়াবে বিশ্বে

প্রতিটি দেশেই হবে কোনো না কোনো আয়োজন, দেশের আয়োজনে থাকবেন বিশ্বনেতারা

জুলকার নাইন

বঙ্গবন্ধুর কীর্তি ছড়াবে বিশ্বে

জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে পথ চলতে শেখা বাংলাদেশ তার জনকের কীর্তি ছড়িয়ে দিতে যাচ্ছে সারা বিশে^। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিববর্ষে পৃথিবীজুড়ে নানান আয়োজনে উপস্থাপিত হবে মুজিবাদর্শ। পাশাপাশি করা হবে নতুন বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং। বাংলাদেশ যে অপার সম্ভাবনা ও সুযোগ-সুবিধার এক গতিশীল অর্থনীতির দেশ তাও তুলে ধরবে এসব আয়োজন। বিশে^র প্রায় প্রতিটি দেশেই হবে কোনো না কোনো আয়োজন। সভা-সেমিনার থেকে কনসার্ট, বৃক্ষরোপণ থেকে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সবই আছে পরিকল্পনায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন আয়োজনে আসবেন বিশ^নেতারা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের ভাষায়, ‘আমরা মুজিবাদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই। কারণ বঙ্গবন্ধু শুধু বাংলাদেশের বন্ধুই নন, তিনি সারা বিশ্বের সব শান্তিপ্রিয় মানুষের বন্ধু ছিলেন।’ জানা যায়, বিদেশে থাকা বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনগুলোর মাধ্যমে ২৬১ অনুষ্ঠানের  পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার বা সেন্ট্রাল পার্ক ও লন্ডনের রয়্যাল অ্যালবার্ট হলে কনসার্ট আয়োজনের পরিকল্পনাও  নেওয়া হয়েছে। ইউনেস্কোয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে পুরস্কার প্রবর্তনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিদেশে আরও ৫টি বঙ্গবন্ধু চেয়ার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজে বঙ্গবন্ধু সেন্টার স্থাপন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজন ও অনুষ্ঠানটিতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল, এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। লন্ডনে মাদাম তুসো জাদুঘর ও জাতিসংঘ সদর দফতরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগের পাশাপাশি ব্রিটিশ মিউজিয়ামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবন ও আদর্শভিত্তিক চিত্রকর্ম এবং আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে। নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন মুজিব ফেলোশিপ অ্যান্ড ইন্টার্নশিপ প্রোগ্রাম চালু করবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিদেশ সফর নিয়ে একটি শর্টফিল্ম ও ছবিগুলো নিয়ে একটি স্টিলফিল্ম বা ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন শহর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনারের অডিও, ভিডিও ও স্থিরচিত্রের ভ্রাম্যমাণ প্রদর্শনী। ভারতের ত্রিপুরা, মেঘালয়, আসাম ও শিলংয়ে নাগরিক মিলনমেলার আয়োজন থাকবে। এ ছাড়া এ বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বিশ্বের সব দেশে রোপণ করা হবে ১০০টি করে গাছের চারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্টজনদের নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হবে। আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউটে ‘শেখ মুজিব ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক সেমিনার। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সর্বপ্রথম বাংলায় ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তাই এ বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ প্রদানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য  নিয়ে আলোচনা হবে। দূতাবাসগুলো নিয়মিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী, মেলার আয়োজনের পাশাপাশি বিভিন্ন আনন্দ আয়োজন, সেবা ও উন্নয়নের বিষয়গুলো, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্রের পরিকল্পনা, আন্তর্জাতিক প্রকাশনা, বঙ্গবন্ধুর নামে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ, বাংলা ও ইংরেজিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব জন্মশতবার্ষিকী স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের কাজ করবে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে ইংরেজিতে ছবি, স্কেচ ও আলোকচিত্র নিয়ে কফি টেবিল বই শেখ মুজিব লাইফ অ্যান্ড টাইমস এবং বায়োগ্রাফি অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রকাশ করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের চীন সফর নিয়ে অনুবাদ গ্রন্থ প্রকাশ, বঙ্গবন্ধুর নির্বাচিত ভাষণ ইংরেজি ছাড়াও হিন্দি, উর্দু, ফরাসি, জার্মান, চাইনিজ, আরবি, ফারসি, স্প্যানিশ, রুশ, ইতালিয়ান, কোরিয়ান ও জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীভিত্তিক অ্যালবাম, জীবন ও কর্মভিত্তিক ১০০টি প্রকাশনের লক্ষ্য রয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা ২৫টি দেশের যেসব গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, তা সংগ্রহ ও প্রকাশ করা হবে। ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় আপলোড করা হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে নির্মিত কনটেন্ট। পরিকল্পনা অনুসারে, জন্মশতবার্ষিকীর মূল আয়োজন শুরু হবে ১৭ মার্চ সূর্যোদয়ের ক্ষণ থেকেই। ১৭ মার্চ অনুষ্ঠানের মূল পর্বে বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বরা উপস্থিত থাকবেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন, ইউনেস্কোর সাবেক মহাসচিব ইরিনা বুকোভা ও আরব লিগের সাবেক মহাসচিব আমর মুসা এ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন। আমন্ত্রণের তালিকায় থাকা আন্তর্জাতিক নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেস পার্টির গুরুত্বপূর্ণ নেতা সোনিয়া গান্ধী, বিজেপির নেতা ও ভারতের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী এলকে আদবানি, জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেল, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ প্রমুখ। ১৮ মার্চ জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসবে। সেখানে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আমন্ত্রিত অতিথিরা। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে থাকবেন বিশ^নেতারা।

দূতাবাসগুলোকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি : বিদেশে বাংলাদেশের মিশনপ্রধানদের কাছে চিঠিতে স্বাগতিক দেশের সরকার, সুশীল সমাজ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে মুজিববর্ষ পালনের নির্দেশনা দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, মুজিববর্ষ পালন শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়, বাঙালি জাতি এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একক ভূমিকার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। মুজিববর্ষকে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্য আন্তর্জাতিক পরিম-লে তুলে ধরার একটি বড় সুযোগ হিসেবে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বিশ্বের সব দেশের সরকার, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ এবং জনগণের কাছে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখতে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখতে বৈদেশিক মিশনগুলোকে নির্দেশনা দেন আবদুল মোমেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর