শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দিয়েছিল ব্রিটেনের পুলিশ : ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিশিষ্ট আইনজীবী গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। কিন্তু এই জাতির জন্য বড় ব্যর্থতা আমরা তাঁকে বাঁচাতে পারিনি। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, তাঁকে খুব কম সময়ের মধ্যে হারিয়েছি। গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে গণফোরাম আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস ১০ জানুয়ারি ’৭২, অকথিত ঘটনাবলি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরী, সভাপতিম-লীর সদস্য মোকাব্বির খান এমপি, মহসিন রশীদ ও জগলুল হায়দার, যুগ্ম সম্পাদক মোশতাক আহমেদ প্রমুখ। কামাল হোসেন বলেন, ১৯৭৫ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। দুঃখ লাগে, অন্যান্য দেশের জাতির জনক ২০-৩০ বছর সরকারপ্রধান হিসেবে থাকেন, আমাদের দুর্ভাগ্য যে তাঁকে খুব কম সময়ের মধ্যে হারিয়েছি। আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো তাঁকে বাঁচিয়ে না রাখতে পারা। বঙ্গবন্ধুকে হারানো দেশের অপূরণীয় ক্ষতি। তিনি বলেন, আমরা অসাধারণ এক নেতৃত্ব পেয়েছিলাম। সেই নেতৃত্বের কারণেই আমাদের স্বাধীনতা সম্ভব হয়েছিল। বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তাঁকে (বঙ্গবন্ধু) সবাই শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। বঙ্গবন্ধু যখন দেশে ফিরছিলেন, লন্ডন বিমানবন্দরে তাঁকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে সম্মান জানানো হয়েছিল। ব্রিটেনের পুলিশ বঙ্গবন্ধুকে স্যালুট দিয়ে বলেছিল, আপনার জন্য আমরা প্রার্থনা করেছিলাম। তখন বিশ্বব্যাপী বাঙালি শ্রদ্ধা ও সম্মান অর্জন করেছিল। কামাল হোসেন বলেন, জনগণের অধিকারে কোনো ঘাটতি থাকলে বোঝা যাবে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে। আজকের দিনে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এত সভা, অনুষ্ঠান হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানানোর উপায় হলো তাঁর কথাগুলোকে ষোলো আনা পালন করা। সংসদ সার্বভৌম হিসেবে কাজ করতে পারছে কিনা, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে কিনা, এসবে যদি কোনো ঘাটতি থাকে তাহলে বুঝতে হবে বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করা হচ্ছে। তিনি বলেন, কোনো অন্যায় দেখলে তাঁর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। স্বাধীনতা মানে সব জনগণের, কোনো ব্যক্তির না। এখানে স্বৈরতন্ত্র থাকার কোনো অবকাশ নেই। নির্ভেজাল গণতন্ত্র থাকবে। প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, বর্তমান স্বৈরতান্ত্রিক দেশ বঙ্গবন্ধুর দেওয়া রাষ্ট্র নয়। সংবিধান লঙ্ঘন করে মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে। সরকার বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করছে। বঙ্গবন্ধু গণতন্ত্র চেয়েছিলেন। অথচ আমাদের এখানে এখন গণতন্ত্র নেই। স্বাধীনতার পরিবর্তে আমরা স্বৈরতন্ত্রকে মেনে নিয়েছি। গণতন্ত্র রক্ষার জন্য মাঝে মাঝে ঝুঁকি নিতে হয়, আমাদের ঝুঁকি নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করে জনগণকে দেশের মালিকানা হিসেবে রেখে গেছেন। তাঁর স্বাক্ষরিত দলিলে লেখা আছেÑ এই দেশের মালিক জনগণ। আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো অসাধারণ নেতৃত্ব পেয়েছিলাম বলেই আজ স্বাধীনতা পেয়েছি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সেই দলিল বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘরে রাখা আছে। প্রত্যেক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এই দলিল দেখানো উচিত। এই স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ যদি গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, তা হলে বঙ্গবন্ধুর কথা অমান্য করা হবে।

সর্বশেষ খবর