বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দিশাহারা বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ শেয়ারবাজারে

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি সংসদে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দিশাহারা বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ শেয়ারবাজারে

কয়েকদিনের দরপতন থেকে বের হয়ে কিছুটা উত্থানে ফিরেছে দেশের শেয়ারবাজার। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বেড়েছে ৩১ পয়েন্ট। সূচক বাড়লেও কমেছে টাকার পরিমাণে লেনদেন। সূচক বেড়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসইর) লেনদেনে। দরপতনে ক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ মানববন্ধন করেছে। জানা গেছে, ডিএসইতে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিন মাত্র ১৫ পয়েন্ট উত্থান হয় সূচকের। পরের দুই দিন ভয়াবহ ধসের কবলে পড়ে ১৭৬ পয়েন্ট কমে যায়। গত আট দিনের লেনদেনে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্সের ৪১১ পয়েন্টের পতন হয়। এই ধসে ডিএসইর তালিকাভুক্ত প্রায় সব কোম্পানির শেয়ার দর কমে যায়। ধসের মধ্যে গতকাল ৩১ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৬৮ পয়েন্টে স্থির হয়েছে। ডিএসইতে সপ্তাহের চতুর্থ দিনের লেনদেন শুরু বড় উত্থান দিয়ে। শুরুতে সূচক ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষদিকে এসে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। দিনভর ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২১০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৯৪টির। আর দাম অপরিবর্তিত ছিল ৪৯টির। টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ২৪২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আগের দিনের চেয়ে লেনদেন কমেছে ১৯ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে  বেশি লেনদেন হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের। দ্বিতীয় স্থানে ছিল স্কয়ার ফার্মা। লেনদেনের শীর্ষ তালিকায় আরও ছিল লাফার্জহোলসিম, এবিএন টেলিকম, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক, খুলনা পাওয়ার, নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং, জিনেক্স ইনফোসিস, এসএস স্টিল এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৯৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৩৯১ পয়েন্টে। সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দাম বেড়েছে ১২১টির, কমেছে ৭৮টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির। দরপতনের প্রতিবাদ জানাতে মতিঝিলে অবস্থিত ডিএসইর কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন বিনিয়োগকারীরা। এ সময় তারা বিএসইসির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেন ও বিএসইসি পুনর্গঠনের দাবি জানান। নয় দফা দাবি জানিয়ে দ্রুত শেয়ারবাজারকে ক্যাসিনো বাজারে পরিণত করা কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়। বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। বিক্ষোভকারীরা শেয়ারবাজারের ভয়াবহ ধসের জন্য অর্থমন্ত্রীকে দায়ী করে স্লোগান দেন। এদিকে গতকাল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কার্যালয়ে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসইসির কমিশনার স্বপন কুমার বালার সভাপতিত্বে বৈঠকে বিএমবিএ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) এবং শীর্ষ  ব্রোকারেজ হাউসের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সভায় বাজার স্থিতিশীলতায় করণীয় নিয়ে নানা বিষয় আলোচনা হয়।

শেয়ারবাজারের অচল অবস্থা দূর করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলেন কাজী ফিরোজ : বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সমালোচনা করে বলেছেন, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন জগদল পাথরের মতো বসে আছে। তারা পচা কোম্পানি শেয়ারবাজারে নিয়ে আসছে। বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে। বাজার থেকে মূলধন ৯৫ হাজার কোটি টাকা নেই। তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি করেছিলাম। আজ পর্যন্ত কমিশন করা হয়নি। একটা লোককেও শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।

গতকাল জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ফিরোজ রশীদ বলেন, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে পড়েছেন। শেয়ারবাজার একেবারে শুয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী যদি হস্তক্ষেপ করেন তাহলে শেয়ারবাজার ফিরে আসতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, দেশ চলে তিন নীতিতে- রাজনীতি, অর্থনীতি এবং দুর্নীতিতে। দুর্বল কোম্পানি শেয়ারবাজারে লিস্টিং দেওয়ার কারণে এরকম ধস। কারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

তিনি বলেন, প্রশান্ত হালদার নামে একটা লোক নন ব্যাংকিং কিছু প্রতিষ্ঠান করে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে গেছেন। অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার কেন এ রকম হলো। অর্থমন্ত্রী অত্যন্ত সুদক্ষ। শেয়ারবাজার নিয়ে চিন্তাও করেন। ওনার একটা গভীর চিন্তাভাবনাও আছে। এই মার্কেটে কোথায় কী হচ্ছে এর সম্যক ধারণা ওনার আছে। কারণগুলো আমাদের সবার জানা। নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী যদি হস্তক্ষেপ করেন তাহলে শেয়ার মার্কেট আবার ফিরে আসতে পারে। নইলে এখান থেকে ফিরে আসার কোনো উপায় দেখি না।

বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবৎ পুঁজিবাজারের জন্য মানুষ রাস্তায় শুয়ে পড়েছে, তাদের আজ কাম নেই, বিপর্যস্ত লাখ লাখ পরিবার সম্পূর্ণরূপে ধূলায় মিশে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের কোনো পদক্ষেপ বা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দৃশ্যমান নেই। অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগকারীদের রক্ষার জন্য কী ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন একটু জানাবেন।

সর্বশেষ খবর