বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দুর্নীতির অভিযোগে ইমনকে দুদকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুর্নীতির অভিযোগে ইমনকে দুদকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ

দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের সাবেক পরিচালক, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এনামুল কবির ইমনকে টানা তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। দুদকের তলবে গতকাল সকাল ৯টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে স্ত্রীসহ হাজির হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে এ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের উপপরিচালক মো. নূরুল হুদা। দুর্নীতি করে জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের শেয়ারের মালিক হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে দুদক কার্যালয়ে প্রবেশের সময় সেখানে সংস্থাটির দায়িত্বরতদের কাছে নিজের জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি গোপন করেন। দুদকসূত্র জানান, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ইমনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কমিশন তার কাছে কিছু কাগজপত্র চেয়েছে। কাগজপত্র দাখিলে সময় নিয়েছেন ইমন। এই সময়েও তার অভিযোগের বিষয়ে দুদকের অন্যান্য প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে জানা গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুপুর সোয়া ১২টায় বের হয়ে চলে যাওয়ার সময় ইমনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তদবির বাণিজ্য ও সরকারি বিভিন্ন কাজে কমিশন নেওয়ার। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে নেই। আমি খুবই আত্মবিশ্বাসী। আমি রাজনীতি করি। আর রাজনীতি করতে গেলে এ ধরনের অনেক অভিযোগ আসতে পারে। রাজনৈতিক অঙ্গনে আমি একজন সৎ রাজনীতিবিদের ছেলে। আমি তরুণ রাজনীতিবিদ হিসেবে আত্মবিশ্বাসী যে আমি কোনো ধরনের অসাধু কাজ করিনি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তার কোনোটিরই সত্যতা পাইনি। আর আমি আমার বক্তব্য দিয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওনারা (দুদক) কী বিবেচনা করেন তা আপনারা দেখবেন।’ জাতীয় পাওয়ার গ্রিডের পরিচালক থাকাকালে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুদকের নোটিসে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নেই। আর পাওয়ার গ্রিডে আমার কোনো শেয়ার নেই। আমি সেখানে ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর ছিলাম। নোটিসে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগই নেই।’

গত ১০ বছরে অনেক সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ইমন বলেন, ‘আমি ব্যারিস্টার, আমার স্ত্রী ব্যারিস্টার। আমরা অনেকদিন ধরে কাজ করছি। সম্পদের বিষয়টি দেখা যাক, কী হয়, আপনারা তো দেখবেনই। যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো আমার কাছে আমলযোগ্য মনে হয়নি। এগুলো ষড়যন্ত্র ছাড়া কিছু না।’ এর আগে ৬ জানুয়ারি দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে পৃথক চিঠি পাঠানো হয়। ইমনের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান কর্মকর্তা হিসেবে সংস্থাটির উপপরিচালক মো. নূরুল হুদা এ চিঠি পাঠিয়েছিলেন। দুদকের অভ্যর্থনা কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, ইমন যখন আসেন তখন তিনি নিজেকে ব্যারিস্টার হিসেবে পরিচয় দেন। নোটিস পেয়ে আসার বিষয়টি গোপন রেখে জানান, তার ক্লায়েন্টের অভিযোগের বিষয়ে তিনি উপপরিচালক মো. নূরুল হুদার সঙ্গে কথা বলবেন। তবে বের হওয়ার পর সাংবাদিকদের কাছে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি তিনি স্বীকার করেন। ইমনের কাছে পাঠানো দুদকের চিঠিতে বলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে তদবির বাণিজ্য, সরকারি অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন অভিযোগের সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে বক্তব্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে গতকাল সকাল ১০টায় তাকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়। অন্যথায় অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য নেই বলে দুদক মনে করবে। তাকে নিজের ও স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের (যদি থাকে) ফটোকপি সঙ্গে আনতে বলা হয়। একই সঙ্গে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো দুদকের চিঠিতে ইমনের বিভিন্ন দুর্নীতির তথ্য উল্লেখ করা হয়। ওই চিঠিতে সুনামগঞ্জ পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির জন্য বিদ্যুৎ সাবস্টেশন নির্মাণ প্রকল্পের অনুকূলে আরজ আলীর জমির হুকুমদখলের বিষয়েও প্রয়োজনীয় নথিপত্র চাওয়া হয়। এ বিষয়ে আরও কোনো রেকর্ড ও নথি থাকলে তাও দিতে অনুরোধ করা হয়।

সর্বশেষ খবর