শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সগিরা মোর্শেদ হত্যায় চার জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

খুনি মারুফই ফাঁস করলেন সব

নিজস্ব প্রতিবেদক

আলোচিত সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম মো. জসিমের আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম। চার্জশিটে সগিরা মোর্শেদের      ভাশুর ডা. হাসান আলী চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্যরা হলেন ডা. হাসান আলী চৌধুরীর স্ত্রী সায়েদাতুল মাহমুদা শাহীন, শ্যালক আনাস মাহমুদ রেজওয়ান ও তার রোগী মারুফ রেজা। চার্জশিটে আসামিদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ডের সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এরা প্রত্যেকে কারাগারে আটক আছেন। পিবিআই তাদের তদন্তে খুঁজে বের করে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সেই রিকশাচালককে। এরপর তারা শনাক্ত করে আসামিদের। একে একে বেরিয়ে আসে খুনিরা। ৩০ বছর পর চাঞ্চল্যকর সগিরা মোর্শেদ হত্যার রহস্য বেরিয়ে এলে তোলপাড় শুরু হয় সব মহলে। জানা যায় প্রকৃত সত্য যে, ঘটনাটি ছিনতাইয়ের ছিল না, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকান্ড। তবে হত্যারহস্য ফাঁস করেন সেই মারুফ রেজাই। তিনি বাদী-বিবাদী কোনো পক্ষেই ছিলেন না। অথচ তার আবেদনেই বারবার থেমে থাকে মামলার তদন্ত কার্যক্রম। ওই সময় প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুজনের কথা বললেও জলিল মিন্টু ওরফে মন্টু নামের একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। নেওয়া হয় সাতজনের সাক্ষ্য। বাদীপক্ষের সাক্ষ্যে আসামি মন্টু ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজার নাম চলে আসে।

পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২৩ মে বিচারিক আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয়। এ আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজা হাই কোর্টে আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাই কোর্ট রুল দিয়ে অধিকতর তদন্তের আদেশ স্থগিত করে। পরের বছর ২৭ আগস্ট অন্য এক আদেশে হাই কোর্ট ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ায়। এতে থমকে যায় মামলার কার্যক্রম। প্রায় ২৮ বছর পর গত বছর ২৬ জুন স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে ওই মামলার অধিকতর তদন্ত শেষ করতে পিবিআইকে নির্দেশ দেয়।

পিবিআইর ১৮০ দিনের তদন্তে বেরিয়ে আসে, পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডির পিবিআইর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, হাই কোর্টের নির্দেশে গত বছর ১৭ আগস্ট মামলাটির তদন্ত শুরু করে পিবিআই। তদন্ত শেষে জানা যায়, ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন ডা. হাসান আলী চৌধুরীর শ্যালক আনাস মাহমুদ রেজওয়ান ও তার রোগী মারুফ রেজা। বনজ কুমার মজুমদার জানান, মামলার সব কাজ শেষে ১৩০৯ পৃষ্ঠার চার্জশিটের ফাইল প্রস্তুত করা হয়েছে। সগিরা মোর্শেদ (৩৪) ছিলেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক। তাকে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার প্রত্যেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ওই ঘটনায় আটজন সাক্ষ্যও দিয়েছেন। মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামতের মধ্যে রিকশা, রিভলভার, মোটরসাইকেল ও সগিরা মোর্শেদের রক্তাক্ত কাপড়-চোপড়ের কোনো কিছুই তারা সংগ্রহ করতে পারেননি।

সর্বশেষ খবর