শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্যাসিনো ব্রাদার্সের আরও টাকা বাড়ির সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্যাসিনো কারবারি দুই ভাই এনামুল হক এনু ও রূপন ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে আরও টাকা-বাড়ির সন্ধান মিলেছে। রিমান্ডে তাদের গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়ার্ডের পরিদর্শক মেহেদী মাসুদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সূত্রাপুর থানার অর্থপাচার মামলার আসামি গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী  লীগের সহসাধারণ সম্পাদক রূপন ভূঁঁইয়া এবং গেন্ডারিয়া থানার অর্থপাচারের আরেক মামলায় গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিন করে এবং ও সহযোগী শেখ সানি মোস্তফাকে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী। এর আগে সোমবার ভোরে ঢাকার কেরানীগঞ্জ শুভাঢ্যা শ্যামলছায়া কমপ্লেক্স নামে ১০ তলা একটি ভবনের ৫ তলা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, এই দুই ভাই পুরান ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ডাকাত শহীদ একসময় যেসব খাত থেকে চাঁদা তুলত, পরে সেসব খাত তারা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর গেন্ডারিয়ায় এনু-রূপনের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল অর্থ ও স্বর্ণ জব্দ করেছিল র‌্যাব। র‌্যাবের এ অভিযানের পরপরই গা-ঢাকা দেন দুই ভাই। প্রথম তিন দিন ঢাকাতেই পালিয়ে ছিলেন তারা। সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম জানান, দুই ভাইয়ের নামে ২২টি বাড়ি ও জমি এবং পাঁচটি যানবাহনের সন্ধান মিলেছে। আরও টাকা-বাড়ির খোঁজ বের করতে তারা বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছেন।  সিআইডি সূত্র জানায়, বিদেশে পালাতে এক দালালের সঙ্গে তাদের ৩০ হাজার টাকার চুক্তি হয়েছিল। শামীম পরিচয়ে পাসপোর্ট বানাতে চেয়েছিলেন রূপন। তবে এনু তার নকল নাম ঠিক করেননি। যে দালালের সঙ্গে তারা চুক্তি করেছিলেন সেই দালালকে শনাক্তের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জে পালিয়ে থাকাবস্থায় বিশ্বস্ত কর্মচারী মোস্তফা ছাড়াও আরও দুই ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি তাদের মোবাইলে কথা বলতেন। তাদের মাধ্যমে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন দুই ভাই। ওই দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করলে এনু-রূপনের সরিয়ে রাখা সিন্দুক ভর্তি আরও কিছু টাকার সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। যদিও তারা তদন্ত কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে দাবি করেছেন, এত বাড়ি, টাকা, গাড়ি ও স্বর্ণালঙ্কারের নেপথ্যে তাদের লেদ ও লোহার শিটের ব্যবসা। এমনকি তাদের পূর্বপুরুষ জমিদার ছিল বলে দাবি করেছেন। জানা যায়, এনু-রূপন সাত ভাই ও এক বোন। তার বাবা একসময় নিয়মিত আজাদ ক্লাবে জুয়া খেলতে যেতেন। দুজনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। আগে তারা পুরান ঢাকায় লেদ মেশিনের দোকানে কাজ করতেন। এর পর শুরু করেন লোহার শিটের ব্যবসা। তারা দুই ভাই বাবার সঙ্গে প্রায়ই আজাদ ক্লাবে যেতেন। পরে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের সঙ্গে তারা জড়ান। প্রথমে ওই ক্লাব ভাড়া নিয়ে ওয়ান-টেন খেলার ব্যবস্থা করেন এনু-রূপন। এর পর তারা ক্যাসিনো কারবারে নামেন। বছর তিনেক আগে পরিচয় হয় নেপালি নাগরিক হ্যারির সঙ্গে। হ্যারি তাদের হয়ে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে ক্যাসিনো গেমের আসর বসান। ক্যাসিনোর সরঞ্জাম হ্যারির মাধ্যমে ক্লাবে ঢোকে। লাভের নির্দিষ্ট অঙ্ক তারা পেতেন। প্রতিদিন রাত ১০টার দিকে দুই ভাই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে যেতেন। ওই সময় হ্যারির কাছ থেকে লাভ-লোকসানের হিসাব নিতেন তারা। ক্যাসিনো চালানো শুরু করার পর প্রতিদিন তাদের বড় অঙ্কের টাকা লাভ থাকত। মূলত বাবার হাত ধরে বড় ধরনের জুয়াড়ি হয়ে ওঠেন তারা। এ জুয়ার মাধ্যমে বদলে ফেলেন নিজেদের জীবন। ক্যাসিনোর টাকায় বাড়ি কেনা দুই ভাইয়ের নেশা ছিল। ২০০০ সালের পর থেকে বাড়ি কেনা শুরু করে তারা। তাদের বাড়িগুলোর বেশিরভাগই সোনালি রং করা।

সর্বশেষ খবর