রবিবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রোহিঙ্গা ইস্যু নেই বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে

প্রায় ৩০টি উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার সমন্বয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে ২৯ জানুয়ারি

মানিক মুনতাসির

বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগীদের সর্বোচ্চ ফোরাম বিডিএফের বৈঠক আগামী ২৯ জানুয়ারি। এই আয়োজনে সাধারণত উন্নয়ন পরিকল্পনা, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়নের প্রতিবন্ধকতা এবং তা থেকে উত্তরণের সম্ভাব্য পথসহ বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়।

এবারে আয়োজনের আলোচ্যসূচিতে বাংলাদেশের উন্নয়ন, প্রতিবন্ধকতা ও সম্ভাবনার বিভিন্ন ইস্যু ঠিক করা হলেও স্থান পায়নি রোহিঙ্গা ইস্যু। অথচ সর্বশেষ গত অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভায়ও রোহিঙ্গা ইস্যুর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিলে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অনুষ্ঠিত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বার্ষিক সভায় তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা ও করণীয় বিষয়ে জোরালো বক্তব্য রাখেন। 

জানা গেছে, বিশ্ব পরিম-লে রোহিঙ্গা ইস্যু তুলে ধরার পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকভাবে চাপে পড়ে মিয়ানমার। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, ইউএসএইড, ইউকেএইড, ইউনিসেফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থা এ সমস্যার সমাধানে এগিয়ে আসে। রোহিঙ্গাদের জন্য বৈশ্বিক তহবিল গঠনের প্রস্তাবও ওঠে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর আর্থিকসহ নানা ধরনের সহায়তায় এগিয়ে আসে।

বিডিএফ বৈঠকের আয়োজক মূলত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। এবারের বৈঠকে প্রায় ৩০টি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ অংশ নিতে যাচ্ছে। অন্যান্য বার এই বৈঠক দুই দিনব্যাপী করা হলেও এবার তা করা হচ্ছে এক দিনের। ইতিমধ্যে এই বৈঠকের সম্ভাব্য আলোচ্যসূচির খসড়া প্রণয়ন করেছে ইআরডি। এতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা ও এর অর্থায়ন, গ্রামীণ রূপান্তরের মাধ্যমে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করা, টেকসই নগরায়ণ, সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা ও মানসম্মত শিক্ষা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, সৃজনশীল অর্থায়ন ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বন এবং জ্বালানি নিরাপত্তা। কিন্তু এতে রোহিঙ্গা ইস্যু স্থান পায়নি। এর আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালের ১৭-১৮ জানুয়ারি বিডিএফ  বৈঠক হয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইআরডি সচিব মনোয়ার আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখনো তো আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত করা হয়নি। পরবর্তীতেও এটা যুক্ত হতে পারে। তাতে কোনো সমস্যা নেই। এবারের বৈঠকে মূল প্রবন্ধ হিসেবে অষ্টম-পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তুলে ধরা হবে। এটি আগামী ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সালের জন্য  তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে এর খসড়া তৈরি করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ। সাধারণত দুই বছর পরপর দুই দিনব্যাপী এ বৈঠক হয়ে এলেও এবার বৈঠক হবে এক দিন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিডিএফ বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু স্থান পাওয়া উচিত। সেটা থাকলে ভালো হতো। তবে এটা যেহেতু উন্নয়ন ও অর্থায়ন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম, আর রোহিঙ্গা ইস্যুটা বেশ জটিল বাংলাদেশের জন্য, তাই এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।

ইরআরডি সূত্র জানায়, এবারের বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য কী ধরনের অর্থনৈতিক  কৌশল নিচ্ছে তা উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে তুলে ধরা হবে। ফলে নতুন কী কী ক্ষেত্রে, কী ধরনের বিনিয়োগ ও সহায়তা প্রয়োজন এবং উন্নয়ন সহযোগীরা কীভাবে কোন ধরনের সহায়তা দিতে পারে সেসব বিষয় উঠে আসবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের গতি বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ ১৫টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারকে পরিকল্পনা তৈরিতে দিকনির্দেশক হিসেবে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূর করাই মূল উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বাইরে থাকছে শহরের সুবিধা গ্রামে পৌঁছানোর পরিকল্পনা। যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে সেগুলোর অন্যতম হলো জিডিপি প্রবৃদ্ধির কাঠামোগত রূপান্তর করা। এ ছাড়া আর্থিক খাতে সংস্কার, সরকারি সম্পদ বৃদ্ধি জোরদারকরণ, অবকাঠামোগত চ্যালেঞ্জ চিহ্নিতকরণ এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর