বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

রাজনৈতিক পরিচয় বড় নয়, গুরুত্বপূর্ণ মেধা যোগ্যতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজনৈতিক পরিচয় বড় নয়, গুরুত্বপূর্ণ মেধা যোগ্যতা

অধ্যাপক রেহমান সোবহান

দেশবরেণ্য অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেছেন, ‘দেশে একটা প্রতিযোগিতামূলক পরিস্থিতি রাখতে হবে। যে প্রতিযোগিতার ভিতরে মানুষ তার মেধা ও উদ্যোগ, তার শ্রমের স্বীকৃতি পাবেন। তার রাজনৈতিক পরিচয়টা এখানে বড় হবে না, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে ব্যক্তিগত যোগ্যতা। ফলে রাষ্ট্র ও সমাজ অনেক বেশি উপকৃত হবে, এমন একটা ধারণার ভিতরে যদি আমরা যাই।’

গতকাল রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘প্রান্তিক যুবসমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিষেবার ভূমিকা’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্যরে সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক চন্নু এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক এমপি, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহান এমপি। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের পরিচালক মুনির হোসেন খান, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার, ইউসেফ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তাহসিনা আহমেদ, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সভাপতি সারাহ কামাল, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর প্রমুখ। সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, প্রবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে যে সামষ্টিক অর্থনীতির কথা বলি, সেটার বদলে আমরা কত কর্মসংস্থান করতে পারলাম- এটি লক্ষ রেখে বাংলাদেশে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক একটা যুব কর্মসংস্থান প্রকল্প নেওয়া যায় কিনা তা দেখা উচিত। মুজিবুল হক চন্নু বলেন, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। অনেক দুর্নীতি, অনাচার ও বৈষম্য আছে। তবু বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে। অনেক মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত গাইতে চায় না। এই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। কওমি মাদ্রাসায় কোনো আধুনিক বিষয় আনাই যাচ্ছে না। নাহিম রাজ্জাক বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে অনেক কিছুতে বেশি এগিয়ে গেছি আমরা। তিন কোটি যুবকের কর্মসংস্থান তৈরি করতে ১০০ অর্থনৈতিক জোন বাস্তবায়নে কাজ চলছে। তবে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। কারণ একজন শিক্ষার্থী এমএ পাস করেও একটি আবেদনপত্র লিখতে পারেন না। এর পরও বলব, আমাদের যুবরা সৃজনশীল।’  ব্যারিস্টার রুমিন ফারহান বলেন, সরকারি চাকরিতে রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্ব পাচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় দুর্দান্ত ফল পেলেও ২৮ শতাংশ বেকার। বাংলাদেশ সরকার যে প্রবৃদ্ধির কথা বলছে, তাতে চ্যালেঞ্জ করছে সিপিডি, সানেম ও বিআইডিএসের মতো সংগঠনগুলো। বাজেটে জিডিপি অনুপাতে শিক্ষার বরাদ্দ কমছে। ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, শিক্ষিত যুবরা চাকরি পাচ্ছে না। আরেক দিকে বিদেশিদের এনে চাকরি দিচ্ছে বাংলাদেশ। এখন শ্রমবাজারকে উপযোগী করে শ্রমশক্তি তৈরি করা দরকার। শিক্ষার জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। ড. খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের চলমান গতিপ্রকৃতিতে অর্ধেক কর্মসংস্থান হবে না। নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে নতুন করে তিন কোটি যুব জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে সরকার। কিন্তু সরকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতিপ্রকৃতি যেভাবে চলছে, তাতে ঊর্ধ্বে ১ কোটি ৪৯ লাখ, অর্থাৎ অর্ধেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আর বেকার থাকবে অর্ধেক যুবক। দেশে এখন ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী সুবিধাবঞ্চিত ২ কোটি যুবক রয়েছে, যা মোট শ্রমগোষ্ঠীর প্রায় ৩০ শতাংশ। এ যুবকরা চার ধরনের চ্যালেঞ্জে রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- জীবন ও জীবিকা, শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থান চ্যালেঞ্জ। তিনি তার প্রতিবেদনে বলেন, গবেষণাটি চালানো হয়েছে চারটি জনগোষ্ঠীর ওপর। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাঁওয়ের সমতল আদিবাসী, শহরের বস্তিবাসী, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী এবং সিলেট শহরে থাকা জনগোষ্ঠী। গবেষণা পরিচালনা করা হয় ৩৩৩ জনের ওপর।

সর্বশেষ খবর