শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের যৌথ সভায় প্রধানমন্ত্রী

মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমাদের মূল লক্ষ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক ও গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি

মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আমাদের মূল লক্ষ্য

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার পথে হেলিকপ্টার থেকে দৃশ্যমান পদ্মা সেতুর ভিডিও করছেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘৭৫-এ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ২১ বছর পর আমরা ক্ষমতায় এসে জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।’ গতকাল বিকালে টুঙ্গিপাড়ায় হোয়াইট হাউসে আওয়ামী লীগের যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সফর শুরু হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপনে আমরা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিভিন্ন

প্রতিষ্ঠানও উদ্যোগ নিয়েছে। মুজিববর্ষ ঘিরে মানুষের উৎসাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মাধ্যমে হত্যাকারীরা তাঁর নাম মুছে দিয়েছিল। আজকে সেই নামটি আবার উচ্চারিত হচ্ছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাম আর কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারবে না। কারণ জাতির পিতা সারাটি জীবন সংগ্রাম করেছেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি কাজ করেছেন। এ দেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের জন্য তিনি কাজ করেছেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২৪ বছরের সংগ্রাম ও নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছে, ২ লাখ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে। তাদের আত্মত্যাগকে অর্থবহ করে তুলতে হবে।’ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে জাতির পিতার কন্যা বলেন, ‘এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে। আপনারা জানেন, এরই মধ্যে দেশের দারিদ্র্যহার ২০ দশমিক ৫ ভাগ নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা মনে করি, আজকে যে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি অর্থনৈতিকভাবে এবং সেসব অর্জনের সুফল একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের গ্রামের মানুষ যেন পায় সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। বাংলাদেশকে আমরা জাতির পিতার ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব- এটিই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনী কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকায় দলের কয়েকজন নেতা জাতির পিতার সমাধিতে টুঙ্গিপাড়া আসতে পারেননি তার কারণও জানান দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সিটি নির্বাচনে যারা কাজ করছেন, তাদের আসার দরকার নেই। যারা বাকি রইলেন তাদের নিয়ে আবার আসব। পরে নোটিস দিয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভা করা হবে। আজকে যেহেতু বেশি সময় নেই, আমাকে হয়তো অল্প সময়ের মধ্যে রওনা দিতে হবে।’ এরপর উপস্থিত সব নেতার প্রতি ধন্যবাদ ও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন শেখ হাসিনা। হোয়াইট হাউস থেকে সাড়ে ৩টার দিকে বের হয়ে হেলিকাপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী। এর আগে আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সেখানে দোয়া-মোনাজাত করা হয়। এরপর হোয়াইট হাউসে যৌথ সভায় অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বেলা ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান। সেখানে জাতির পিতার সমাধির পাশে বসে কোরআন তিলাওয়াত করেন তিনি। টুঙ্গিপাড়া এলে প্রতিবারই বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের পাশে বসে কোরআন তিলাওয়াত করে দোয়া করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। দুপুর ১টায় জাতির পিতার সমাধিসৌধের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দলীয় সভানেত্রী হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিয়ে শ্রদার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে ফাতিহা পাঠ ও বিশেষ মোনাজাতে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নিহত সদস্যদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়। এ সময় সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। জুমার নামাজের পর আওয়ামী লীগের নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির যৌথ সভা শুরু হয়।

ফেরি ভাড়া দিয়ে নদী পার : সাধারণ যাত্রীদের মতোই ফেরি ভাড়া দিয়ে নদী পার হয়েছে আওয়ামী লীগের কার্যনিবাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদ সদস্যদের গাড়িবহর। গাড়িবহরে এনা পরিবহনের ছয়টি গাড়ি ছিল। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, মাওয়ার শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ঘাটে সাধারণ গাড়ির মতো নির্ধারিত ভাড়া দিয়ে নদী পার হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের বহনকারী ছয়টি বাস। প্রতিটি বাসের জন্য ২ হাজার ১০ টাকা ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এর আগে সকালে জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণ থেকে জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশে যাত্রা করে গাড়িবহর। গতকাল রাতেই ঢাকায় ফেরেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

পদ্মা সেতু নিজের মোবাইলের ক্যামেরায় ধারণ করলেন প্রধানমন্ত্রী : সব প্রতিকূলতাকে জয় করে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর ৩ হাজার ৩০০ মিটার আজ দৃশ্যমান। সেই স্বপ্ন-পূরণের অভিযাত্রাকে হেলিকপ্টার থেকে মোবাইল ক্যামেরায় ধারণ করেছেন পদ্মা সেতুর রূপকার বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের নবনির্বাচিত সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিকালে ঢাকা ফেরার পথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের চিত্র নিজের মোবাইলে ধারণ করেন তিনি। ভিডিওটি শেয়ার করেন প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন। সঙ্গে সঙ্গে ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়।

সর্বশেষ খবর