শনিবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সি টি ভো টে র প্র চা র ণা

দুই জোটের শরিকদের গা-ছাড়া ভাব

১৪ দলের বৈঠক হলেও মাঠে উপস্থিতি কম, বিএনপি জোটে ২০ দল নিষ্ক্রিয়, সক্রিয় ঐক্যফ্রন্ট

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচনে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের ঘাম ঝরানো প্রচার চলছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও রাজপথের বিরোধী দল সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছে। কিন্তু ভোটের মাঠে দুই দলের শরিক দলগুলো এখনো গা-ছাড়াভাবে চলছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হলেও গণসংযোগে কম নেতা-কর্মীকেই দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি  নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট এখনো গণসংযোগের দিক থেকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় রয়েছে। জোটের দু-একজন নেতাকে অবশ্য মাঝেমধ্যে দেখা গেছে ধানের শীষের প্রচারে। বিএনপির সঙ্গে টানাপড়েন সম্পর্কের কারণে তারা মাঠে যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে মাঠে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েক নেতাকে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের প্রধান শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশের জাসদ, ন্যাপ, জাতীয় পার্টি-জেপি, সাম্যবাদী দল আনুষ্ঠানিকভাবে সিটি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসকে সমর্থন জানিয়েছে। জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত প্রায় প্রতিটি বর্ধিত ও মতবিনিময় সভায় শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিও থাকছে। তবে মাঠপর্যায়ে তেমন দেখা মিলছে না। যদিও জোটের মুখপাত্র নাসিম দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী করতে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, শরিক জোটের হ্যাভিওয়েট নেতারা প্রায় সবাই এমপি। নির্বাচন কমিশনের বিধি মোতাবেক তারা মাঠে নামতে পারছেন না। ফলে অন্য যারা আছেন, তাদের সঙ্গে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্র্মীদের তেমন সখ্য নেই। সে কারণে ‘মিডিয়ায় প্রচার’ পেতেই বর্ধিত সভা ও মতবিনিময়গুলোতে সরব উপস্থিতি দেখা যায়।

জাতীয় পার্টি-জেপির মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা সঠিকভাবেই দায়িত্ব পালন করছি। মিরপুর ও উত্তরায় কয়েকটি এলাকায় আমাদের দলের নেতা-কর্মীরাই টিমের লিড দিচ্ছেন। আমরা প্রচারণায় নেইÑ বিষয়টি এমন নয়। 

ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, আমরা দলগত ও জোটগতভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। নিজেই গুলশান-বনানী, মোহাম্মদপুর, নিউমার্কেট এলাকায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষে মাঠে প্রচারণা চালিয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি। মাঠের চেয়ে ১৪ দলের যৌথসভা ও মতবিনিময়ে জোটের নেতাদের উপস্থিতি বেশি থাকে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

‘মাঠে সক্রিয় নয়’ জানিয়ে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব রেজাউল করিম চাঁদপুরী বলেন, শরিক জোটের মধ্যে কেবল আমরাই (তরীকত ফেডারেশন) আলাদা টিম গঠন করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছি। দুই সিটিতে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন সমন্বয়ক কাজ করছেন। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডেও টিম রয়েছে। শরিক জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, সিটি নির্বাচনে যেভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামা প্রয়োজন ছিল সেভাবে কেউ নামেনি। কারণ জোটের নেতাদের তেমন গুরুত্ব নেই মেয়র প্রার্থীদের কাছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে ২০-দলীয় জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপির প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী অনুপস্থিত ছিল। অন্য দলগুলো অবশ্য বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। জামায়াত কেন আসেনিÑ এমন এক প্রশ্নের জবাবে ২০-দলীয় জোটের সমন্বয়ক বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন,  জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা সিটি নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ না নিলেও স্থানীয় নেতারা আমাদের প্রার্থীদের সঙ্গে আছেন।

জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, তারা বিএনপিকে নালিশ করেছেন যে, সংসদে যাওয়ার আগেও তাদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করা হয়নি। সিটি ভোটের প্রার্থী দেওয়ার পর তাদের জানানো হয়। শুধু সমর্থন দেওয়ার জন্য জোটের বৈঠকে তারা থাকতে চান না। এদিকে জোটের অন্য একটি দল বলেছে, গণসংযোগে তারা গেলেও পরিচয় পর্যন্ত করিয়ে দেয় না বিএনপি। এ জন্য ‘রাগে-গোসায়’ তারা গণসংযোগে যাচ্ছেন না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ২০-দলীয় জোটের শরিকরা আমাদের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে মাঠে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এরই মধ্যে মাঠে নেমেছেন। সরকারবিরোধী সব দল মতের সমর্থন নিয়ে আমরা ভোটে অংশ নিয়েছি। সবাই এখন ধানের শীষে ভোট দিতে প্রস্তুত।

এদিকে খোঁজ নিতে গিয়ে গতকাল পর্যন্ত ২০-দলীয় জোটের শরিক দলের মধ্যে লেবার পার্টির ইরানকে বিএনপির প্রার্থীদের সঙ্গে প্রচারে মাঠে দেখা গেছে। অবশ্য অন্য শরিকরা বলছেন, দু-এক দিনের মধ্যে তারাও মাঠে নামবেন। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মো. ইবরাহিম বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে তিনি মাঠে নামবেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ তিনি। তবে তার দলের নেতা-কর্মীরা বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গণসংযোগে নেমেছেন। এলডিপির একাংশের মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, তিনি আজ থেকে গণসংযোগে মাঠে নামবেন। তবে জোটের কোনো কোনো নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার আগে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী কারা হবেÑ এ নিয়ে কোনো কথাই বলেনি। ২০ দলের কোনো মতামতও নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ বৈঠকের আগে ভোটের মাঠে নামার জন্য বিএনপি আমন্ত্রণও জানায়নি। এ জন্য অনেকেই ভোটের মাঠে নামেননি। তবে জামায়াতের একটি সূত্র জানায়, তাদের কেন্দ্রীয় কোনো নেতাই ভোটের মাঠে নামবেন না। স্থানীয়ভাবে কেউ নামলে কোনো আপত্তিও তারা করবেন না। 

এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের নেতাদের ভোটের মাঠে দেখা গেছে। জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরাম থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। তারা বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বক্তব্যও রাখছেন।

সর্বশেষ খবর