সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভোটের সংঘর্ষ পুরান ঢাকায়

তাপস-ইশরাকের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, আহত ১২ জন, উত্তেজনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোটের সংঘর্ষ পুরান ঢাকায়

পুরান ঢাকায় গতকাল দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গোপীবাগ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বেলা ১টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ৪০ মিনিট পর্যন্ত সংঘর্ষের ঘটনায় উভয় পক্ষের ১২ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সময় টিভির ক্যামেরাপারসন আশরাফুল ইসলামও আঘাত পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। উভয় পক্ষ একে অপরের দিকে ইটের টুকরা নিক্ষেপ করে এবং লাঠিসোঁটা দিয়ে হামলা করে। কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। হামলার মধ্যে গুলি ছোড়ার শব্দও শোনা যায়। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় ইশরাক হোসেন মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘গোপীবাগে নৌকার ক্যাম্পে হামলা চালানো হয়েছে। বিরোধী পক্ষ ঈর্ষান্বিত হয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর গুলি করেছে। যারা এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করছি।’ এ বিষয়ে ধানের শীষের প্রার্থী ইশরাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে যাচ্ছিলাম। আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীর কার্যালয় থেকে হঠাৎ হামলা করা হয়েছে। আমি আমার কর্মীদের শান্ত থাকতে বলেছি। ভোটারদের বলছি, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের মাধ্যমে আমরা এর জবাব দেব।’ এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, রাজধানীর টিকাটুলী মোড় থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করে সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের গলির মোড় হয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিলেন ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। ঠিক তখন আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ব্যাডমিন্টন মার্কার রোকন উদ্দিন আহমেদ এবং সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর পদের প্রার্থী লাভলী চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকরা উপস্থিত হন ওই মোড়ে। দুই পক্ষই  স্লোগান-পাল্টা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় হ্যান্ড মাইকেও ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের  স্লোগান দিতে থাকেন কর্মীরা। একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। দুই পক্ষের কর্মীরা এ সময় রাস্তার পাশে থাকা চেয়ারও ছুড়ে মারেন। এর মধ্যে অন্তত ১০টি গুলির শব্দও শোনা যায়। প্রায় ৪০ মিনিট এ অবস্থা চলে। ওয়ারী থানার ডিউটি অফিসার শিলা আকতার বলেন, তারা ৯৯৯ থেকে প্রথম সংঘর্ষের খবর পান। এরপর সেখানে দ্রুত পুলিশ পাঠানো হয় এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পের ভিতরে ছিলাম। হঠাৎ ইশরাকের লোকজন আমাদের নির্বাচনী ক্যাম্পের দরজা ভেঙে আমাদের ওপর হামলা করে। এ সময় ইশরাকের লোকজন আট রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তাদের হামলায় আমাদের লোকজন আহত হয়েছে। আমাদের কেউ হামলায় ছিল না। তার ভাষ্য, সংঘর্ষে আহত আওয়ামী লীগ কর্মী আরাফাত রকি, সোহরাব হোসেন, মশিউর, রেজুয়ান ইসলাম রাতুল মো. রমজান, ছোট রমজান, জেমস, খাদেমুল, সেলিম, শাহাবুদ্দিন, রাসেলসহ অন্তত ১৫ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের দেখতে যান যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা বলেন, আমরা নৌকা ও ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিন আহমেদ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী লাভলী চৌধুরীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছিলাম। জোহরের আজান দেওয়ায় অনেকেই নামাজ পড়তে চলে যান। এ সময় কোনো রকম পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই সেখানে এসে উপস্থিত হন বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন এবং তার কর্মী-সমর্থকরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইশরাক নিজেই গুলি চালায় আমাদের নেতা-কর্মীর ওপর। ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) সুদীপ কুমার সাহা বলেন, এই এলাকায় ইশরাক হোসেনের নির্বাচনী প্রচারের কথা ছিল বিকাল ৫টায়। সে অনুযায়ী পুলিশকে তারা একটি চিঠিও দিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তারা দুপুর ১টায় ওই এলাকায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন, যা পুলিশকে জানানো হয়নি। ফলে পুলিশের কোনো প্রস্তুতি ছিল না।

ইশরাকের সংবাদ সম্মেলন : হামলার ঘটনার পর গোপীবাগে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন বলেন, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখিয়ে নির্বাচন বানচাল করতেই সরকারি দল এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। আমি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা শান্ত থাকবেন। আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। ১ ফেব্রুয়ারি নির্ভয়ে  জনগণকে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে যাবেন। ভোট দেবেন।

গোপীবাগের হামলার ঘটনা বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘মতিঝিলে প্রচার  শেষ করে আমি কর্মীদের নিয়ে বাসায় আসছিলাম। তখন সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের কাছে সরকারি দল আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলরের ক্যাম্প থেকে আমাদের ওপর বড় বড় ইটপাটকেল মারা হয়। অতর্কিতে হামলা চালানো হয় বিনা উস্কানিতে। এ হামলার সময় গুলির আওয়াজ হচ্ছিল। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণসংযোগ করে বাসায় ফিরছি, তখন এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটল। এ হামলায় আমাদের ৮/১০ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। আমার ওপরও হামলার সম্ভাবনা ছিল, আমার নেতা-কর্মীরা সুরক্ষা দিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ অভিযোগ করেছে, আপনাদের মিছিল থেকেই গুলি করা হয়েছে-এ প্রশ্নের জবাবে ইশরাক বলেন, ‘তারা ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। এ ঘটনায় আমরা মামলা করব।’  সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয়  নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরিন সুলতানা, ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন, নাজমুন নাহার বেবী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রাজীব আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের মামলা : এ ঘটনায় গতকাল রাতে বিএনপির ৫০ জন নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ওয়ারি থানায় মামলা করেছে আওয়ামী লীগ। মামলার বাদী হয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আহমেদ।

ইশরাকের বাসায় যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার : হামলার ঘটনার দুই ঘণ্টা পরই ইশরাক হোসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গোপীবাগের বাসায় যান যুক্তরাজ্যের হাইকমিশন রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। বিকাল ৩টার আগেই ব্রিটিশ হাইকমিশনারের গাড়ি নিয়ে আর কে মিশন লেনের মোড়ে এসে পৌঁছান তিনি। এ সময় ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে স্বাগত জানান বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ও  চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান। পরে ব্রিটিশ হাইকমিশনার দোতলায় ইশরাক হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য আবদুস সালাম উপস্থিত ছিলেন।

ওয়ারীতে দুই কাউন্সিলর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ : ওয়ারী থানার বনগ্রাম জুকিনগর লেনে বেলা আড়াইটায় বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মেহেরুন নেসা ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইমতিয়াজ আহমেদ মান্নাফির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াসহ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত রবিন শেখ বলেন, আমরা প্রচারণার জন্য প্রস্তুুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ইমতিয়াজের ৬০/৭০ জন সমর্থক অতর্কিত হামলা ও গুলি চালান। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, তিনজন আহত অবস্থায় এসেছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। এদের মধ্যে শান্ত গুলিবিদ্ধ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর