সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত সাধারণ মানুষের উন্নতি

প্রতিদিন ডেস্ক

দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত সাধারণ মানুষের উন্নতি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ট্রেনসহ বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন -বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুটি পানি শোধন প্রকল্প, দুটি সেতু এবং কয়েকটি ট্রেন সার্ভিসসহ বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। তিনি গতকাল তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এসব উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি তৃণমূলে সাধারণ মানুষের উন্নতিকে দেশের সার্বিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত হিসেবে বর্ণনা করেন। খবর বাসস।

প্রধানমন্ত্রী [প্রথম পৃষ্ঠার পর] বলেন, তৃণমূলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ছাড়া কখনো একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘একটা দেশের সার্বিক উন্নয়ন করতে হলে শুধু রাজধানীভিত্তিক উন্নয়ন করলেই হবে না, একেবারে গ্রামের মানুষ, তৃণমূলের মানুষদের উন্নতি করতে হবে।’ উদ্বোধন করা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-বঙ্গবন্ধু সেতু ও পূর্ব-তারাকান্দি-জামালপুর-ঢাকা রুটে এক জোড়া নতুন আন্তনগর ট্রেন ‘জামালপুর এক্সপ্রেস’, ঢালারচর-পাবনা-রাজশাহী রুটে ‘ঢালারচর এক্সপ্রেস’ ও ফরিদপুর রুটে ‘রাজবাড়ী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের রুট বর্ধিতকরণ এবং চট্টগ্রাম-সিলেট-চট্টগ্রাম রুটে উদয়ন ও পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনের র‌্যাক পরিবর্তন কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী এ সময় পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ডিজিটাল আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য মোবাইল অ্যাপসভিত্তিক ‘পল্লী লেনদেন’ কার্যক্রম, এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘গুরুত্বপূর্ণ ৯টি ব্রিজ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায় ১৫ হাজার মিটার চেইনেজে তিতাস নদীর ওপর ৫৭৫ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু এবং মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলাধীন মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর আরএইচডি রাস্তায় কালীগঙ্গা নদীর ওপর ৪৫৬ মিটার পিসি গার্ডার সেতু উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম ওয়াসার চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্পের (১ম সংশোধিত) আওতায় নির্মিত ‘শেখ রাসেল পানি শোধনাগার’ এবং খুলনা ওয়াসার ‘খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প’-এর আওতায় নবনির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ ও বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ১২ ঘণ্টা অনুষ্ঠান স¤প্রচার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, দেশের উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই হলো বর্তমান সরকারের মুখ্য উদ্দেশ্য। এ কারণে সারা দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে উন্নয়ন কর্মকা- ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। শহর ও গ্রামের মানুষকে সমান সুযোগ তৈরি করে দিতে সরকার কাজ করছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মজিবুর রহমান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং তথ্য সচিব কামরুন্নাহার তাদের মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ের চিত্র তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ ছাড়া পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভিডিও কনফারেন্স সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। সূচনা বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের উপকারভোগী, চট্টগ্রামের পানি শোধনাগারের উপকারভোগী, খুলনা পানি শোধনাগারের উপকারভোগী, চট্টগ্রামে টেলিভিশনের উপকারভোগী ও জামালপুরের রেল ব্যবহারকারী উপকারভোগীদের সঙ্গে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেন। বিভিন্ন স্থানে সেতু নির্মাণের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যোগাযোগের সুবিধার জন্য আমরা বিভিন্ন জেলায় সেতু নির্মাণ করে দিচ্ছি। যোগাযোগের ফলে প্রতিটি অঞ্চলে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এমন একটি এলাকা, যেখানে সামান্য বৃষ্টি হলেই বন্যা হতো। সব সময় এখানে বন্যা লেগেই থাকত। এখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা খুব অনুন্নত ছিল। সেখানে আমরা ব্রিজ করে উন্নত যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছি।’ পঁচাত্তরে জাতির পিতা হত্যাকা-কে একটি ‘কালো অধ্যায়’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন ক্ষমতায় আসে, তখন নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত থাকে। আর নিজেদের ক্ষমতার ভিত্তিটাকে শক্ত করার জন্য সমাজে একটি এলিট শ্রেণি তৈরি করে। সাধারণের জন্য কিছু করে না। যে কারণে পঁচাত্তরের পর এ দেশের মানুষ সর্বক্ষেত্রে বঞ্চিত ছিল। আর আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের লক্ষ্যই থাকে জনগণের কল্যাণ, তাদের সার্বিক উন্নতি।’ প্রধানমন্ত্রী এ সময় ক্ষুদ্রঋণের ক্ষতিকর প্রভাব তুলে ধরে বলেন, ‘একসময় আমিও ক্ষুদ্রঋণে উৎসাহিত করতাম। কিন্তু দেখা গেল ঋণের পরিমাণ একসময় এত বেড়ে যায় যে মানুষ ঋণগ্রস্ত হয়ে হয় আত্মহত্যা করে, না হয় ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি বিক্রি করে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়। সে আর নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘টেকসই উন্নয়নের জন্য কখনই এই ক্ষুদ্রঋণ কার্যকর হয় না। কাজেই একটা মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ক্ষুদ্রঋণের পরিবর্তে তার সরকার ক্ষুদ্র সঞ্চয়ভিত্তিক প্রকল্প হিসেবে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ (বর্তমানে ‘আমার বাড়ি আমার খামার’) প্রকল্প শুরু করে। অর্থাৎ কৃষিভিত্তিক উৎপাদনের বাজারজাত হবে সমবায়ভিত্তিক।’ প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, দরিদ্রদের সঞ্চয়কে সুরক্ষিত রাখার জন্যই তার সরকার ‘পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক’ চালু করেছে। তিনি প্রবাস গমনেচ্ছু এবং নবীন উদ্যোক্তাদের সুবিধার্থে তার সরকারের প্রতিষ্ঠিত ‘কর্মসংস্থান’ ব্যাংকের নানা দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, তার সরকারের সময় মোবাইল ফোনকে বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে সারা দেশে সবার হাতে মোবাইল ফোন চলে এসেছে। তিনি এ সময় দেশের সাড়ে ৩ হাজার ইউনিয়নে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেওয়া, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণসহ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। তিনি ‘লেনদেন’ভিত্তিক মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধনের ফলে সৃষ্ট নানা সুযোগ-সুবিধার কথাও উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী রেল যোগাযোগের উন্নয়নে তার সরকারের পদক্ষেপসমূহের উল্লেখ করে বলেন, ‘পাবনা, ঢালারচর, জামালপুরসহ আরও বিভিন্ন স্থানে রেলওয়ে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। রেলের মাধ্যমে মানুষ যেমন নিরাপদে যেতে পারে, আবার যাতায়াতও সাশ্রয়ী হয়। সে কারণে আমরা রেল সার্ভিসের ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক্ষেত্রে রেলওয়ের কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে যে আমরা রেললাইন বাড়াচ্ছি এবং নতুন নতুন বগি ও যাত্রী পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছি। তবে রেলের পুরনো ব্রিজগুলো, কালভার্টের ওপর ব্রিজসহ বিভিন্ন রেলব্রিজ মেরামত করতে হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, এগুলো অত্যন্ত পুরনো হয়ে যাওয়ায় রেল চলাচলে বিঘœ সৃষ্টিসহ যাত্রী নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

তিনি পূর্ববর্তী সরকারের (বিএনপি) আমলে রেল বন্ধ করে দেওয়ায় এমনটি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘সে সময়কার সরকারের এটি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ছিল। যে কারণে বছরের পর বছর চলে গেছে এসব ব্রিজ মেরামত করা হয়নি। তারা গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে রেলের লোকবলকে বিদায় করে দিয়েছে এবং বিভিন্ন জায়গার লাইন বন্ধ করে দিয়েছে। সারা দেশে সার্ভে করে যেখানে যত পুরনো রেলব্রিজ আছে সেগুলো মেরামত করতে হবে। তিনি বলেন, অনেক টাকা খরচ করে পানি শোধন করে সেই পানি সরবরাহ করা হয়। বিশেষ করে লোনা পানির জন্য খুলনাবাসীর পানির অভাব তীব্র ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য মধুমতি নদী থেকে পানি এনে শোধন করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। ১ লিটার পানি শোধন করতে প্রচুর টাকা খরচ হয়। কাজেই পানির অপচয়টা সবাই বন্ধ করবেন। কল ছেড়ে দিয়ে ব্রাশ করা, শেভ করা বা কল ছেড়ে দিয়ে গোসল করা-এগুলো কেউ করবেন না। প্রয়োজনে বালতি ও মগ ব্যবহার করবেন।’

সর্বশেষ খবর