সোমবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
ফাইন্যান্স কোম্পানি আইনের খসড়া

স্বেচ্ছা খেলাপিরা রাজনৈতিক দলের পদ পাবেন না

মানিক মুনতাসির

স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের রাজনৈতিক অধিকার খর্ব করা, গাড়ি রেজিস্ট্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারির বিধান রেখে নতুন ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২০-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন এ আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যারা স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপি হবেন তারা রাজনৈতিক কোনো পদ পাবেন না। এমনকি এরা বিদেশ ভ্রমণ কিংবা গাড়ি, বাড়ি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু থেকে শুরু করে কোম্পানি নিবন্ধন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারবে সরকার। স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের প্রতি এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নতুন ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন, ২০২০ তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। আইনটির চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আইনের খসড়াটি গতকাল সবার মতামতের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত করা হয়েছে। এরপর তা ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। পরবর্তী ধাপে তা অনুমোদনের জন্য জাতীয় সংসদে তোলা হবে। 

খসড়া আইনটিতে স্বেচ্ছা ঋণখেলাপিদের কঠোর বার্তা দেওয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণগ্রহীতা ও স্বেচ্ছা খেলাপিদের ব্যাপারে ধারা ৩০-এ বলা হয়েছে, স্বেচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণগ্রহীতা রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে কোনো সম্মাননা পাবেন না। রাষ্ট্রীয় কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কোনো ধরনের পেশাজীবী, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক সংগঠন পরিচালনার লক্ষ্যে গঠিত কোনো কমিটির পদে থাকতে পারবেন না। একই ধারার উপধারা ৫-এ স্বেচ্ছা খেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে বাধার কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্বেচ্ছা খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের তালিকা বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের কাছে পাঠাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক অনুরোধ করলে সরকার এ ঋণখেলাপিদের বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারবে। গাড়ি ও বাড়ি রেজিস্ট্র্রেশন, ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু, ‘যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদফতর’ এর কোম্পানি নিবন্ধনের বিষয়েও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা যাবে। আর উপধারা ৩ মোতাবেক খেলাপি ঋণগ্রহীতারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোনো ধরনের ঋণ পাবেন না। উপধারা ২ মোতাবেক খেলাপি ঋণগ্রহীতাকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে পারবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সংশ্লিষ্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া আদালতে আবেদন করবে। ঋণখেলাপিরা যদি এক মাসের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করেন তাহলে উপধারা ৪ মোতাবেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিয়ে ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতে পারবে। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের বিষয়ে খসড়া আইনের ধারা ২৬-এর উপধারা ১-এ বলা হয়েছে, প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের মোট পরিমাণের ২৫ শতাংশের বেশি সমষ্টিগতভাবে বিনিয়োগ করতে পারবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের ৫০ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারবে। উপধারা ২-এ বলা হয়েছে, কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান সাবসিডিয়ারি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানিতে পরিশোধিত মূলধন ও রিজার্ভের শতকরা ৫ ভাগের বেশি শেয়ার অর্জন বা ধারণ করতে পারবে না।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরিচালকের ব্যাপারে বেশ কিছু বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে খসড়া আইনটিতে। এতে বলা হয়েছে, যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তিনজন স্বতন্ত্রসহ ১৫ জনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কর্তৃত্বকে ক্ষুণœ করা যাবে না। এক প্রতিষ্ঠানে একই পরিবারের দুজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, তাদের শতকরা ৫ ভাগের বেশি শেয়ারের অধিকারী হতে হবে। আর ন্যূনতম শতকরা দুই কিন্তু অনধিক পাঁচ ভাগের বেশি শেয়ার না থাকলে ওই পরিবারের একজনের বেশি পরিচালক থাকতে পারবেন না। বিদেশি শেয়ারহোল্ডারের ক্ষেত্রে পরিচালক সংখ্যা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে দেবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো পরিচালক একই সময়ে অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক  কোম্পানির পরিচালক থাকতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিযুক্ত হতে পারবেন না। কোনো ব্যক্তি ফৌজদারি বিধিতে দন্ডিত হলে কিংবা জাল-জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্যবিধ অবৈধ কর্মকান্ডের সহিত জড়িত ছিলেন এমন কেউ ফাইন্যান্স কোম্পানির প্রধান নির্বাহী নিযুক্ত হতে পারবেন না। তিনি নিজে বা তার সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে কিংবা আদালত কর্তৃক দেউলিয়া ঘোষিত হলে তিনি প্রধান নির্বাহী হতে পারবেন না। একজন পরিচালকের মেয়াদ হবে তিন বছর। তবে একাধারে পর পর তিন মেয়াদে অর্থাৎ টানা নয় বছর পরিচালক হিসেবে থাকতে পারবেন। এরপর আরও তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর ওই একই ব্যক্তি পুনরায় পরিচালক পদে মনোনীত হতে পারবেন। এ ছাড়া খসড়া আইনটিতে বিভিন্ন অন্যায়ের ক্ষেত্রে কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর