বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত নির্দেশ, মাঠে কঠোর থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নিরপেক্ষ ভোটে ইসি ও প্রশাসন অটল

গোলাম রাব্বানী

নিরপেক্ষ ভোটে ইসি ও প্রশাসন অটল

নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠানে জোর প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই সিটি নির্বাচনকে নিরপেক্ষ ও বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা এখনো বহাল। এদিকে অবাধ-সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ থেকে ভোট কেন্দ্রে যাবে নির্বাচনী মালামাল। ভোটে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করতে আজ মাঠে নামছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের আগে দুই দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরেও এক দিনসহ মোট চার দিন মাঠে থাকবেন তারা। এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন বিজিবি-র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। আজ রাত ১২টায় শেষ হচ্ছে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী প্রচারণা। নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ভোট গ্রহণের ৩২ ঘণ্টা আগে প্রচারণা শেষ করতে হবে। সে অনুযায়ী আজ রাতে এ সময়সীমা শেষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন সংস্থা ২ হাজার ৪৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৫৯৭টি কেন্দ্রকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কেন্দ্রগুলোর নিন্ডিদ্র নিরাপত্তায় আজ মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নামছে বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ, এপিবিএন, ব্যাটালিয়ন আনসার ও আনসার-ভিডিপির সদস্যরা। সব মিলিয়ে প্রায় ৪২ হাজার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য মাঠে থাকছেন। নির্বাচনের দিন ১ ফেব্রুয়ারি দুই সিটিতেই সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সূত্র জানায়, এবার মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরসহ মোট ৭৪৯ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে মেয়র ১৩ জন। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, স্থানীয় সরকারের ভোট হলেও ঢাকা সিটিকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। বিতর্কমুক্ত নির্বাচন ও দলীয় প্রার্থীর জয় চায় সরকার। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সিটি ভোট শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলীয় ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অবাধ-গ্রহণযোগ্য ভোট করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, কেউ যেন বাড়াবাড়ি না করে। জনগণ যাকে খুশি নির্বাচিত করবে। মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী : দুই সিটি নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪২ হাজার ৮৭০ জন সদস্য। ভোটের আগে দুই দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরেও এক দিনসহ মোট চার দিন মাঠে থাকবেন তারা। এ ছাড়া মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকবেন বিজিবি-র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। এক্ষেত্রে বিজিবির টহল টিমের সঙ্গে থাকবেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।  সকাল থেকে মাঠে থাকবে বিজিবি : ঢাকা দুই সিটির ভোটারদের ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা দিতে আজ সকাল থেকেই মাঠে থাকবে বিজিবি। গতকাল উত্তর সিটির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিজিবির সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকেই বিজিবির সদস্যরা মাঠে থাকবেন। ইভিএমে অনুশীলন ভোট : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভোটাররা ভোটের আগের দিন নিজ কেন্দ্রে গিয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নিজের ভোট দেওয়া অনুশীলন করতে পারবেন। ইসির ইভিএম প্রকল্পের অপারেশন প্ল্যানিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান এ তথ্য জানান। ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে সম্পূর্ণ ভোট গ্রহণ হবে ইভিএমে। ১৫৯৭টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র : ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ৬৪ দশমিক ৭১ শতাংশ কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ)। এসব কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত ফোর্স নিয়োগ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানা গেছে, ঢাকার দুই সিটির ২৪৬৮টি কেন্দ্রের মধ্যে উত্তরে ৮৭৬ ও দক্ষিণে ৭২১ কেন্দ্র ঝুঁকিতে রয়েছে। উত্তরে সাধারণ কেন্দ্র ৪৪২ ও দক্ষিণে ৪২৯টি। ঢাকা উত্তরের রিটার্নিং অফিসার ও দক্ষিণের রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকার দুই সিটির ১৯৮২টি কেন্দ্রের মধ্যে উত্তরে ৫৮৭ ও দক্ষিণে ৯৯৮ কেন্দ্র ঝুঁকিতে ছিল। আজ ভোট কেন্দ্রে যাবে মালামাল : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ও আনুষঙ্গিক মালামাল রাজধানীর ৮টি ভেন্যু থেকে আজ বিতরণ করা হবে। দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন ভেন্যু থেকেও আজ মালামাল বিতরণ করা হবে। যান চলাচল বন্ধ : ঢাকার দুই সিটি ভোটকে সামনে রেখে ভোটের দিন লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করলেও আন্তজেলা লঞ্চ চলতে কোনো বাধা নেই। ইসি জানিয়েছে, কাল ৩১ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাত ১২টা থেকে ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বাস, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, ট্রাক, টেম্পু, অন্যান্য যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ১৪ দলের অভিযোগ : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মূল লক্ষ্য জয়লাভ নয়। নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করা এবং আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়-এই দুটো ইস্যুকে প্রতিষ্ঠা করাই তাদের মূল লক্ষ্য। গতকাল বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ক্ষমতাসীন ১৪ দল এই অভিযোগ করে।  বহিরাগতকে ভোটের দিন ঢাকা ছাড়ার নির্দেশ : ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন নি®প্রয়োজনে বা বহিরাগতদের রাজধানী ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল সন্ধ্যায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম ও র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ইসি।

 বৈঠক শেষে ইসি সচিব বলেন, অন্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে যে এলাকায় ভোট থাকে, সেই এলাকায় ভোটের দিন বাইরের কোনো লোক অবস্থান করতে পারে না। এটা রাজধানী। মানুষকে বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানে আসতে হয়। তিনি বলেন, ভোটের দিন যেন যারা ভোটার না, বিশেষ করে ঢাকায় বহিরাগত, তারা যেন ভোট কেন্দ্রে না আসেন।

সর্বশেষ খবর