বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মেগা প্রকল্পের অগ্রগতিতে বাধা করোনাভাইরাস

পদ্মা সেতু প্রকল্পের চীনফেরত ৩৫ কর্মকর্তা পর্যবেক্ষণে । কর্ণফুলী টানেল, পদ্মা রেল সংযোগ, ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়ন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত চীনারা ফিরতে পারছেন না

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেগা প্রকল্পের অগ্রগতিতে বাধা করোনাভাইরাস

চীনে করোনাভাইরাসের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতির অবসানের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ পর্যন্ত উহানসহ বিভিন্ন প্রদেশে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বাংলাদেশে সড়ক, রেল, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতের অবকাঠামো উন্নয়নের বৃহৎ প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি থেমে যেতে পারে। কারণ প্রকল্পগুলোর বড় একটি অংশই বাস্তবায়িত হচ্ছে চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। চীনা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, প্রকৌশলী ও মাঠপর্যায়ের কর্মীদের সহায়তায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কমপক্ষে দেড় হাজার চীনা নাগরিক এসব প্রকল্পের কারিগরি সহায়তা, পরামর্শ দানসহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত আছেন। চীনা নববর্ষ ছিল ২৫ জানুয়ারি। এটি সে দেশে অন্যতম বড় উৎসব। এ উৎসব পালনের জন্য গত সপ্তাহে এবং এরও আগে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে গিয়ে পরিস্থিতির কারণে আটকে পড়েছেন তাদের বড় একটি অংশ। আবার অনেকে ফিরে এলেও তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায়। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় ছুটি নিয়ে চীনে যাওয়া কর্মকর্তাদের বাংলাদেশে ফেরা বিলম্বিত হবে। বিভিন্ন প্রকল্পের অধীনে কর্মরত শতাধিক চীনা কর্মকর্তা এরই মধ্যে তাদের ছুটি আরও বাড়ানোর আবেদন করেছেন বিভিন্ন প্রকল্প কার্যালয়ে। মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পও। এ ছাড়া আছে পদ্মা সেতু রেলসংযোগ, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলসংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। ৯ দিনে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীনফেরত তিন হাজারের বেশি ব্যক্তির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়নি। পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পে অর্ধশতাধিক চীনা নাগরিক যুক্ত আছেন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেলপথ প্রকল্পে যুক্ত চীনা নাগরিকরাও দেশে ফেরেননি। ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে যুক্ত অর্ধশতাধিক চীনা কর্মকর্তা ছুটি নিয়ে গেছেন। আগামী মাসে তাদের ফেরার কথা। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তারা ফিরতে পারবেন কি না তা নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রধানমন্ত্রীর ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের অন্যতম পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। এ ১০টি অগ্রাধিকার প্রকল্পের মধ্যে এখন সবচেয়ে এগিয়ে আছে এটি। প্রকল্পের মূল সেতু নির্মাণ করছে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। নদীশাসনের কাজ করছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। দেশের সবচেয়ে বড় এ সেতুর ৩ হাজার ৩০০ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। এযাবৎ ২২টি স্প্যান বসানো হয়েছে। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ হাজার ১০০ চীনা নাগরিক কাজ করছেন। এর মধ্যে ছুটিতে চীনে গিয়েছিলেন ২৫০ জন। ২২ জানুয়ারি তারা ছুটিতে গেলেও তাদের বড় অংশ ফিরতে পারেনি। এখনো শতাধিক আটকে আছেন চীন সরকারের নিষেধাজ্ঞার কারণে। এরই মধ্যে ছুটি কাটিয়ে ৩৫ জন চীনা কর্মকর্তা কাজে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু তাদের মাঠপর্যায়ের কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে। প্রকল্পের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হচ্ছে চীন থেকে সদ্য ফিরে আসা চীনা কর্মকর্তাদের। সেখানে তাদের ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। তাদের এ সময় কেবল দাফতরিক কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে। গতকাল নিজ মন্ত্রণালয়ে করোনাভাইরাস পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রভাব ফেলবে না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘চীন থেকে যারা আসছেন তাদের ব্যাপারে আমাদের নজরদারি আছে। আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। যারা এরই মধ্যে এসেছেন, নিয়ম অনুযায়ী তাদের ১৪ দিন কর্মকান্ডের বাইরে রাখা হয়েছে। এতে আমাদের কর্মকান্ড কোনোভাবেই বিঘিœত হবে না।’ চীনে ছুটি নিয়ে চলে যাওয়ায় ঢাকা বাইপাস সড়ক উন্নয়নসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজে গতি বিঘিœত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘সওজ অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে চীনা কর্মকর্তারা যুক্ত আছেন। অনেকে ছুটিতে গেছেন। এখন পর্যন্ত তাদের অনুপস্থিতির জন্য প্রকল্পের কাজ বিঘিœত হয়নি। তবে আমরা আশা করছি দ্রুত এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।’ চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের অগ্রগতি ৫১ শতাংশ। এ প্রকল্পে যুক্ত ১০০ চীনা নাগরিক ছুটিতে গেছেন। তারা না ফেরায় কাজে কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা তাদের চীন সরকারের সিদ্ধান্ত মানতে অনুরোধ করেছি। প্রকল্প ব্যবস্থাপক একজনও চীনে গিয়ে ফিরতে পারছেন না। তবে কাজের গতি যাতে বিঘিœত না হয় সে জন্য আমরা সতর্ক আছি। পরিস্থিতির উন্নতি হলে আর এ নিয়ে ভাবতে হবে না।’ বাংলাদেশ রেলওয়ের অধীনে পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজও এগোচ্ছে। এ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কিছু চীনা কর্মকর্তাও ছুটিতে চীনে অবস্থান করছেন। জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান বলেন, পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে প্রায় আড়াইশ চীনা নাগরিক বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছেন। তারা আসতে শুরু করেছেন। তবে তাদের বড় অংশই চীনে অবস্থান করছেন। যারা চীন থেকে ফিরেছেন, ১৪ দিন পর্যবেক্ষণ শেষ না হলে মাঠপর্যায়ে তাদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আমরা তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনসহ সবাইকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।’

সর্বশেষ খবর