বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ইসির মেরুদন্ড শক্ত হওয়া দরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইসির মেরুদন্ড শক্ত হওয়া দরকার

সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেছেন, দোরগোড়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। অথচ, ইভিএম নিয়ে এখনো দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পারেনি। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের যেন প্রতিযোগিতা চলছে। প্রচারণার নামে রাস্তায় চলছে তা-ব। প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। অথচ, সবকিছুতেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) যেন নীরব দর্শক। দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখছি না। একটা সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনের মেরুদন্ড আরও শক্ত হওয়া দরকার। এত বিতর্ক থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও সন্দেহ থেকে যাবে। অথচ, এই নির্বাচনটা ছিল আগামী জাতীয় নির্বাচনের পটভূমি তৈরির সুবর্ণ সুযোগ। সেই সুযোগটা হাতছাড়া হতে যাচ্ছে। ঢাকা সিটির নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একটা নির্বাচনের সঙ্গে চারটা পক্ষ জড়িত। নির্বাচন কমিশন, সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণ। চার পক্ষ একমত হলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া সম্ভব। এর মধ্যে অন্যতম পক্ষ নির্বাচন কমিশন। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব তাদের। কিন্তু মনে হচ্ছে ইসির মেরুদন্ডে জোর নেই। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সারা শহর লেমিনেটেড পোস্টারে ছেয়ে গেল কীভাবে? বিএনপির মেয়র প্রার্থী হামলার অভিযোগ করলেন। ইসি তো তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিতে পারত। শুরু থেকেই ইভিএম নিয়ে খটকা লেগে আছে। একমত না হতে পারলে ইভিএম ব্যবহার উচিত হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইভিএম ভালো মনে করি যদি হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি না থাকে। ইসির উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে একান্ত বৈঠকে তাদের বোঝানোর আন্তরিক চেষ্টা করা। ইভিএমে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা। এ জন্য আরও আগে এটা নিয়ে মাঠে নামা দরকার ছিল।

বিতর্ক নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হলেও সন্দেহ থেকে যাবে, যা সমস্যা তৈরি করবে। তারপরও বিতর্ক কমাতে এখনো ইসির সামনে কিছু সুযোগ আছে। নিশ্চিত করতে হবে ভোটাররা নিশ্চিন্তে নিজের ভোট দিতে পারবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করবে।

 গত নির্বাচনে কোনো কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট দেখিনি। সব প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট থাকার বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভূমি তৈরি করতে সিটি নির্বাচন ছিল ইসির সামনে সুযোগ। আশা ছিল স্বচ্ছ নির্বাচন হবে। সেই লক্ষণ দেখছি না। নির্বাচন কমিশনাররাই বিভিন্ন বিষয়ে একমত নন। বিতর্ক তৈরি করে ক্ষমতাসীন দল দুই প্রার্থীকে জিতিয়ে আনলেও লাভ নেই। এটা নির্বাচন কমিশন ও পরবর্তী নির্বাচনগুলোকেও প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এ ছাড়া সরকারের হস্তক্ষেপ থাকলেও ইসি সঠিকভাবে কাজ করতে পারবে না। সরকারের ভিতরেও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষণ দেখছি না। যে করেই হোক প্রার্থী জিতিয়ে আনতে হবে এমন একটা অবস্থা বিরাজ করছে। প্রচারণার নামে দলগুলো রাস্তায় তা-ব চালাচ্ছে। কাউন্সিলর প্রার্থীরা যেভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন তাতে নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। বিএনপি তো মনে হয়, ধরেই নিয়েছে তারা হেরে যাবে। শুধু নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে না কেন? নির্বাচন কমিশনের শক্ত ভূমিকা থাকলে নির্বাচন আরও উৎসবমুখর হতো। গণতন্ত্রের জন্যই নির্বাচনটা বিতর্কমুক্ত হওয়া দরকার। এতে ক্ষমতাসীন দলই লাভবান হতো।

সর্বশেষ খবর