শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

চীনে যাতায়াতে বাড়ছে ঝুঁকি

ঢাকা থেকে যাচ্ছে মাস্ক, শাহজালাল থেকে তরুণ হাসপাতালে চীন থেকে ফিরতে আগ্রহী ৩৭০ জন, করোনাভাইরাসে মৃত বেড়ে ১৭০, আক্রান্ত সাত হাজার ৭০০

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস আক্রান্ত চীনে যাচ্ছে ঢাকার মাস্ক। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ফ্লাইটে মাস্ক পাঠানো হয়েছে। এদিকে চীন থেকে ঢাকায় ফেরা বাংলাদেশি এক তরুণকে পরীক্ষার পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। প্রচ- জ্বরে আক্রান্ত এ তরুণকে গতকাল দুপুরে শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। গত বুধবার রাতে সাউদার্ন চায়না এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে চীন থেকে ঢাকায় ফেরেন ওই তরুণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চীন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াতে প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম জানান, ঢাকায় ফেরা তরুণটি চীনের একটি প্রদেশে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তবে তিনি চীনের উহান প্রদেশ থেকে আসেননি। শাহজালাল বিমানবন্দরে আসার পর থার্মাল স্ক্যানারে তার জ্বর ধরা পড়ে। ওই তরুণের শরীরের তাপমাত্রা ছিল ১০০ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তিন দিন ধরে তার জ্বর রয়েছে। জ্বর থাকায় তাকে বিমানবন্দরে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। সকালে তার শরীর থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এরপর তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে পরীক্ষার পর ওই তরুণের স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে কিনা, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। জানা গেছে, চীনে ওই তরুণের দুবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। সেখানে তার শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। চীন থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর তিনি দেশে এসেছেন। তার জ্বর থাকলেও শ্বাসকষ্ট ছিল না।  ঢাকার মাস্ক চীনে : বাংলাদেশিরা যে মাস্ক ব্যবহার করেন, তার অধিকাংশ চীন ও ভারতের তৈরি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সেই চীনই উল্টো বাংলাদেশ থেকে মাস্ক সংগ্রহ করছে। গত কয়েকদিন ফ্লাইটে চীনে মাস্ক গেছে। ঢাকা থেকে মাস্ক নিতে বিশেষ ফ্লাইটেরও প্রস্তুতি নিয়েছে চীন। ফলে ঢাকায় ওষুধের দোকানগুলোতে মাস্কের সংকট চলছে। দাম বাড়ার তথ্যও মিলেছে। এ প্রসঙ্গে চীন-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ- সিবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি ইশাকুল হোসেন সুইট বলেন, বেইজিং চেম্বারসহ চীনের বিভিন্ন বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ থেকে মাস্ক নিতে চিঠি দিয়েছে। এমন চিঠি পুরো বিশ্বেই ব্যবসায়ীদের কাছে চীন দিয়েছে। প্রায় দুই কোটি মাস্ক বাংলাদেশ থেকে নিতে চায় চীন। এটা পাঠাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স সূত্র জানায়, ঢাকা থেকে ফ্লাইটযোগে প্রায় ৮০০ কেজি মাস্কের প্রথম চালানটি যায় ২৯ জানুয়ারি। এরপর গতকাল আরেকটি চালানে ৩ হাজার ৪৬০ পিস মাস্ক চীনে গেছে। এসব মাস্ক ঢাকার স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করেছেন চীনারা। অধিকাংশ চীনের নাগরিক নিজেদের সুরক্ষার জন্য মাস্ক মজুদ করছেন বলেও জানা গেছে। বাড়ছে ঝুঁকি : চীনে প্রতিদিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত মানুষের সংখ্যা। চীনের সীমানা ছাড়িয়ে এর মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে ১৯টি দেশ। চীনে আক্রান্ত ৭ হাজার ৭০০ জন। ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৭০ জন। ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকাতে চীনে ফ্লাইট বন্ধ করছে বিশ্বের অনেক এয়ারলাইন্স। কিন্তু চীন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত চলছে যাত্রী আসা-যাওয়া। এতে প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রবেশের ঝুঁকি বাড়ছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহে মোট ২১টি ফ্লাইট বাংলাদেশ এবং চীনে যাতায়াত করে। এর মধ্যে ১৪টি গুয়াংজু-ঢাকা এবং ৭টি কুনমিং-ঢাকায় পরিচালিত হয়। তিনটি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশ-চীন সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে; চায়না ইস্টার্ন, চায়না সাউদার্ন এবং ইউএস বাংলা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গতকাল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেছে। বৈঠকে এ পরিস্থিতিকে ‘ডিপলি কনসার্নিং’ অর্থাৎ গভীর পর্যবেক্ষণে রয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। চীন থেকে প্রতিদিন দেশে গড়ে ৬০০-৭০০ যাত্রী বাংলাদেশে আসে। তাদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস বাংলাদেশে প্রবেশের শঙ্কা আছে। তাই আগাম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে দেশের বিভিন্ন স্থল, নৌ ও বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, নভেল করোনা এটি একটি নতুন ভাইরাস। এর প্যানডেমিক পটেনশিয়াল আছে অর্থাৎ এটি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি একজন মানুষ থেকে অনেকের মধ্যে ছড়ায়। তাই এ ভাইরাসে আক্রান্তদের আলাদা হাসপাতালে না রেখে একটি হাসপাতালে রাখতে হবে। তা না হলে এ ভাইরাস হাসপাতাল থেকেই অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে। চীন থেকে ৩৭০ জন আসতে আগ্রহী : চীন থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭০ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম (বিডিএফ)-২০২০-এর সমাপনী অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো তাদের আনতে প্রস্তুত। ৩৪১ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হবে : শনিবার রাতে চীনের উহান থেকে ৩৪১ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হবে। এদের কেউই করোনাভাইরাস আক্রান্ত নয়, তবু নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের আশকোনা হাজী ক্যাম্পে রাখা হবে। সেখানে কমপক্ষে ১৪ দিন তাদের থাকতে হতে পারে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কাল সকাল সাড়ে ৯টায় হাজী ক্যাম্প পরিদর্শনে যাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী। স্ক্রিনিং ছাড়া কেউই দেশে প্রবেশ করছে না : স¦াস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে এই মুহূর্তে স্ক্রিনিং করা ছাড়া কাউকেই দেশে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিদেশ ফেরত সব ফ্লাইটের যাত্রীদের জন্য প্রবেশ গেটে স্ক্রিনিং মেশিন বসানো হয়েছে। একইভাবে দেশের অন্যান্য স্থল, নৌবন্দরেও স্ক্রিনিং ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে সরকার পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। ভারতে প্রথম রোগী শনাক্ত : ভারতে প্রথমবারের মতো একজনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কেরালায় উহান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর শরীরে নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।’ ওই রোগীকে হাসপাতালে পৃথক অবস্থায় রাখা হয়েছে। রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল আছে এবং তাকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর