রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ইভিএমে যত বিপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভোট দিতে গিয়ে ইভিএম মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ মেলেনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার। পরে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে ভোট দিয়েছেন। গতকাল বেলা ১১টা ৫ মিনিটে রাজধানীর উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরের আইইএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের কলেজ ভবনের ৮ নম্বর কক্ষে ভোট দেন তিনি। ভোট দিতে ৩০ মিনিট সময় লেগেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের। এ ছাড়া ভোট গ্রহণের শুরুতেই ইভিএমে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় প্রায় ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর ভোট দিতে সক্ষম হন উত্তর সিটি বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মা নাসরিন আউয়াল। ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার মাধ্যমে ভোট দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

জানা গেছে, সিইসি কে এম নূরুল হুদা ভোট দিতে গেলে তার আঙ্গুল স্ক্যান করা হয়। কিন্তু মেশিনে তার আঙ্গুলের  ছাপ মেলেনি। পরে জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দিয়ে তিনি ভোট দেন। ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিইসি। সে সময় বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৮-৯ বছর আগে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়েছি। ঘামে ভেজা থাকায় হয়তো মেলেনি। এনআইডি দিয়ে ভোট দিয়েছি।’

ভোট দিতে ৩০ মিনিট সময় লেগেছে ড. কামালের : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমার হাতের আঙ্গুলের ছাপ মিলতে যদি ১০ মিনিট লাগে ও সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যদি ৩০ মিনিট সময় লাগে, তাহলে সাধারণ জনগণের কত সময় লাগবে!’ সকাল সাড়ে ১০টায় বেইলি রোডের ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ার পর তিনি এমন প্রশ্ন করেন। এ বিষয়ে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কাওসার ই জাহান বলেন, ‘বুড়ো মানুষের আঙ্গুলের ছাপ মিলছিল না। তাই একটু বেশি সময় লেগেছে। সংরক্ষিত এক শতাংশ কোটায় তার আঙ্গুলের ছাপ আমি দিয়ে দিয়েছি।’

ইভিএমে শুরুতেই বিপত্তি : ঢাকার উত্তর সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণের শুরুতেই দুটি কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে বিপত্তির ঘটনা দেখা গেছে। এ কারণে ভোট গ্রহণ শুরু করতেও কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের দুটি কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে। ইভিএম মেশিন নিয়ে কিছু সময়ের জন্য ঝামেলা পোহাতে হয়েছে এখানকার প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের। মোহাম্মদপুর নূরজাহান রোডের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৮টায় অডিট কার্ড প্রিন্ট করে শূন্য ভোট গণনা সবার সামনে দেখিয়ে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। কেন্দ্রের ১ নম্বর কক্ষে মেশিনে কাগজ আটকে যাওয়ায় ভোট গ্রহণ শুরু হয় প্রায় ৪০ মিনিট পর। এ সময় ভোটকক্ষের বাইরে ভোটারদের বিরক্ত হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ভোটার এস এম আক্কাস আলী বিষয়টিকে ‘বিরক্তিকর’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান, সকাল ৮টার দিকে ভোট দিতে এলেও এই দীর্ঘ সময় তাকে অপেক্ষা করতে হয়েছে শুধু মেশিনের সমস্যার কারণে। তবে ইভিএমে ভোট দেওয়া সহজ প্রক্রিয়া বলে জানান তিনি। ঢাকা উত্তরের বিএনপি মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেছেন, ‘অনেক কেন্দ্রে গিয়ে দেখেছি ভোটার আইডি কার্ড ঠিক থাকলেও ইভিএম মেশিনে নিচ্ছে না। একজন ভোটার আমাকে বললেন, তার কার্ড কাজ করছে না। এসএমএস দিয়ে কেন্দ্রের নম্বরও দেখাচ্ছে। ভোটার লিস্টেও তার নাম আছে। কিন্তু ইভিএম মেশিনে নিচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তিনি ভোট দিতে পারেননি। এতে ইভিএম মেশিন বিড়ম্বনায় পড়েছেন ভোটাররা।’ গতকাল ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

৪০ মিনিট পর ভোট দিলেন তাবিথের মা : গতকাল সকাল ৮টায় শুরু হয় ঢাকার দুই সিটির ভোট গ্রহণ। ভোট গ্রহণের শুরুতেই ইভিএমে ত্রুটি দেখা দেয় গুলশানের একটি কেন্দ্রে, যেখানে ভোট দিতে গিয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মা নাসরিন আউয়াল। প্রায় ৪০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পর ভোট দিতে সক্ষম হন তিনি। জানা গেছে, গুলশানের মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ৩ নম্বর মহিলা বুথে ভোট দিতে যান নাসরিন আউয়াল। কিন্তু ইভিএম মেশিনে সমস্যার কারণে তিনি ভোট দিতে পারছিলেন না। প্রায় ৪০ মিনিট পর মেশিন পরিবর্তন করা হয়। এরপর ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নাসরিন আউয়াল ভোট দেন। এ সময় বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তাবিথ আউয়ালের বাবা আবদুল আউয়াল মিন্টু। ভোট দিয়ে বের হয়ে নাসরিন আউয়াল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি সকাল ৮টায় ভোট দিতে এসেছি। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের মহিলা কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে ভোট দিতে যাই। কিন্তু তিনবার চেষ্টা করেও পোলিং কর্মকর্তারা আমার ভোট নিতে পারেননি। প্রায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করার পর মেশিন পরিবর্তন করা হয়। চতুর্থবারের চেষ্টায় আমি ভোট দিতে পেরেছি। আমি বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের মা। আমার ভোট দিতেই এ অবস্থা। তাহলে অন্য ভোটারদের কী অবস্থা হবে জানি না!’ এ বিষয়ে তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘আমার মা ভোট দিতে গেলে মেশিন ব্রেকডাউন হয়ে যায়।’

আঙ্গুলের ছাপ মেলেনি জাফরুল্লাহ চৌধুরীরও! : ভোট দিতে গিয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) আঙ্গুলের ছাপ মেলেনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর। রাজধানীর ধানমন্ডিতে কাকলি হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে গিয়ে এ অভিজ্ঞতার শিকার হন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। পরে দায়িত্বরত নির্বাচনী কর্মকর্তা নিজ ক্ষমতাবলে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি পরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইভিএম আমাকে আইডেন্টিফাই (চিহ্নিত) করতে পারল না। আমার যখন আঙ্গুলের ছাপ মিলল না, তখন আমার ভোট আরেকজন দিয়ে দিতে পারে। আমার নাম যে শিটে ছিল, সেখানে আরও ২৮ জনের নাম ছিল। আমিসহ ওই শিটের চারজন ভোট দিয়েছি। আমার আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় নির্বাচনী কর্মকর্তারা আমাকে ভোট দেওয়ার জন্য ইভিএম অন করে দিলেন। সুতরাং যারা ভোট দিতে আসবেন না তাদের ভোট তো অন্য কেউ দিয়ে দিতে পারে। ইভিএম মেশিনের আরও আধুনিকায়ন করা দরকার।’ এদিকে আঙ্গুলের ছাপ মিলেনি তবু ভোট দিয়েছেন সবুজ মিয়া ও স্বপন নামের দুই ব্যক্তি। রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকার রূপনগর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর