রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দূতাবাসগুলো অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

দূতাবাসগুলো অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে

ঢাকার বিদেশি দূতাবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদের ‘বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় এর তীব্র সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দূতাবাসগুলো অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে। আর নির্বাচন কমিশন কীভাবে দেশি নাগরিকদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে কার্ড দিল? গতকাল সকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে রাজধানীর সিটি কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে পৌঁছান। এ সময় ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকে অভ্যর্থনা জানান। পরে প্রথম ভোটার হিসেবে কেন্দ্রের দ্বিতীয় তলায় ২৪১ নন্বর কক্ষে গিয়ে ভোট প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী। 

ভোট দিয়ে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এইমাত্র আমি আমার ভোট দিয়েছি এবং মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকায় ভোট দিয়েছি। আমি আশা করি ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আমাদের দুই মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলাম বিজয়ী হবেন। এ বিজয়ের পরে ঢাকাবাসীর জন্য আমরা উন্নত এবং পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ে তুলব ইনশা আল্লাহ।

প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিদেশি দূতাবাসগুলো যাদের বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক করেছে, তাদের মধ্যে অনেকে আছে যারা বাংলাদেশের প্রতি বৈরী। কারও বাবা ’৭৫-এ হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বা কেউ ছিল স্বাধীনতাবিরোধী। মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা চালিয়েছে, পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করেছে তাদের উত্তরসূরিও অনেক আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি নাগরিক যারা বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি করে তাদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বিদেশি দূতাবাসগুলো অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছে। তারা ঠিক কাজ করেনি। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, একজন বাংলাদেশি নাগরিক কীভাবে একজন বিদেশি এবং বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হতে পারে যখন তারা বিদেশি দূতাবাসগুলোতে কেবল চাকরি করে? তারা (বিদেশি দূতাবাসগুলো) অবশ্যই তাদের (বাংলাদেশি নাগরিকদের) বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে প্রেরণ করতে পারে না। তারা কাজটি ঠিক করেনি। আর নির্বাচন কমিশন এটা কীভাবে গ্রহণ করল? কারণ নির্বাচন কমিশনের আইনে স্পষ্ট বলাই আছে, বিদেশি পর্যবেক্ষক হতে হলে বিদেশি নাগরিক হতে হবে। দেশি নাগরিক কীভাবে বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে কার্ড গ্রহণ করেছে? এটা তারা গ্রহণ করে ঠিক করেননি। তাদের উচিত ছিল দেশি নাগরিককে বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে ভোট কেন্দ্রে আসতে না দেওয়া। তারা ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে আসতে পারেন। কিন্তু পর্যবেক্ষক হিসেবে নয়। বিদেশি কূটনীতিকরা নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন- এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, সবাই জানে তাদের দেশে নির্বাচন কেমন হয়। আমরা তাদের দেশগুলোর নির্বাচনের কয়েকটা উদাহরণ জানি। তবে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করতেই পারে। কারণ অতীতে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি স্টাইলের ভোট, মাগুরা মার্কা ভোট অথবা মিরপুর-১০ স্টাইলের ভোট আমাদের দেশে হয়েছে। এখন আমরা ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠেছি, এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। কয়েক দিন ধরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- ঢাকার বাইরে থেকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের নিয়ে এসে ভোটের পরিবেশ বিঘিœত করার চেষ্টা করছে বিএনপি, আপনি কী মনে করেন? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যখন জনগণের ওপর আস্থা হারায়, বিশ্বাস হারায় তখন নানা পথ বেছে নেয়। এটা বিএনপির চরিত্র। ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি শুরুই করেছিল বিএনপি। তাদের আমলে প্রচলিত ছিল, ১০টা হুন্ডা, ২০ গুন্ডা নির্বাচন ঠান্ডা। কাজেই তারা গুন্ডা বাহিনী আনবে, এটা তাদের চরিত্রগত অভ্যাস। তিনি বলেন, বিএনপি জনগণের প্রতি আস্থা রাখতে পারে না। ডিজিটাল পদ্ধতিতে তারা আস্থা রাখতে পারে না। তারা জানে যে, এ পদ্ধতিতে ভোট চুরি করা সম্ভব নয়। ইভিএম প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইভিএম মানে ডিজিটাল পদ্ধতি। ইভিএমে যার যার ভোট স্বাধীনভাবে দিতে পারবে। আমি নিজেই চমৎকারভাবে ভোট দিলাম। যেখানে নৌকা মার্কা সেখানে ভোট দিলাম। সেটা লুকোচুরির কিছু নেই। এই জায়গায় শঙ্কাটা কোথায়? আগে কয়েকটা গুন্ডা বাহিনী নিয়ে সিল মেরে ঢুকিয়ে রাখতে পারত, এখন তা করতে পারছে না বলেই বিরোধিতা। তাদের দীর্ঘদিনের ভোট চুরির অভ্যাস, সেটা প্রয়োগ করতে পারবে না-এটাই কারণ। ভোট প্রদান জনগণের অধিকার এবং এটি সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণ যাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে তার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব সদস্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বলেন, আমরা এমন পরিবেশ তৈরি করতে চাই যাতে প্রত্যেক ভোটার যথাযথভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

সর্বশেষ খবর