রবিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগ

ঢাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা তাপস-আতিকের, প্রত্যাখ্যান ইশরাক-তাবিথের

নিজস্ব প্রতিবেদক

দুই সিটিতেই আওয়ামী লীগ

ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের দুই মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন। গতকাল গভীর রাতে তাদেরকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এ দিকে সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদেও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের জয়জয়কার। রাত ১২টা ৪০ মিনিটে দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ফজলে নূর তাপসকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার। তিনি ১ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেনকে পরাজিত করেন। অন্যদিকে উত্তর সিটিতেও জয় নিশ্চিত করেন নৌকার মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। তিনি ১ লাখ ৭৭ হাজার ১১৭ ভোটে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল থেকে এগিয়ে ছিলেন।

এদিকে ফলাফল গণনা চলাকালে আতিক ও তাপস গতকাল রাত সাড়ে ৯টার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাত সোয়া ১০টার দিকে তারা প্রধানমন্ত্রীর দোয়া নিয়ে গণভবন ছাড়েন। বেরিয়ে তারা ঢাকাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন। অন্যদিকে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপির দুই সিটি মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আউয়াল। সিটি ভোটে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে আজ রাজধানীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। তবে হরতাল প্রত্যাখ্যান করে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা রাজধানীতে বাস চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।

গত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে ঘোষিত বেসরকারি ফলাফলে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী তাপস মোট ১ হাজার ১৫০ কেন্দ্রে ভোট পেয়েছেন ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৯৫। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫১২ ভোট। দক্ষিণ সিটিতে ভোট পড়েছে ২৯.০২ শতাংশ।

রাত ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মোট ১ হাজার ৩১৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১২৫৯ কেন্দ্রের ফলাফলে পেয়েছেন ৪ লাখ ৩০ হাজার ৯৮০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ২ লাখ ৫৩ হাজার ৮৬৩ ভোট। ভোটের ব্যবধান ১ লাখ ৭৭ হাজার ১১৭। ভোট পড়েছে ২৪.৩৬ শতাংশ।

এবার প্রথমবারের মতো দুই সিটিতে দলীয় প্রতীকে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ইভিএমের ভোটে অনেক বিড়ম্বনাও পোহাতে হয় ভোটারদের। উৎসবের ভোটে দিনভর বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে সাংবাদিকসহ প্রধান দুই দলের বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থক আহত হন। বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নয়াপল্টন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোট দেন ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে। ঢাকা উত্তর সিটিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আজমপুরের নওয়াব হাবীবুল্লাহ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দেন। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির তাবিথ আউয়াল ভোট দেন গুলশান-২ নম্বরে আল মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটিতে ধানমন্ডির ৭/এ-তে ড. মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন ভোট দেন গোপীবাগের আর কে মিশন রোডের শহীদ শাহজাহান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ভোট দেওয়ার সময় সব প্রার্থীই বিজয়ের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

গতকাল দিনভর ভোট গ্রহণ শেষে সন্ধ্যার পর থেকে দক্ষিণ সিটির বেসরকারি ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন। ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তর সিটির ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাসেম।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোট পড়েছিল ৩৭ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণে ৪৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের ভোটে ঢাকা উত্তরে টেবিলঘড়ি প্রতীকের প্রয়াত আনিসুল হক পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৬০ হাজার ১১৭ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বাস প্রতীকে তাবিথ আউয়াল পেয়েছিলেন ৩ লাখ ২৫ হাজার ৮০ ভোট। ঢাকা দক্ষিণে ইলিশ মাছ প্রতীকে সাঈদ খোকন পেয়েছিলেন ৫ লাখ ৫৩ হাজার ২৯৬ ভোট এবং মগ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বী মির্জা আব্বাস পেয়েছিলেন ২ লাখ ৯৪ হাজার ২৯১ ভোট।

উত্তরের অন্যান্য মেয়র প্রার্থীর ফলাফল : রাত ২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) প্রার্থী আহাম্মদ সাজেদুল হক রুবেল (কাস্তে) পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫৩১, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের (পিডিপি) শাহীন খান (বাঘ) পেয়েছেন ২ হাজার ২৩, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের শেখ মো. ফজলে বারী মাসউদ (হাতপাখা) পেয়েছেন ২৭ হাজার ২২৪ ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম) পেয়েছেন ৩ হাজার ৭১৪ ভোট।

দক্ষিণের অন্যান্য মেয়র প্রার্থীর ফলাফল : জাতীয় পার্টির হাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন মিলন (লাঙ্গল) পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৯৩, ইসলামী আন্দোলনের আবদুর রহমান (হাতপাখা) পেয়েছেন ২৬ হাজার ৫২৫, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) বাহরানে সুলতান বাহার (আম) পেয়েছেন ৩ হাজার ১৫৫, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আকতার-উজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ (ডাব) পেয়েছেন ২ হাজার ৪২১ এবং গণফ্রন্টের আবদুস সামাদ সুজন (মাছ) পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট।

ঢাকা উত্তরে মেয়র পদে ৭, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫১ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৭ জন নির্বাচনে অংশ নেন। উত্তরে ৫৪ ওয়ার্ডে ভোটার ছিল ৩০ লাখ ১২ হাজার ৫০৯ জন। ঢাকা দক্ষিণে ৭৫টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ছিল ২৪ লাখ ৫৩ হাজার ১৫৯ জন। এখানে মেয়র পদে ৭, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩২৬ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ৮২ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

তাবিথকে নিয়ে কাজ করবেন আতিক : ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম আতিক বলেছেন, ‘আমি সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। তাবিথকে নিয়েও কাজ করতে চাই। যে কোনো ভালো কাজ করতে গেলে সমালোচনা আসবেই। ঢাকার নানা সমস্যা সমাধানে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে চাই।’ গতকাল রাতে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

আতিক বলেন, ঢাকায় এডিস মশা, যানজট, জলজটসহ নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধানে দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে কাজ করতে হবে। এবারের নির্বাচনে হাড্ডাহাডি লড়াই হয়েছে। জনগণ যা রায় দিয়েছে, তা মেনেই কাজ করব।  ভোটারের উপস্থিতি কম কেন- জানতে চাইলে আতিক সাংবাদিকদের বলেন, এবারের নির্বাচনে যানবাহন চললে ভোটারের উপস্থিতি আরও বেশি হতো। মেয়র কোনো দলের নয়, মেয়র জনগণের। যিনি মেয়র হবেন, তিনি জনগনের হবেন। 

হরতালে সমর্থন দিল ঐক্যফ্রন্ট : ঢাকা দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে আজ সকাল-সন্ধ্যা ডাকা বিএনপির হরতালে সমর্থন জানিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে  জোটের দপ্তরপ্রধান জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, রবিবার রাজধানীর হরতালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং বিকল্পধারার একাংশের  চেয়ারম্যান অধ্যাপক নূরুল আমিন বেপারী সমর্থন দিয়েছেন।

হরতালে গণপরিবহন চলবে : হরতালে রাস্তায় গণপরিবহন চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েতুল্লাহ গণমাধ্যমে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘বিএনপির যেমন হরতাল পালন করার অধিকার রয়েছে  তেমনি আমাদেরও যানবাহন চালানোর অধিকার রয়েছে। হরতালে বিএনপি যদি কোনও পরিবহনের ক্ষতি করে তাহলে এর দায়িত্ব তাদেরই নিতে হবে।’ তিনি বলেন, হরতালের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা হলে মালিক-শ্রমিকরা তা প্রতিহত করবেন। ঢাকার সব টার্মিনালে মালিক-শ্রমিকরা সতর্ক অবস্থানে থাকবেন। সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর