রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে গণরুমের অব্যবস্থাপনায় হতাশ চীনের উহান থেকে ফেরা বাংলাদেশিরা। অপরিচ্ছন্ন টয়লেট, সারা দিনের খাবারের নোংরা জমে আছে ডাস্টবিনে। চিকিৎসকরা আসছেন না শারীরিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ গণরুমের মেঝেতে থাকা মানুষগুলো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, উহান ফেরত হাসপাতালে ভর্তি থাকা আটজন বাংলাদেশে সুস্থ রয়েছেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে কর্মরত চীনা নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত চীনে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। আশকোনা হজ ক্যাম্পে থাকা উহান ফেরত এক নারী জানান, ‘আমরা এক রুমে ৪৮ জন আছি। বিকাল ৪টা বাজলেও এখন পর্যন্ত আগের রাতের খাবারের প্যাকেটগুলো কেউ পরিষ্কার করতে আসেনি। টয়লেট ভীষণ নোংরা। একটা বিছানা থেকে আরেক বিছানার দূরত্ব মাত্র ১ মিটার। সরবরাহ করা হচ্ছে না মাস্ক। উহানে অবরুদ্ধ থেকে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলাম, ভেবেছিলাম দেশে আসলে ভালো থাকব। তাই ‘কোয়ারেন্টাইন’ অবস্থায় থাকতে আপত্তি ছিল না। কিন্তু এখানে যেভাবে রাখা হয়েছে তাতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হলেও ডেঙ্গু কিংবা ডায়েরিয়া হয়ে আমরা মারা যাব।’ হজক্যাম্পের মেঝেতে পাশাপাশি ম্যাট্রেস পেতে যেভাবে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে, তাতে উপসর্গ অপ্রকাশিত অবস্থায় কারও শরীরে ভাইরাস থেকে থাকলে অন্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে চীনের অবরুদ্ধ নগরী উহান থেকে গত শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফেরেন ৩১২ বাংলাদেশি। এর মধ্যে শরীরে তাপমাত্রা বেশি থাকায় ৭ জনকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে এবং একজনকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাকি দুজন পরিবারের সদস্য হিসেবে হাসপাতালে রোগীর সঙ্গে রয়েছেন। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে বাসে নিয়ে যাওয়া হয় আশকোনো হজক্যাম্পে। সেখানে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণ করা হবে তাদের। ঢাকা পৌঁছানোর পর কড়া নিরাপত্তার মধ্যে বিশেষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে করে যখন তাদের হজক্যাম্পে নেওয়া হচ্ছিল, স্বজনদের অনেকে ভিড় করেছিলেন বিমানবন্দরের বাইরে। তাদের অনেকে বাসের জানালার ওপাশ থেকে হাত নেড়ে ‘ভি’ চিহ্ন দেখিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। কিন্তু কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আশকোনায় পৌঁছে হজক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা দেখে তারা এখন নতুন করে ঝুঁকি অনুভব করছেন। হজক্যাম্পে থাকা এক শিক্ষার্থী জানান, আমাদের রুমে প্রায় ৭০ জন মানুষের জন্য একটি ওয়াশরুম। বালতিও একটি। পানিতে ভেসে যাচ্ছে ওয়াশরুমের মেঝে। প্রায় দুই দিন হয়ে গেলেও কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মী আসছেন না। অথচ এ রোগ থেকে বাঁচতে সব সময় পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। এখানে এসে আমরা বেশি বিপদে পড়ে গেলাম। উহান থেকে ফেরা এই ব্যক্তিদের পর্যবেক্ষণে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, ‘সাধারণত কোয়ারেন্টাইনে একসঙ্গে এত লোক থাকে না। তবে আমাদের এখানে ‘স্ট্রাকচারড কোয়ারেন্টাইন’ এখনো হয়নি বলে আপাতত তাদের এভাবে রাখা হচ্ছে। এখানেও কোনো সমস্যা তাদের হবে না। বাইরে থেকে কারও এখানে ঢোকার কোনো সুযোগ নেই। আর কারও মধ্যে অসুস্থতার লক্ষণ দেখা দিলেই তাকে আইসোলেশনে নিয়ে যাওয়া হবে।’
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘কোয়ারেন্টাইন’ যেন ‘সত্যিকার কোয়ারেন্টাইন’ হয় সেই চেষ্টা তারা করছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর ও সিএমএইচের একটি যৌথ মেডিকেল টিম আশকোনায় ২৪ ঘণ্টা কাজ করবে।’হাসপাতালে ভর্তি চীন ফেরত আটজন সুস্থ রয়েছেন : উহান ফেরত বাংলাদেশিদের মধ্যে যে আটজনকে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তারা সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, ফিরে আসা ৩১২ জনের মধ্যে সাতজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রাখা হয়েছে। আরেকজনকে নেওয়া হয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। তারা সবাই সুস্থ রয়েছেন। তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। আশকোনায় হজক্যাম্পে যাদের কোয়ারেন্টাইন রাখা হয়েছে তাদের সঙ্গে এখনই স্বজনদের দেখা করার কোনো সুযোগ নেই। চীনাদের ‘অন-অ্যারাইভাল ভিসা’ স্থগিত : করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে চীনা নাগরিকদের ‘অন-অ্যারাইভাল ভিসা’ সুবিধা এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে বাংলাদেশ। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাভাইরাস নিয়ে ‘বৈশ্বিক সতর্কতা জারি’ করায় বাংলাদেশ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাড়ছে আক্রান্ত, বাড়ছে মৃত : এ পর্যন্ত বিশ্বে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন ১৪ হাজার ৩০০ জন। মারা গেছেন ৩০৫ জন। চীনের বাইরে এ ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে ফিলিপাইনে একজন মারা গেছেন।