সোমবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ট্রিপল সেঞ্চুরিতে তামিমের ইতিহাস

আসিফ ইকবাল

ট্রিপল সেঞ্চুরিতে তামিমের ইতিহাস

২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ‘ডাউন দ্য উইকেট’ ব্যাট চালিয়ে যেভাবে ভারতীয় বোলারদের দুমড়ে-মুচড়ে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল, তখন তার বয়স মাত্র ১৮। আনকোরা এক তরুণের বিধ্বংসী ব্যাটিং দেখে তার মধ্যে অনেকেই আগামীর তারকা ক্রিকেটার খুঁজে পেয়েছিলেন। পথভ্রষ্ট হননি বাঁ হাতি তামিম। বরং সময়ের চোরা স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে, লড়াই করে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। দীর্ঘ এক যুগের ক্যারিয়ারে তামিম এখন বাংলাদেশের সেরা ক্রিকেটারদের একজন এবং ক্রিকেট বিশ্বের একজন প্রতিষ্ঠিত ওপেনারও। ম্যাচ জেতানোর অসাধারণ দক্ষতার জন্য ক্রিকেটপ্রেমীদের তাই সরল উক্তি, ‘তামিমের ব্যাট হাসলে হাসে পুরো বাংলাদেশ’।

বাংলাদেশকে বহু ম্যাচ জেতানোর নায়ক, ক্রিকেটপ্রেমীদের রংধনুর সাত রঙে সাজানো নায়ক তামিম গতকাল দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন এক ইতিহাস লিখেছেন। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিকও। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইতিহাসে বিসিএলে ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোনের বিপক্ষে ইসলামি ব্যাংক ইস্ট জোনের হয়ে ব্যাট হাতে খেলেছেন ৩৩৪ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস। ৫৮৫ মিনিট স্থায়ী ৩৩৪ রানের হার না মানা ইনিংসটি খেলতে তামিম বল খেলেন ৪২৬টি। সাজানো ছিল ৪২ চার ও ৩ ছক্কায়। অবশ্য প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে দেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরির নান্দনিক ইনিংস (৩১৩) খেলেছিলেন রকিবুল হাসান ২০০৭ সালে। তবে দেশের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরির মালিক জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার তারিকুজ্জামান মুনির।

ইস্ট জোনের অধিনায়ক মুমিনুল হক যখন ইনিংস ঘোষণা করেন, তখন মাঠে উপস্থিত গুটি কয়েক ক্রিকেটপ্রেমী ও প্রতিপক্ষ দলের ক্রিকেটাররা চমকে উঠেন। কিছু সময়ের জন্য থমকে দাঁড়ান তামিমও। দীর্ঘ সময়ের ক্লান্ত শরীরে ধীরে ধীরে সাজঘরের দিকে হাঁটতে থাকলে সবার আগে দৌড়ে অভিনন্দন জানান দেশের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান রকিবুল। এরপর দুই দলের ক্রিকেটাররা ইতিহাস লেখা তামিমকে অভিনন্দন জানান সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে। যদি না মুমিনুল ইনিংস ঘোষণা করতেন, তাহলে হয়তো বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে কোয়াড্রপোল (৪০০) সেঞ্চুরি করার বিরল রেকর্ডও গড়তে পারতেন। পৌনে ১০ ঘণ্টা স্থায়ী ইনিংসটি খেলেন আত্মবিশ্বাসের সর্বোচ্চ চূড়ায় দাঁড়িয়ে। ম্যাচের প্রথম দিন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তিনি। কিন্তু নামের পাশে লেখা হয়নি কোনো স্কোর। দ্বিতীয় দিন শেষ করেন ২২২ রানে অপরাজিত থেকে। গতকালের ইনিংসটি তার ৯০ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ইতিহাসে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর গড়ে। বাঁ হাতি ওপেনার ৩০০ রান করেন ৪০৭ বলে ৪০ চারে। ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরিটি করেন শুভাগত হোমকে শর্ট স্কয়ার লেগে ঠেলে। অসম্ভব ধৈর্য্যরে ইনিংসের ১০০ রান করেন ১২৬ বলে, ১৫০ করেন ১৮০ বলে, ২০০ রান করেন ২৪২ বলে এবং ২৫০ রান করেন ৩১৫ বলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে রাওয়ালপিি তে টেস্ট খেলতে টাইগাররা ঢাকা ছাড়বেন মঙ্গলবার। তার আগে দেশের সেরা ওপেনার নিজেকে নিয়ে গেছেন আত্মবিশ্বাসের চূড়ায়।

সর্বশেষ খবর