মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ভোট নিয়ে অস্বস্তি ইসিতে

ঢাকায় কেন্দ্রভেদে ভোট পড়েছে ৩ থেকে ৭৮ ভাগ, তিন ওয়ার্ডের ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ, চট্টগ্রাম সিটি ভোটে ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালট রাখার চিন্তা

গোলাম রাব্বানী

সদ্য অনুষ্ঠিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সর্বনিম্ন ভোট পড়েছে ৩ শতাংশ। দক্ষিণেও ভোট পড়ার হার এমনই। তবে সর্বোচ্চ ভোট পড়েছে ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ। প্রথম বারের মতো ইভিএমে অনুষ্ঠিত ঢাকার দুই সিটি ভোটে কম সংখ্যক ভোটার উপস্থিতি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নজিরবিহীন কম ভোটার উপস্থিতিতে অনেকটা লজ্জায় রয়েছে সাংবিধানিক এই সংস্থাটি। সর্বশেষ চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচন এবং ঢাকার সিটি নির্বাচনের ভোটার উপস্থিতির প্রেক্ষাপটে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ভোটে ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালট পেপার ব্যবহারের বিষয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু করেছে ইসি। এদিকে বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসি ও ভোটের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা, ভোটের নিরাপদ পরিবেশ না থাকার কারণে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না ভোটাররা। দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে কমছে ভোটার উপস্থিতির হার। ঢাকায় ১ ফেব্র“য়ারির নির্বাচনে ভোটের হার তুলনামূলক কম নিয়ে জোর আলোচনা সবখানে। খোদ নির্বাচন কমিশনও বলছে, এটা গবেষণার বিষয়। ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো কমিশনের দায়িত্ব নয়। নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশই মুখ্য। ভোটার টানার দায় প্রার্থীদের। রাজনৈতিক দলগুলো এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও দলের প্রতি পারস্পরিক দোষারোপ করছে। পর্যবেক্ষকরাও দিচ্ছেন নানা মত। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেছেন, ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার কারণ জানতে গবেষণা করতে হবে। সিটি নির্বাচনে সরকারি দলের অনেকেই (আওয়ামী লীগ) ভোট দিতে যাননি।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকার ভোটে উপস্থিতি কম থাকায় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালটও রাখা হতে পারে। এ বিষয়ে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারির কমিশন বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। কেননা চট্টগ্রাম এলাকায় সর্বশেষ যে উপনির্বাচন হয়েছে। সেখানে ভোট পড়েছে মাত্র ১৫ থেকে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তাই ওই এলাকার নির্বাচনগুলোতে আগামী ইভিএমের পাশাপাশি ব্যালটেও ভোট নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে অর্ধেক কেন্দ্রে ব্যালট আর অর্ধেক কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। আগামী মার্চের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম সিটিতে ভোট করার পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তরে একটি কেন্দ্রে ৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। ৩টি কেন্দ্রে ৫ শতাংশের কম এবং ৫৬টি কেন্দ্রে ৫ থেকে ৯ শতাংশ পর্যন্ত ভোট পড়েছে। সর্বোচ্চ ভোট পড়ে ৭৮ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট। একইভাবে দক্ষিণের ৫ শতাংশের কম ভোট পড়েছে অনেক কেন্দ্রে। আবার কোনো কেন্দ্রে ৭৯ শতাংশ ভোটও পড়েছে। জানা গেছে, দুই সিটিতে প্রায় ২৫০ ভোট কেন্দ্রে ৮/৯ ভাগ ভোটও পড়েছে। এ ছাড়া ১২ থেকে ১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে প্রায় ৩০০ ভোট কেন্দ্রে। যদিও ইসি জানিয়েছে, দুই সিটিতে গড়ে ২৭.১৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। উত্তরে ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ ও দক্ষিণে ২৯ দশমিক ০০২ শতাংশ ভোট পড়েছে। ৫ বছর আগে ২০১৫ সালের ব্যালটের নির্বাচনেও ঢাকা উত্তর সিটিতে ভোট পড়েছিল ৩৭ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটিতে ভোটের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৪০ শতাংশ।

গত ২২ জানুয়ারি এক লিখিত বক্তব্যে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, চট্টগ্রাম-৮ আসনের সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে সবগুলো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হয়। এতে ভোট পড়েছে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমবিহীন ব্যালট পেপারে যে ২৯৪টি আসনে ভোট হয়েছে, ভোটের হার যেখানে ছিল ৮০ শতাংশ, সেখানে ইভিএম ব্যবহারে ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ কম ভোট পড়েছে। এর কারণ ভোটারদের মনে আছে ইভিএমভীতি। তিনি বলেন, আমার মতে যে কোনো নির্বাচনে ৫০ শতাংশ ভোট না পড়লে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এ জন্য বিশ্বের অনেক দেশে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে পুনরায় ভোটগ্রহণ করা হয়।

কেন্দ্রের ফলাফল পাল্টে গেল চূড়ান্ত ঘোষণায়

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ড ৩১ নম্বরের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণায় কেন্দ্রের ভোটের ফল পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আলমগীর। এদিকে রবিবার ওয়ার্ড ৩১ নম্বরের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা স্থগিত ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন। একইভাবে দক্ষিণের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সঠিক ফলাফল ঘোষণা এবং ভোট পুনঃগননার জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে আবেদন করেন ঠেলাগাড়ি প্রতীকের সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী মো. বিল্লাল শাহ। এ ছাড়া ফলাফল পাল্টানোর অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির ৬ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত মো. সালাউদ্দিন রবিন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগও করেছেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর