মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
মন্ত্রিসভার বৈঠক

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কেউ যেন ঢুকতে না পারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, কোনোভাবেই যেন করোনাভাইরাস বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে করোনাভাইরাস নিয়ে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। ওই সভা থেকে বেশকিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বৈঠক শেষে সচিবালয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০-২৫ জনকে নিয়ে করোনাভাইরাস বিষয়ে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এখনো অনেক বাংলাদেশি চীন থেকে আসতে চাচ্ছেন। এর মধ্যে যারা উহান তথা উবাই প্রদেশ থেকে আসবেন তাদেরকে কোনোভাবেই ছাড়া যাবে না। তাদেরকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কোয়ারেন্টাইনে (পর্যবেক্ষণে) নিয়ে রাখতে হবে। সেখানে তারা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। কারণ আমরা এটা নিয়ে তো ঝুঁকি নেব না। তিনি জানান, ইতিমধ্যে যে ৩১২ জন উহান থেকে এসেছেন তাদেরকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। সেখানে খাওয়া-দাওয়া সবকিছু দেওয়া হচ্ছে। ইনিশিয়ালি তারা বোধহয় বুঝতে পারেননি তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তারা ভেবেছেন ছেড়ে দেওয়া হবে, বাড়িতে চলে যাবেন। ইয়াং ছেলেরা প্রথমে জানতেও চাচ্ছিল- আমাদের কেন আটকে রাখা হয়েছে? তাদের বোঝানো হলো এটা তো হাইলি রিস্কি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ইতিমধ্যে আসা ৩১২ জনের মধ্যে আটজনের শরীরে জ্বরের উপস্থিতি পাওয়ায় তাদেরকে সিএমএইচ ও অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তারা আইসোলেটেড, তবে তাদের রক্ত পরীক্ষায় কোনো ভাইরাস পাওয়া যায়নি। এর আগেও (২০/২৫ দিন আগে) দুজন উহান থেকে এসেছিলেন। তাদের একজন সেনা কর্মকর্তা, তাকে সিএমএইচে এবং অন্যজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তারা সুস্থ হওয়ার পর ফিরে গেছেন। বৈঠকে অধ্যাপক এবিএম আবদুল্লাহও ছিলেন। ওনারা বললেন এর আগের যে ভাইরাসগুলো ছিল সেগুলো এত দ্রুত ছড়ায়নি। এটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইবোলা ও অন্যান্য ভাইরাসের তুলনায় এর মৃত্যুহারও কম।

আনোয়ারুল ইসলাম জানান, চীন ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী ডাবল চেকআপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে ভায়া হয়ে যারা আসে তারা সেইফটি নিয়েই আসে। কারণ ব্যাংকক ও হংকংয়ে তো খুবই স্ট্রিক। কুয়ালালামপুর ও সিঙ্গাপুর হয়ে যারা আসে তাদের তো একটা ন্যাচারাল প্রটেকশন হয়। একবার সেখানে স্ক্যানিং হয়। এজন্য আমরা প্রটেকশন পাই। তারপরও আমাদের এখানে ডাবল প্রটেকশন সিস্টেম আছে।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, মানুষকে এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলতে হবে। এখন পর্যন্ত আল্লাহর রহমতে আমাদের এখানে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। আমরা খুব হাইলি প্রটেকশনে আছি। এগুলো বলতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, পদ্মা সেতুসহ বড় বড় প্রজেক্টে যারা আছেন তাদের মধ্যে যারা ১৮ জানুয়ারির পর চীন থেকে এসেছেন তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রেখে দিয়েছি। উহান বেইজ যেসব কর্মী রয়েছে আমরা তাদের না করে দিয়েছি, ক্লিয়ারেন্স না দিলে আসতে পারবে না। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের সঙ্গে চারটি ফ্লাইট। একটি কুনমিং থেকে আসে, দুটো আসে চায়না সাউদার্ন গুয়াংজু থেকে আর ইউএস-বাংলা চলে। সভায় বিমান সচিব জানিয়েছেন, ১০-১২ জনের বেশি প্যাসেঞ্জার হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ওরাই বন্ধ করে দেবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ১৭১ জনকে আনার বিষয়ে বেইজিংয়ে বাংলাদেশের দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা আসতে চায় ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। আমরা কী ফেসিলিটিস দেব সেটাও তাদের জানানো হবে। তবে চীন সরকার আক্রান্ত একজনকেও ছাড়বে না। ৩১৬ জন আসার কথা ছিল ওরা ৪ জনকে ছাড়েনি। যদিও তারা কনফার্ম না, খুব জ্বর ছিল, তারা রেখে দিয়েছে। ১৭১ জনকে চীন ছাড়পত্র দিলেই তারা আসতে পারবে।

কোম্পানি আইনের খসড়া অনুমোদন : বৈঠকে কোম্পানি (সংশোধন) আইন ২০২০ এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত এবং ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্ট বাংলাদেশ আইন এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, কোম্পানির নিবন্ধনের সময় সিলের নিবন্ধন করানোর বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে কোম্পানি আইনের একটি বিধান সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আইনটিকে অধিকতর ব্যবসাবান্ধব ও সহজ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিয়েছিল। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় এই আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়, বিভিন্নজনের মতামতও নেওয়া হয়। আনোয়ারুল ইসলাম জানান, রেজিস্ট্রেশনের সময় সিল থাকতে হবে এই বাধ্যবাধকতা বাদ দিলে ইজ অব ডুয়িং বিজনেসে ৬/৭ নম্বর বেড়ে যায়। তখন আমাদের র‌্যাঙ্কিং ওপরের দিকে চলে যাবে। সে চিন্তাভাবনা করে মন্ত্রিসভা এটিকে ভোটিংয়ে নেওয়ার শর্তে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর