বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
রোমে নাগরিক সংবর্ধনায় শেখ হাসিনা

জিয়া-খালেদা-এরশাদ কেউই বাংলাদেশের মাটির সন্তান নয়

প্রতিদিন ডেস্ক

জিয়া-খালেদা-এরশাদ কেউই বাংলাদেশের মাটির সন্তান নয়

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জিয়াউর রহমানের জন্ম বিহারে। এরশাদের (এইচ এম এরশাদ) জন্ম কুচবিহারে। খালেদা জিয়ার জন্ম শিলিগুড়ি। একজনও এই মাটির সন্তান না। তিনি বলেন, এই মাটির সন্তান এখন পর্যন্ত যতজন ক্ষমতায় এসেছেন, একমাত্র আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং আমি শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মাটির সন্তান। যেহেতু আমাদের মাটির টান আছে, এ জন্য আমাদের একটা কর্তব্যবোধ আছে। ইতালি সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোমের পার্কো দে প্রিন্সিপি গ্র্যান্ড হোটেলে ইতালি আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকের বুলেটে বাবা-মাসহ পরিবারের প্রায় সব সদস্যকে হারানোর কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে একটা কাজই করে যাচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যটা পরিবর্তন করতেই হবে। সেই কথা চিন্তা করে আমরা প্রত্যেকটি পদক্ষেপ নিচ্ছি। তিনি বলেন, আমাদের আর কেউ পেছনে টানতে পারবে না। আমরা সামনে এগিয়ে যাব। এটাই হলো সব থেকে বড় কথা। দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের যে কোনো জাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশ এখন অর্জন করেছে। এ দেশের সব উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়। বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে বিদেশিদের নেতিবাচক মনোভাবের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন একটা অবস্থা ছিল এক সময়, বাংলাদেশ শুনলে আগেই বলত ওহ বাংলাদেশ, ওখানে তো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মানুষ খেতে পায় না, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। বাংলাদেশটাকে একটা হেয় চোখে দেখত। যেটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ছিল। যেটা আমাদের জন্য কষ্টের ছিল। আর এক সময়ের ‘দাতা দেশগুলোও’ এখন বাংলাদেশকে আর ‘ভিক্ষা দিতে’ না এসে বরং ‘উন্নয়ন সহযোগী’ মনে করে সহযোগিতা করতে আসে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কারও কাছে আমরা ভিক্ষা চাই না। আমরা নিজেরা পারি সেটা প্রমাণ করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক চেয়েছিল আমাদেরকে বদনাম দিতে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। তারপর বলেছিলাম, ওটা আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করব। আজকে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করছি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামনে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অর্থনৈতিকভাবে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেছিলেন। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন। আমরা আজকে সেখানে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বিরোধী দলে থাকতেই তার প্রতিজ্ঞা ছিল, কোনো দিন সরকার গঠন করার সুযোগ পেলে বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করবেন। আজকে মুজিববর্ষে এসে এটুকু দাবি করতে পারি, আমরা কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে সেই জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছি। প্রবাসীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন, বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের জনগণ মাথা উঁচু করে চলবে। সেই মাথা উঁচু করে চলার মতোই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আপনাদেরও আচার-আচরণ ব্যবহার- সবকিছুতে সেটা বজায় রাখতে হবে। যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়।

বিচার বিভাগ জনগণের আস্থা অর্জন করেছে : জাতীয় সংসদের টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নের লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আইনের শাসন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করে বিচার বিভাগ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে। আমরা জনগণের মধ্যে এই বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে এবং প্রভাবমুক্ত থেকে বিচারকাজ পরিচালনা করছে।’ স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশনে গতকাল টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে ইতালি সফরে থাকায় নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বটি টেবিলে উত্থাপিত হয়। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অপরাধীর কোনো দল নেই। তার পরিচয় কেবলই অপরাধী। আর অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তার বিচার হবেই। প্রকৃত আসামিরা যাতে সাজা পায় এবং নিরপরাধরা যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সজাগ রয়েছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীকে খুঁজে বের করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে অপরাধী চিহ্নিত করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আমরা বিচার বিভাগে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত পাঁচ বছরে বিচার বিভাগ বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, সিলেটের শিশু রাজন ও খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলা, নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর সাত খুন মামলা এবং জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা মামলাসহ চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর রায় প্রদান করেছে।

এ ছাড়া হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা করে দেশি-বিদেশি নাগরিকদের হত্যা করে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং জঙ্গিবাদকে উসকে দেওয়ার চক্রান্ত করা হয়েছিল। হোলি আর্টিজান মামলায় সাতজন আসামির মৃত্যুদন্ডের রায় প্রদান করে বিচার নিষ্পত্তির মাধ্যমে এই চক্রান্তকে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

সংসদ নেতা বলেন, ফেনীর নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলা, ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলের ছাত্রী সুমাইয়া রিশা হত্যা মামলা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম রাজীবের মামলা, গাইবান্ধার সংসদ সদস্য লিটন হত্যা মামলাসহ বহুল আলোচিত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। বিচার বিভাগের মাধ্যমে দ্রুততার সঙ্গে এসব মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সর্বশেষ খবর