বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ

স্বশাসিত সংস্থার উদ্বৃত্ত অর্থ কোষাগারে নিতে বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

তীব্র বিরোধিতা ও বিরোধী দলের ওয়াকআউটের মধ্যে সংসদে পাস হয়েছে দেশের ৬১টি সংস্থার তহবিল থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে থাকা বিপুল পরিমাণ উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা বা স্থানান্তরের নতুন আইন। আইনটিকে নজিরবিহীন, কালো ও জনস্বার্থবিরোধী হিসেবে অভিহিত করে সংসদে বিরোধীদলীয় সদস্যরা তীব্র প্রতিবাদ জানান। তারা বিলটি পাস না করে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানান। এমনকি প্রতিবাদ হিসেবে বিলের ওপর আনা দফাওয়ারি প্রস্তাবগুলো উত্থাপন থেকে বিরত থাকেন। বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিলটি পাস করা হলে খারাপ নজির হয়ে থাকবে। এর পরও বিলটি পাসের প্রস্তাব করা হলে তারা ওয়াকআউট করেন। ‘স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন ফাইন্যানশিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০২০’ শীর্ষক বিলটি সংসদে পাস হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ সংসদের ষষ্ঠ অধিবেশেনের গতকালের বৈঠকে বিলটি কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে বিলের ওপর আনীত জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণের প্রস্তাবের পক্ষে বক্তব্য দিতে দাঁড়িয়ে বিরোধীদলীয় সদস্যরা বিলটির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে পাস না করার দাবি জানান। একই সঙ্গে বিলটিকে আইন ও গণবিরোধী হিসেবে উল্লেখ করে প্রত্যাহার করে নেওয়ার দাবি জানান। পরে কণ্ঠ ভোটে এসব দাবি/প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। একইভাবে সংশোধনী প্রস্তাবসমূহ উত্থাপন করতে দাঁড়িয়ে বিরোধীদলীয় এমপিরা বিলটিকে কালো আইন ও ন্যক্কারজনক হওয়ার অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ হিসেবে বিলের ওপর আনা দফাওয়ারি প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা থেকে বিরত থাকেন। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বক্তাদের অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে এ আইনের উপকারিতা দেখার জন্য ছয় মাস সময় প্রার্থনা করেন। বিলটি পাসের সময় বিরোধী দলের সদস্যরা ওয়াকআউট করেন। বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনীর প্রস্তাব আনেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, শামীম হায়দার পাটোয়ারী, নাজমা আক্তার, বিএনপির হারুনুর রশীদ ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এবং গণফোরামের মোকাব্বির খান। এর আগে বিলটির বিরোধিতা করে বক্তারা বলেন, সরকার টাকা ধার নিয়ে ব্যাংক খালি করে ফেলেছে। দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে গেছে কিন্তু অর্থমন্ত্রী কোনো টাকা উদ্ধার করতে পারেননি। অর্থবাজারে ধস নেমেছে। ৪৮ হাজার কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেছে। কোথাও টাকা নেই। ৩৬ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে না পেরে তিনি এখন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের দিকে নজর দিয়েছেন। কিন্তু আইনত পাবলিক মানিতে তিনি কোনো সময়ই হাত দিতে পারবেন না। এটা করলে পলিটিক্যালি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিলের বিধান অনুযায়ী, সংস্থার বার্ষিক পরিচালন ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বার্ষিক ব্যয় নির্বাহের অর্থ, আপৎকালীন ব্যয়ের জন্য বার্ষিক পরিচালন ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থের অতিরিক্ত উদ্বৃত্ত অর্থ প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। বিলে নয়টি ধারা ও একটি তফসিল রয়েছে। তফসিলে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তবে তফসিল সংশোধনেরও সুযোগ রাখা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সটবুক বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও দিনাজপুর; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি বগুড়া, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক), জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি), পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), বাংলাদেশ সেরিকালচার বোর্ড, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ, রাজশাহী), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ টেক্সাইল মিলস করপোরেশন (বিটিএমসি), বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি), বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ চা বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি), বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), চট্টগ্রাম ওয়াসা, ঢাকা ওয়াসা, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও বাংলাদেশ টেলি রেগুলেটরি কমিশন।

সর্বশেষ খবর