বৃহস্পতিবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি দেশে

চীন থেকে ফেরার আকুতি ১৭২ জনের । মৃত ৪৯০

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোনো রোগী পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চীন ফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা হয়েছে। যাত্রীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আরও ১০ চিকিৎসককে পদায়ন দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ১৬ দিনে চীন থেকে ঢাকায় ফিরেছেন ৭ হাজার ২৮৪ জন। এদিকে, চীনে মৃতের সংখ্যা ৫০০ ছুঁই ছুঁই। গতকাল একদিনেই মারা গেছেন ৬৫ জন। এ নিয়ে ৪৯০ জনের মৃত্যু হলো।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, অতিরিক্ত ১০ চিকিৎসক নিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে পদায়নকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়াল ১৯ জনে। এখন থেকে প্রতি বেলায়  কমপক্ষে তিনজন করে চিকিৎসক সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো যাত্রীর গায়ে জ্বর ও শরীর খারাপ শুনলেই চিকিৎসকরা তাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেবেন।

করোনাভাইরাসের কারণে চীনের উহান থেকে ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ অনেককে ফিরিয়ে আনা হলেও হুবেই প্রদেশে এখনো আটকে আছেন আরও বাংলাদেশি। নিরাপদ পানিসহ খাবার সংকটে চরম মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় দেশে ফিরতে বাংলাদেশ সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। উহানের পার্শ্ববর্তী শহর ইচাংয়ের চায়না থ্রি গর্জেজ ইউনিভার্সিটি থেকে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়া হলেও এখনো দেড় শতাধিক বাংলাদেশি আটকে আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের দোকানপাট বন্ধ থাকায় পানি ও খাবারের মারাত্মক সংকটে পড়েছেন তারা। ভিডিও বার্তায় শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এখনো কেউ আক্রান্ত হইনি। আমাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রায় ১০ দিন ১৭২ জন বাঙালি বন্দী অবস্থায় দিন পার করছি। বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি আমাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য। 

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুতি বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আইইডিসিআর পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চীনে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় ২১ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৬ দিনে ৭ হাজার ২৮৪ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। বিমানবন্দরে যাত্রী এলে সে সময়েই স্ক্রিনিং করা হয়ে থাকে জ্বর বা অন্য কোনো লক্ষণ আছে কি না দেখার জন্য।

গত ২৪ ঘণ্টায় আইইডিসিআরের হটলাইনে ২৯০টি কল এসেছে। এর মধ্যে ২৬৬টি কল এন করোনা সংক্রান্ত লক্ষণ, উপসর্গ সম্পর্কে জানতে ও জানাতে। এ পর্যন্ত ৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। চীন ফেরত বাংলাদেশিদের হজ ক্যাম্পে ‘কোয়ারেন্টাইন’ পর্যবেক্ষণ কার্যক্রম চলছে। চীন ফেরতদের মধ্যে তিনজন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছেন। সর্বশেষ যিনি ভর্তি হয়েছিলেন, তাকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণ তার মধ্যে নেই। বাকি দুজন ভিন্ন কারণে ভর্তি আছেন, একজন মাথাব্যথা, আরেকজন একটু ব্যথা পেয়েছিলেন বলে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। হজ ক্যাম্পে সুষ্ঠুভাবে কোয়ারেন্টাইন কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, এই রোগটি সাধারণ সর্দি জ্বরের মতো। এখানে বিশেষ কোনো চিকিৎসা যেমন নেই, প্রয়োজনও নেই। চিকিৎসা দেওয়া হয় আক্রান্তের উপসর্গের ভিত্তিতে। অন্য জটিলতা অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে।

 হজ ক্যাম্পে এক ঘরে এতজন থাকাটা মান অনুযায়ী ঠিক কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এক রুমে এতজন রাখার বিষয়টিতে আমাদের কোনো বিকল্প ছিল না। যদি আমরা আলাদা রুমে রাখতে পারতাম, সেটাই ভালো সমাধান হতো। যারা হজ ক্যাম্পে আছেন, তারা কিন্তু কেউ অসুস্থ নন। তাদের মধ্যে কোনো লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। তাই তাদের মধ্য থেকে এটি ছড়ানোর আশঙ্কা অনেক কম। তবু আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মতো সতর্ক আছি।

তাদের নিয়ে একটা কমিটি আছে, প্রতিনিয়ত যোগাযোগ হচ্ছে।  প্রথম দিন হঠাৎ করে কিছু ক্ষেত্রে ব্যত্যয় ছিল, এখন অব্যবস্থাপনার অবকাশ নেই।

স্থলবন্দরে স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, স্থলবন্দরে স্ক্রিনিং ব্যবস্থার জন্য যে উপজেলা ও জেলায় স্থলবন্দর তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে চীন ছাড়া অন্য কোনো দেশে লোকাল ট্রান্সমিশন হয়নি। ভারত, মিয়ানমারে এটি ছড়ালে তার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে স্থলবন্দর অত বেশি আশঙ্কার জায়গা নয়।

সর্বশেষ খবর