রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

থেমে গেছে সব অভিযান

ক্যাসিনোকান্ডের মূল গডফাদাররা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, নতুন কোনো অভিযানের প্রস্তুতি নেই, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজরা আবারও বেপরোয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা দখলবাজ ও টেন্ডারবাজদের বিরুদ্ধে সব অভিযান থেমে গেছে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের কার্যক্রম ধরে রেখেছে আলাদাভাবে। ক্যাসিনোকান্ডের সময় সরকারি দলের কিছু প্রভাবশালী আটক হলেও বাকিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাউন্সিলর ক্যাসিনো সাঈদ মাঝখানে দেশে ঘুরে গেলেও তাকে আটক করতে পারেনি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। অন্যদিকে বিদেশে অবস্থানরত যুবলীগের আনিস আদালতে অনুমতি চেয়েছেন দেশে ফেরার। আদালত অবশ্য তা নাকচ করে দিয়েছে।

জানা গেছে, অভিযান শুরুর পর রাজধানী ঢাকা ও বাইরের সন্ত্রাসী, গডফাদার, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজরা গা-ঢাকা দিয়েছিল। এখন আবার সবাই ফিরতে শুরু করেছে। অনেকে জড়িয়ে পড়েছে অপরাধমূলক কার্যক্রমে। সর্বশেষ সিটি নির্বাচনের সময় অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসীর তৎপরতা দেখা গিয়েছিল। এ ছাড়াও সরকারি অফিস-আদালতে প্রবেশ করেছে নতুন টেন্ডারবাজরা। এলাকাভিত্তিক চাঁদাবাজরাও সক্রিয়। সরকারি দলের নাম ভাঙিয়ে অনেকে বেপরোয়া অবস্থান নিয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ক্যাসিনো অভিযানের সময় যেভাবে জিরো টলারেন্সে ছিল তা এখন আর নেই। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজরা নতুন করে অনেকে জেগে উঠছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি অফিসগুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বিশেষ কিছু গ্রুপ। দায়িত্বশীল একাধিক সূত্রের মতে, আগের গ্রুপ চলে গেছে, জন্ম হয়েছে নতুন গ্রুপের। এখনই সতর্কতামূলক অবস্থান না দেখালে অচিরেই বেপরোয়া নতুন সন্ত্রাসী গ্রুপ নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ আরও নষ্ট করতে পারে। এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান গতকাল এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান কতটুকু বাস্তবসম্মত হচ্ছে তা নির্ভর করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতার ওপর। কারণ, যাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে তারা এককভাবে জড়িত নয়। তাদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু লোকজন ছিল, জনপ্রতিনিধির একাংশ ছিল। এটি একটি নেটওয়ার্কের মতো বিস্তৃত। এই নেটওয়ার্কে জড়িতদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কতটুকু লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে সেই প্রত্যাশায় আছে দেশবাসী। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, এসব অভিযান সপ্তাহ, পক্ষ বা মাসব্যাপী নয়, নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে হবে। মশক নিধনের মতো মৌসুমি অভিযান হলে চলবে না। তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজ, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী, মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সিটি নির্বাচনের কারণে সরকার হয়তো কিছু দিন ব্যস্ত ছিল। এখন আবার অপরাধবিরোধী অভিযানে নামতে হবে।    মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেছেন, ক্যাসিনোবিরোধী যে অভিযান আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, এটা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শুরু থেকেই এক ধরনের সন্দেহ কাজ করছিল যে, এ অভিযান চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে কিনা। আজকে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হলো, সেই অভিযান থেকে আসলে অর্জনটা কী ছিল। এ ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আজকের ঢিলেঢালা অবস্থাই প্রমাণ করে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। রাজনীতির নানা মারপ্যাঁচের কারণে সুবিধাভোগীদের গায়ে কোনো ধরনের আঁচড় লাগেনি। যারা মূল কলকাঠি নাড়েন, যারা উপরে বসে সুবিধা নিয়ে থাকেন তাদের মানসিকতাই হলো যে, তাদের কিছুই হবে না। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা অবস্থার কারণে দুষ্কৃতকারী যারা, অপরাধী যারা, তারা এক ধরনের মানসিকতা নিয়ে থাকেন যে, তারা পার পেয়ে যাবেন। এতে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। যার কারণে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বন্ধ হয় না। এমন বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আর আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার মানসিকতা যেমন অসহনীয়, তেমনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঢিলেঢালা অবস্থাও কাক্সিক্ষত না। এ কারণে কী পরিস্থিতির তৈরি হয় সমাজ জীবনে, নির্বাচনে এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর