রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
মৃত ৬৩৮, আক্রান্ত ৩১ হাজার

দেশে ঢুকতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক

১৭১ জনকে এখন ফেরত আনা যাচ্ছে না : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের যে কোনো দেশ থেকে কেউ বাংলাদেশে ঢুকলে বন্দরে ‘স্ক্রিনিং’ স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। গতকাল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এতদিন শুধু চীন থেকে আসা ব্যক্তিদের ‘স্ক্রিনিং’ করা হলেও এখন তার পরিসর বাড়ানো হচ্ছে। রংপুরে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে চীন ফেরত এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। চীন থেকে এরই মধ্যে ২৮টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছেন ৩১ হাজার মানুষ। এর মধ্যে মারা গেছেন ৬৩৮ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন দেশ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চীন ছাড়া আরও কয়েকটি দেশে স্থানীয়ভাবে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বিমানবন্দরে আসা সব উড়োজাহাজের যাত্রীদের স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে।

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানারের মধ্য দিয়ে যেতে হবে যাত্রীদের। আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ‘আসলে চীন এবং আরও কয়েকটি দেশের যাত্রীদের এই স্ক্রিনিং কার্যক্রমে আনলেই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আমরা অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে এটা চালু করেছি। এটা সব দেশের ফ্লাইটের ক্ষেত্রেই শুরু হয়েছে। তবে এ নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই, এটা বাড়তি সতর্কতা।

বাংলাদেশের সব বন্দরে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং করার সক্ষমতা স্বাস্থ্য অধিদফতরের আছে কিনা- এ প্রশ্নে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আমরা এয়ারলাইনসগুলোর সহযোগিতা নিচ্ছি। ফ্লাইটের মধ্যে যে ডিক্লেয়ারেশন ফর্ম দেওয়া হয়, তাতে এয়ারলাইনসগুলো সহায়তা করে। আমরা সম্মিলিতভাবেই করছি। এখানে এয়ারলাইনসগুলোর সহযোগিতা খুবই জরুরি। যে বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার নেই, সেখানে আমরা হ্যান্ডহেল্ড স্ক্যানার দিয়েছি। থার্মাল স্ক্যানার এবং হাত দিয়ে যেটা করা হয়- দুটোর কার্যক্রম একই।’ বিমানযাত্রীদের বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের মধ্য দিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যের একটি কার্ড পূরণ করতে হচ্ছে। থার্মাল স্ক্যানারে পরীক্ষায় কোনো যাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি পাওয়া গেলে তাকে প্রথমে বিমানবন্দরের পর্যবেক্ষণ কক্ষে রাখা হচ্ছে। পরে প্রয়োজনে তাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চীন থেকে কেউ জ্বর না নিয়ে এলেও আসার ১৪ দিনের মধ্যে যদি কারও জ্বর আসে, তাদের আইইডিসিআরে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গতকাল সকাল পর্যন্ত ৮ হাজার ৪৮৪ জনকে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করলেও কারও দেহে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। চীনের উহান থেকে আসা ৩১২ বাংলাদেশির মধ্যে আশকোনা হজ ক্যাম্পে থাকা ৩০১ জনের সবাই সুস্থ আছেন। সিএমএইচে থাকা ১১ জনের অবস্থাও ভালো। 

চীন থেকে ১৭১ জনকে আনা সম্ভব নয় : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, চেষ্টা থাকলেও নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর আতঙ্কিত ১৭১ জন বাংলাদেশিকে চীন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। ওই বাংলাদেশিদের অন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশি (সেন্টার ফর এনআরবি) আয়োজিত ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ- ২০২০’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। এতে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর এনআরবি সভাপতি এম এস সেকিল চৌধুরী। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস চীনের যে নগরী থেকে ছড়িয়েছিল সেই উহান থেকে গত ১ ফেব্রুয়ারি ৩১২ বাংলাদেশিকে বিমানের একটি উড়োজাহাজ ফেরত নিয়ে আসে। কিন্তু তারপর ওই পাইলটদের অন্য দেশ ঢুকতে দিতে না চাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিমান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা এখন আসতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য আমরা অনেক খরচ করেছি। তারপরও সম্ভব হচ্ছে না। বিমানের ক্রুরা কেউ বাইরে যেতে পারছে না, বিমান কোথাও যেতে পারছে না। সিঙ্গাপুরে পর্যন্ত যেতে পারছে না। একমাত্র চাইনিজ চার্টার্ড ফ্লাইটে তাদের আনা সম্ভব হতো। একপর্যায়ে চীন রাজিও হয়েছিল। কিন্তু পরে তারা না করে দিয়েছে। আমরা তো কোনো ফ্লাইট পাঠাতে পারছি না। কোনো ক্রুও যেতে চাচ্ছেন না। চীনে থাকা নাগরিকদের আরও অন্তত কিছু দিন সেখানে থেকে পরে দেশে ফিরতে হবে।

চীনফেরত শিক্ষার্থী রংপুর মেডিকেলে : চীনফেরত এক শিক্ষার্থী শ্বাসকষ্ট নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ওই শিক্ষার্থীর নাম তাশদীদ হোসেন (২৫)। গতকাল তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজু। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাশদীদ চীনের আনহুই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। গত ২৯ জানুয়ারি তাজদীদ চীন থেকে নেপাল হয়ে বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসেন। এরপর নীলফামারীর বাড়িতে অবস্থানকালীন তার জ্বর ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখা দিলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। হাসপাতালে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নুরন্নবী লাইজু বলেন, চীন থেকে আসায় আমরা তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখেছি। মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকদের নেতৃত্বে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তিনি করোনাভাইরাস আক্রান্ত কিনা তা নিশ্চিত হতে রক্ত পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আইইসিডিআরে পাঠানো হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ে দুশ্চিন্তায় পরিবার : পড়াশোনার জন্য চীনে অবস্থানকারী ঠাকুরগাঁওয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে তাদের পরিবার। ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে শতাধিক শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী রয়েছেন চীনে। ভাইরাসের খবর প্রচার হওয়ার পর থেকেই দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক বেড়ে চলেছে স্বজনদের।

সর্বশেষ খবর