রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

প্যারোলে আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের যে কোনো উপায়ে মুক্তি চায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

প্যারোলে আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের যে কোনো উপায়ে মুক্তি চায় বিএনপি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অপরাধ ও শাস্তি মেনে নিয়ে সরকারের কাছে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করলে আপত্তি নেই আওয়ামী লীগের। তবে কিছু শর্ত মেনে নিতে হবে। মুক্তি নিয়ে চিকিৎসার পরিবর্তে ‘রাজনীতি’ করার সুযোগ দেবে না ক্ষমতাসীন দলটি। অন্যদিকে যে কোনো প্রক্রিয়ায় দল প্রধানের মুক্তি চায় বিএনপি। তারা মনে করছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাই তার জীবন রক্ষার জন্য মুক্তিই প্রধান লক্ষ্য। এমনকি পরিবারের সদস্যরাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন করেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির বিষয়টি ইতিবাচক দিকেই যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সূত্রমতে, বিএনপির ভিতরে আলোচনা আছে- উন্নত চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কারাবন্দী খালেদা জিয়া বিদেশ যাবেন। এ নিয়ে বিএনপি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা চলছে। খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরাও এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। বিএনপি চায়, সরকার খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠালে তাদের কোনো আপত্তি নেই। শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের সার্বিক সহযোগিতা চায়। বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্র্মীরা সুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতে চান। এ জন্য সরকার যে কোনো উদ্যোগ নিলে তাদের আপত্তি থাকবে না।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বেগম জিয়া কারাগারে খুবই অসুস্থ। আমরা মানবিক কারণে তার মুক্তি দাবি করছি। আশা করছি, সরকার আর এতে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। বেগম জিয়ার কারামুক্তিই এ মুহূর্তে আমাদের কাছে মুখ্য বিষয়।’

অন্যদিকে কারাবন্দী খালেদা জিয়া সুস্থতার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে চাইলে আপত্তি করবে ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মীরাও। তারা বলছেন, আগে নিজের দোষ স্বীকার করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হবে। অন্যথায় চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি নিয়ে দেশের মাটিতে বসে রাজনীতি করবে সে সুযোগ দেওয়া হবে না। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া যদি সরকারের কাছে প্যারোল মুক্তি চায় এবং সরকারের কাছে যদি যুক্তি সঙ্গত মনে হয় তাহলে দিয়ে দিতে পারে। এতে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ কোনো আপত্তি করবে না। বিষয়টি খালেদা জিয়া এবং সরকারের ওপর নির্ভর করছে। দলীয় বিষয় নয়।’ বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা রেখে রাজপথেও থাকবে বিএনপি। কোনো কারণে সরকার রাজি না হলে আন্দোলনের মাধ্যমেই বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে চায় দলটি। এ জন্য দল গোছানোতেও মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে বিএনপির জেলা পর্যায়ের প্রায় সব সাংগঠনিক কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিও দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করা হচ্ছে। এদিকে বিএনপির নেত্রীর মুক্তির জন্য রাজপথের আন্দোলনে কোনো লোক সাড়া দেবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিএনপি সব কিছুই লোক দেখানোর জন্য করে থাকে। তারা আন্দোলনের ডাক দিলেও রাস্তায় একজন কর্মীও নামেনি। কারণ সবাই জানে খালেদা জিয়া কেন আটক রয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘এতদিন তারা বলল, সরকার জোর করে আটক রেখেছে। তারা এখনো আবেদন করেনি কিন্তু প্যারোল নিয়ে কথা বলছে। তারা আগে সরকারের কাছে আবেদন করুক। আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা আবার ম্যাডামের জামিনের দরখাস্ত করব। আমরা বিশ্বাস করি, হাই কোর্ট দেশের জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল। সেখানে আমরা এবার জামিনের আবেদন যদি করি, অবশ্যই জামিন লাভ করব।’ কবে নাগাদ জামিন আবেদন করবেন- জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার বলেন, ‘সিনিয়র আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে আশা করি চলতি সপ্তাহেই বেগম জিয়ার জামিন আবেদন করব। এ প্রসঙ্গে খালেদা জিয়ার সেজো বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, মেডিকেল বোর্ড যেন বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারকে সুপারিশ করে সে জন্যই এ আবেদন। আবেদনে আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে চেয়েছি। আর বলেছি, খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। খালেদা জিয়া বিদেশ যেতে রাজি হবেন কিনা- এমন প্রশ্নে সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘তাঁর সম্মতি থাকবে। তাঁর অবস্থা এতই খারাপ যে, পাঁচ মিনিটও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। বাঁ হাত সম্পূর্ণ বেঁকে গেছে। ডান হাতের অবস্থাও খারাপ। চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। পায়ে কোনো সাপোর্ট রাখতে পারছেন না।’ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, প্যারোল হচ্ছে নিজের অপরাধ ও শাস্তি মেনে নিয়ে মুক্তির আবেদন। তবে এখন পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে প্যারোলের কোনো আবেদন করা হয়নি। বেগম জিয়া কোনো রাজনৈতিক বন্দী নন, তিনি দুর্নীতির দায়ে সাজা ভোগ করছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর