শিরোনাম
রবিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
দক্ষিণখানে মা ও দুই সন্তান খুন

ঘটনা রহস্যাবৃত পুলিশ খুঁজছে গৃহকর্তাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর দক্ষিণখানে মা ও দুই শিশুসন্তানের খুনের রহস্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। খোঁজ মিলছে না নিহত মুন্নী বেগমের স্বামী গৃহকর্তা রাকিব উদ্দীন ভূঁইয়া লিটনেরও। তবে পুলিশ সন্দেহ করছে, এই তিন খুনের সঙ্গে লিটন জড়িত। তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই ফ্ল্যাটটি তালাবদ্ধ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। সেদিন থেকেই লিটনেরও কোনো খোঁজ নেই। অন্যদিকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে লাশগুলোর ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক বলেছেন, দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাদের মাকে মাথায় ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় দক্ষিণখানের ৮৩৮ নম্বর প্রেমবাগানের চতুর্থ তলার বাসা থেকে মুন্নী বেগম (৩৭) এবং তার দুই সন্তান ফারহান উদ্দিন (১২) ও লাইভা ভূঁইয়ার (৩) অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। দক্ষিণখান প্রেমবাগান রোড থেকে একটু সামনে গেলেই কেসি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। স্কুল পার হলেই সামনে সরু গলি। গলির ডান পাশের দুটি বাড়ির পরই ‘আশ্রয়’ নামের একটি চারতলা বাড়ি। ৮৩৮, প্রেমবাগান হোল্ডিংয়ের এই চারতলা বাড়ির ডান পাশের ফ্ল্যাটেই মিলেছে দুই সন্তানসহ মায়ের অর্ধগলিত মৃতদেহ। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন লিমিটেডের (বিটিসিএল) উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিব উদ্দীন ভূঁইয়া প্রায় ১০-১২ বছর ধরে এই ফ্ল্যাটে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বাস করে আসছিলেন। গতকাল সরেজমিন ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ফ্ল্যাটটি সিলগালা করে রেখেছে পুলিশ। বাড়ির চারপাশে অসংখ্য উৎসুক মানুষের ভিড়। তাদের চোখেমুখে অজানা আতঙ্ক। বাড়ির অনেক বাসিন্দার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। তবে তাদের কেউই ধারণা করতে পারছেন না কেন এই হত্যাকান্ড। তারা বলছেন, লিটন-মুন্নী সুখী দম্পতি। বাসা থেকে পচা গন্ধ এলে বাড়িওয়ালার সন্দেহ হয়। সোহেল তার বোন মুন্নীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে বাড়িওয়ালাকে সঙ্গে নিয়ে চতুর্থ তলার ডান পাশের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভিতরে তিনজনের লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন। ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা শায়লা আক্তার বলেন, মুন্নী-লিটন দম্পতির সন্তান ফারহানের সঙ্গে একই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে তার সন্তান। এই দম্পতি সম্পর্কে তার ভালো জানা আছে। কখনো তাদের অসুখী মনে হয়নি। তবে স্থানীয় বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, লিটন খুব ঋণগ্রস্ত ছিলেন। কেসি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল বাতেন বলেন, ফারহান চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। গত কয়েক দিন সে স্কুলে আসেনি। স্কুলে অনেক ছাত্র-ছাত্রী। তাই আলাদাভাবে খোঁজ নেওয়া হয়নি। মনে হয়েছিল সে অসুস্থ। তবে শুক্রবার রাতে ঘটনা শোনার পর থেকেই তারা শোকাহত বলে জানান তিনি। নিহত মুন্নী বেগমের ভাই সোহেল বলেন, ‘লিটন অনেক ঋণগ্রস্ত। মাস তিনেক আগে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। চার-পাঁচ দিন পর তাকে তার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পাওয়া যায়। এ নিয়ে কোনো জিডি কিংবা মামলা হয়নি। আমার বোন ও লিটনের মধ্যে খুব ভালো সম্পর্ক ছিল বলেই জানতাম। আমরা এখনো বুঝতে পারছি না কারা এবং কেন তাদের হত্যা করল। পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘লিটনকে আমাদের খুব প্রয়োজন। মাস তিনেক আগে তিনি অপহৃত হয়েছিলেন এ কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এর কোনো ডকুমেন্টস পাওয়া যায়নি। খুনিদের আমরা খুব শিগগিরই আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

ময়নাতদন্ত সম্পন্ন : গতকাল দুই সন্তানসহ মায়ের ময়নাতদন্ত শেষে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রভাষক এ কে এম মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মাকে মাথায় ভারী কোনো বস্তু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। তার মাথায় কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ছেলেটির গলায় চিকন রশি বা ফিতে দিয়ে শ্বাস রোধ করা হয়েছে। আর মেয়েটির গলায় আঙ্গুলের দাগ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর