শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

নির্বাচনী প্রচারণায় নিয়ন্ত্রণ আনতে চায় ইসি

পোস্টার মাইকিং নির্দিষ্ট স্থানে, শোভাযাত্রা ও পদযাত্রা সীমাবদ্ধ তোরণ নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা, রাস্তা-ফুটপাথে নির্বাচনী কাজ নিষিদ্ধ

গোলাম রাব্বানী

ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে প্রচার-প্রচারণায় নিয়ন্ত্রণ আনতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পোস্টারিং, মাইকিং ও জনসভা, শোভাযাত্রা, পদযাত্রার জন্য স্থান নির্ধারিত করে দেওয়ার পরিকল্পনাও নিয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থীরা ২১ জায়গায় পোস্টার লাগতে পারবেন। রাস্তায় রাস্তায় মাইকিংয়ে থাকবে নিষেধজ্ঞা। তবে নির্ধারিত জায়গায় পর্যায়ক্রমে মাইকিং করতে হবে প্রার্থীদের। ফুটপাথ দখল করে চলবে না কোনো নির্বাচনী কাজ। পথসভা করা যাবে না রাস্তায়। এ জন্য ইসি পাঁচটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। শব্দদূষণ ও পরিবেশদূষণ বন্ধ করতেই ইসি এমন উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টায় ঢাকা-১০ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইসি। সভায় প্রার্থীদের সঙ্গে সমঝোতা হলে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে কমিশন। তবে প্রচারণার এ পাইলট প্রজেক্ট সফল হলে আসন্ন চট্টগ্রাম সিটিসহ পরবর্তী বিভিন্ন নির্বাচনে পোস্টার, মাইকিংয়ের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনবে কমিশন। প্রয়োজনে আইনের সংস্কারও করতে চায় সংস্থাটি।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে ৩০৪ মিলিয়ন অর্থাৎ সাড়ে তিন কোটি পোস্টার ছাপা হয়, যার ওজন ছিল প্রায় ৩৩ মেট্রিক টন। এই বিপুল পরিমাণ পোস্টারের কিছু ইতিমধ্যে ড্রেনে গিয়ে পড়েছে। বাকিগুলো পোড়ানো হলে ব্যাপক বায়ুদূষণ হবে। পাশাপাশি ঢাকা মহানগরীর জলাবদ্ধতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সব প্রার্থী আলাদা আলাদা স্ট্যান্ডে পোস্টার ঝুলিয়ে প্রচারণা চালালে ঢাকা শহর পরিবেশদূষণ ও জলাবদ্ধতার হাত হতে রক্ষা পাবে বলে মনে করছেন তারা।

ইসির প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- ১. প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা আচরণবিধিমালায় অনুযায়ী নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করবেন। ক্যাম্পে প্রার্থীরা পোস্টার, ব্যানার, ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করতে পারবেন। সিটি করপোরেশন আইনে অনুমোদিত ডেসিবেল মাত্রায় মাইক ব্যবহার করতে পারবেন। ২. নির্বাচন কমিশন আসনের ২১টি জায়গা নির্ধারণ করেছে। সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সেখানে নিজ নিজ স্ট্যান্ড স্থাপন করে পোস্টার ঝোলাতে পারবেন। একেকটি জায়গায় পর্যায়ক্রমে সব প্রার্থী শব্দযন্ত্র ব্যবহার করে আচরণবিধিমালায় বর্ণিত সময়কালে প্রচারণা চালাতে পারবেন। ৩. প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা নির্ধারিত স্থানে শোভাযাত্রা, পদযাত্রা সীমিত রাখবেন। নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক প্রার্থীকে এ জন্য নির্দিষ্ট দিন, সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। ৪. নির্বাচন কমিশন জনসভার জন্য এক বা একাধিক জায়গা নির্দিষ্ট করে দেবে। নির্ধারিত স্থানে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিয়ে প্রার্থীরা পর্যায়ক্রমে সভার আয়োজন করতে পারবেন। ৫. কোনো তোরণ নির্মাণ করা যাবে না, ফুটপাথে কোনো নির্বাচনী কাজ করা যাবে না, রাস্তায় কোনো পথসভা করা যাবে না, নির্বাচনী পরিবেশ বিঘিœত হয় এমন সব কার্যক্রমে নিষেধজ্ঞা দেবে কমিশন।

এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচনের আচরণবিধি এ মুহূর্তে পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। বিধায় ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনের ক্ষেত্রে যারা প্রার্থী থাকবেন, তাদের সঙ্গে বৈঠক করব। সেই সভায় ভ্রাম্যমাণ মাইক ব্যবহারে এবং পোস্টারে যে পরিবেশের ক্ষতি হয়, এটা না করে অন্য কোনো উপায়ে নির্বাচনের প্রচার চালানো যায় কি না তা আলোচনা করা হবে। বিধিমালার মধ্যে থেকে একটা পাইলট প্রজেক্ট নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে ঢাকার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ঢাকা-১০ আসনের রিটার্নিং অফিসার জি এম সাহাতাব উদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-১০ আসনের প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা-সংক্রান্ত একটি মতবিনিময় সভা করা হবে। সভায় নির্বাচনী প্রচারণার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। নির্বাচনী প্রচারণার কারণে জনগণের, ভোটারদের, ঢাকাবাসীর যেন কোনো সমস্যা না হয়। পরিবেশদূষণ, শব্দদূষণ যেন না হয়, সে বিষয়কে সামনে রেখে প্রার্থীদের মতামত নেওয়া হবে। আমরা কিছু প্রস্তাবনা সামনে রাখব। সবাই সম্মত হলে নির্বাচনী প্রচারণা বিষয়ে প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।’

ইসির কার্যক্রপত্রে বলা হয়েছে, সদ্য সমাপ্ত ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে প্রচারের জন্য প্রার্থীরা প্লাস্টিক লেমিনেট পোস্টার, পলিথিন ব্যাগের মধ্যে পোস্টার, কাগজের পোস্টার দিয়ে ঢাকা শহরের অলিগলি রাস্তা ঢেকে ফেলেছিলেন। আদালত পোস্টারে প্লাস্টিক/পলিথিন ব্যবহারের ভয়াবহ প্রতিক্রিয়া বিবেচনা করে নির্বাচনে এর ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। পলিথিন বা লেমিনেট পোস্টার ব্যবহার করা যাবে না। আবার কাগজ ব্যবহার করে অলিতে-গলিতে পোস্টার ঝুলিয়ে আকাশ ছেয়ে ফেলা হয়; এর মাধ্যমেও পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে।

সর্বশেষ খবর