শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় অমর একুশ পালন

নিজস্ব ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

শ্রদ্ধা ভালোবাসায় অমর একুশ পালন

ফুলেল শ্রদ্ধায় শহীদদের স্মরণ করা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার গতকাল -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় পালিত হয়েছে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়া সূর্যসন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধায় মানুষের ঢল নেমেছিল শহীদ মিনারে। শিশু, তরুণ, বৃদ্ধ সবার হাতে ছিল ফুল, কণ্ঠে ছিল অমলিন ‘আমার ভায়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’  গানের সুর। শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে রওনা হন রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা আর বয়সের হাজারো মানুষ। একুশের প্রথম প্রহরে শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তাঁরা সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তাঁদের পরই শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। এরপর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া। বিরোধী দলের পক্ষে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ, চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গার নেতৃত্বে নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। একে একে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিক, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানরা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকদের নিয়ে শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় শহীদ মিনার। রাতের আঁধার ফুঁড়ে জনতার ঢল নামে ভাষার অধিকার রক্ষাকারী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের ভিড়। প্রভোস্টদের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করে জগন্নাথ হল, সূর্যসেন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কবি জসীমউদ্‌দীন হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, শহীদুল্লাহ হল, বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলসহ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের হলসমূহ। অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের মানুষ একে একে শহীদবেদিতে পুপস্তবক অর্পণ করে। শ্রদ্ধা জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগ, মহিলা লীগ, কেন্দ্রীয় ১৪ দল, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, ন্যাপ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টিসহ অন্যান্য সংগঠন। জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে ডাকসুর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। ভিপি নুরুল হক নূর পৃথকভাবে শ্রদ্ধা জানান। সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় ছাত্রলীগ। ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্রমৈত্রীর নেতা-কর্মীরা ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে শ্রদ্ধা জানায় জাতীয় প্রেস ক্লাব, মহাসচিব শাবান মাহমুদের নেতৃত্ব শ্রদ্ধা জানায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন। এ ছাড়া ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, স্লোগান ৭১, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, নির্বাচন কমিশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শহীদবেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।

কর্মসূচির অংশ হিসেবে শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি প্রভাতফেরি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শুরু হয়। প্রভাতফেরিসহ তারা আজিমপুর কবরস্থানে গিয়ে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতিহা পাঠ করেন। পরে প্রভাতফেরি করে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যান এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বাদ জুমা মসজিদুল জামিয়াসহ সব হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদে ভাষাশহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এ ছাড়া শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা করা হয় অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে। দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এদিকে দিবসটি ভাবগম্ভীর পরিবেশে যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে এবং শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে উদ্যাপনের জন্য সর্বস্তরের জনসাধারণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। শুধু দেশ নয়, মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে বিদেশ থেকেও এসেছিলেন ভাষাপ্রেমীরা। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন উপলক্ষে শহীদ মিনার এলাকায় নেওয়া হয় নিñিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি আর স্পেশাল ব্রাঞ্চের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি, আর্চওয়ে। হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষা করতেও দেখা যায় পুলিশকে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর