শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনাভাইরাস চীনের কারাগারেও

আমিরাতে বাংলাদেশি আক্রান্ত সিঙ্গাপুরে একজন সংকটাপন্ন

প্রতিদিন ডেস্ক

সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দেশটির স্বাস্থ্য  মন্ত্রণালয় বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত এক বাংলাদেশি সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছেন। করোনাভাইরাস চীনের কারাগারেও দেখা দিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শুক্রবার আমিরাতে নতুন করে দুজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন ৩৪ বছর বয়সী বাংলাদেশি। অপরজন ৩৯ বছর বয়সী ফিলিপাইনের নাগরিক। নতুন দুই রোগীসহ আমিরাতে মোট ১১ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হলো। তাদের মধ্যে তিনজন চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বাকি আটজনকে বিশেষ  চিকিৎসা ও পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের সর্বাত্মক সেবা দেওয়া হচ্ছে। তাদের ভাইরাসের পরিমাণ স্থিতিশীল অবস্থায় থাকায় ভয়ের কারণ  নেই। সিঙ্গাপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক বাংলাদেশির (বয়স ৩৯) অবস্থা ‘খুবই সংকটাপন্ন’ বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির বাংলাদেশ হাইকমিশন। হাইকমিশনকে উদ্ধৃত করে সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়া গতকাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। হাইকমিশন বলেছে, বৃহস্পতিবার ওই রোগীকে ১৪ দিনের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে। কোভিড১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার আগে তিনি শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, কিডনি সমস্যা ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন আরও জানায়, ওই রোগীর অবস্থা সম্পর্কে তার পরিবারকে জানানো হয়েছে। আর ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে সিঙ্গাপুরে এ পর্যন্ত ৪২ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলেন। সিঙ্গাপুরে এখনো পর্যন্ত পাঁচ বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি চারজনের অবস্থাও আশঙ্কজনক। তারা সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। পাঁচজনের চিকিৎসা ব্যয়ই বহন করছে সিঙ্গাপুর সরকার।

চীনের চার কারাগারে করোনা : চীনের চারটি কারাগারে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ৫ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুটি কারাগার দেশটির সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত প্রদেশ হুবেইতে, আর বাকি দুটি হুবেইয়ের বাইরে অবস্থিত। গতকাল সিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হুবেই প্রদেশের একটি নারী কারাগারে ২৩০ জন ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। অপরদিকে সায়াং হানজিন কারাগারে আক্রান্ত হয়েছেন ৪১ জন। সাংডং প্রদেশের রেনচেং কারাগারে ২০৭ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে সাতজনই ওই কারাগারের কর্মকর্তা এবং বাকিরা কারাগারের কয়েদি। ঝেজিয়াং প্রদেশের শিলিফেং কারাগারে প্রায় ৩৪ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ জন। এরা সবাই সেখানকার কয়েদি। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশটির মূল ভূখন্ডে ৮৮৯ জনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আগের দিন এ সংখ্যা ছিল ৩৯৪ জন। সব মিলিয়ে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৫ হাজার ৪৬৫ জনে। আর অন্তত ২৬টি দেশে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৬ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে।

প্রাণ গেল সেই চিকিৎসকের : প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সর্বশেষ শিকার হয়েছেন চীনা ২৯ বছর বয়সী চিকিৎসক পেং ইয়ানহুয়া। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় উহানের জিনইয়ানতান হাসপাতালে পেং ইয়ানহুয়া মারা যান। উহান স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, জিয়াংশিয়া জেলা ফার্স্ট পিপলস হাসপাতালের শ্বাস-প্রশ্বাস ও সংকটকালীন পরিচর্যা কেন্দ্রে কাজ করতেন এ চিকিৎসক। রোগীদের সরাসরি চিকিৎসা দেওয়ার সময় তিনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে এর আগে তরুণ চিকিৎসক পেংকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে বলা হয়েছিল, মহামারী করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে ব্যস্ত এ চিকিৎসক তার বিয়ে পর্যন্ত স্থগিত করে রাখেন।

ইউক্রেনে চীন ফেরতদের ওপর হামলা : করোনাভাইরাস আতঙ্কে ইউক্রেনের নোভি সানঝারি শহরে চীন থেকে আগতদের ওপর হামলা চালিয়েছে দেশটির সাধারণ নাগরিকরা। এ ঘটনায় পরে পুলিশি নিরাপত্তায় নিরাপদে হাসপাতালে পৌঁছেছেন যাত্রীরা। এ সম্পর্কে গতকালের বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের উহান থেকে বৃহস্পতিবার ৪৫ জন ইউক্রেনীয় ও ২৭ জন বিদেশি পর্যটক দেশটির শহর নোভি সানঝারিতে পৌঁছেন। এ সময় কয়েক ডজন নাগরিক করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে তাদের ওপর হামলা চালায়।’ তারা বিক্ষোভও করেছেন। আগতদের নোভি সাঝারি শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়ার সময় বাসে ইট-পাটকেলও ছুড়েন বিক্ষোভকারীরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। আন্দোলনকারীরা আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সতর্কতা : দক্ষিণ কোরিয়ায় ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পর দুই দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর দায়েগু ও চেয়ংদোকে ‘স্পেশাল কেয়ার জোন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, চীন ও জাপানে আটকা থাকা প্রমোদতরীর পর সবচেয়ে বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্তের দেশে পরিণত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। গতকাল নতুন ধরা পড়া ৫২ জন আক্রান্তের মধ্যে ৪১ জনই দায়েগুর বাসিন্দা। এদের মধ্যে ৩৯ জনই একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্য। বৃহস্পতিবার দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী চুং বলেছেন, আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন এমন মানুষদের তাৎক্ষণিকভাবে খুঁজে বের করতে হবে ও রোগীদের চিকিৎসা দিতে হবে। তিনি সতর্ক করেন যে, ভাইরাসটি এখন স্থানীয়ভাবে ছড়াচ্ছে।

 

বিমান খাতে ধস : করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে অন্যতম বিমান পরিচালনা খাত। এরই মধ্যে তাদের যাত্রী কমেছে প্রচুর। ফলে আয়ও কমেছে অনেকটা। এ ক্ষতির পরিমাণ ২৯ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ (আইএটিএ)। বৃহস্পতিবার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে আকাশপথে যাত্রী পরিবহন কমে গেছে অন্তত ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। আইএটিএর ধারণা ছিল, এ বছরও বিমানের যাত্রী চাহিদা বাড়বে। তবে বৃহস্পতিবার সেই বক্তব্য সংশোধন করে তারা জানিয়েছে, গত এক দশকের মধ্যে, অর্থাৎ ২০০৮-০৯ সালের অর্থনৈতিক সংকটের পর থেকে প্রথমবারের মতো এ বছর যাত্রী পরিবহন কমছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর